জামালপুর: পঞ্চায়েত ভোটের মুখে দিকে দিকে বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরেও এমনই এক অভিযোগ উঠেছিল। সিপিএম দম্পতি প্রার্থীর বাড়ির সামনে বোমাবাজির অভিযোগ। সেই নিয়ে তুমুল শোরগোল পড়ে গিয়েছিল জেলায়। ২৫ জুনের সেই বোমাবাজির ঘটনায়, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ তুলেছিল সিপিএম দম্পতি প্রার্থী। সিপিএমের তরফে জামালপুর থানায় লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছিল। সেই মতো তদন্তও শুরু করে পুলিশ। আর তদন্ত এগোতেই একেবারে উল্টো কাহিনী।
জামালপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর মোহনপুরে ১৪১ নম্বর বুথে সিপিএমের প্রার্থী হয়েছিলেন সুশান্ত মণ্ডল। তাঁর স্ত্রী দেবিকা দেবনাথও সিপিএমের প্রার্থী হয়েছিলেন ১৩৯ নম্বর বুথে। তদন্তে এগোতেই গোটা ঘটনার পর্দাফাঁস করল পুলিশ। জানা যাচ্ছে, সিপিএমের ওই দম্পতি প্রার্থী আগে থেকে পরিকল্পনা করে নিজেরাই ওই বোমাবাজি করিয়েছিলেন বাড়ির সামনে। উদ্দেশ্য ছিল, তৃণমূলকে বদনাম করা। আর এই বোমাবাজি করানো হয়েছিল, সিপিএমেরই এক সমর্থককে দিয়ে। পুলিশি তদন্তে এমনই সব চাঞ্চল্যকর ‘গেমপ্ল্যান’ ফাঁস হয়েছে।
পুলিশ তদন্তে নেমে প্রথমে ১৬ জুলাই রাম সরকার নামে এক ফুচকা বিক্রেতাকে গ্রেফতার করে। সেই রাম সরকারও একই গ্রামের বাসিন্দা। সিপিএম কর্মী হিসেবে পরিচিত। পুলিশের দাবি, রাম সরকার নিজেই জেরার মুখে গোটা পরিকল্পনার কথা ফাঁস করেছে। সে পুলিশকে জানিয়েছে, পূর্ব পরিকল্পনা মতো ২৪ জুন রাতে সিপিএম দম্পতির বাড়ির উঠোনে দু’টি বোমা ফেলে রাখা হয়েছিল। তারপর দম্পতি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর রাম সরকার তাঁদের বাড়িতে একটি বোমা ছুঁড়ে মেরেছিল। আর এই পুরোটাই হয়েছিল সিপিএম দম্পতির সঙ্গে প্ল্যানিং করেই।
এদিকে পুলিশ সব জেনে গিয়েছে, তা বুঝতে পেরেই এলাকা থেকে চম্পট দেয় ওই সিপিএম দম্পতি। ঘর-বাড়ি ছেড়ে পুরো বেপাত্তা। আর ধৃত ফুচকা বিক্রেতার থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই দম্পতির খোঁজখবর শুরু করে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত গত সোমবার সুশান্ত মণ্ডলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু তাঁর স্ত্রী দেবিকা এখনও বেপাত্তা।
তদন্তের মোড় এভাবে ঘুরে যেতেই নতুন করে শোরগোল পড়ে গিয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলে। সুর নরম হয়েছে বামেদেরও। সিপিএম নেতা সুকুমার মিত্র বলছেন, তাঁরা অভিযোগ জানিয়েছিলেন এবং দাবি করেছিলেন যাতে সঠিকভাবে তদন্ত হয়। এখন যদি ধৃত ব্যক্তিরা এই বোমাবাজির সঙ্গে যুক্ত থাকে, বা তাঁদের অন্যায় প্রমাণিত হয়, তাহলে দলও তাঁদের পাশে থাকবে না।
খোঁচা দিতে ছাড়ছে না তৃণমূল শিবিরও। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মেহমুদ খান সুর চড়িয়েছেন বামেদের বিরুদ্ধে। বলছেন, গ্রামের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করতেই সিপিএম এই ধরনের চক্রান্ত করছে।