পূর্ব বর্ধমান: পঞ্চায়েতের লোক এলে নিমগাছে বেঁধে মারার নিদান দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh)। রবিবার বর্ধমানে এক কর্মসূচিতে গিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের এ হেন মন্তব্য বিতর্ক তৈরি করেছে। একইসঙ্গে এদিন তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানদের পদত্যাগ প্রসঙ্গেও দিলীপ ঘোষকে বলতে শোনা যায়, “পঞ্চায়েতের লোকেরা এত লুঠ করেছে যে এখন পদত্যাগ করে পালাচ্ছেন। ওনারা জানেন পাবলিকের মার দুনিয়া পার।” এমনিতেই দিলীপ ঘোষের মন্তব্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিতর্কের জন্ম দেয়। যদিও দিলীপ ঘোষ সেসবে খুব একটা আমল কোনওদিনই দেন না। তবে তিনি যেহেতু রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের অন্যতম মুখ, তাঁর মন্তব্য নিচুস্তরের কর্মীদের অন্য পথে চলার প্ররোচনা দিতে পারে বলেই মনে করেন রাজনীতির কারবারিরা। রবিবার ‘মন কী বাত’ ও ‘সুশাসন দিবস’ উপলক্ষে বর্ধমান উত্তর বিধানসভার হীরাগাছি কুলারি গ্রামে গিয়েছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
সেখানেই প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে দিলীপ ঘোষ দলীয় কর্মীদের বার্তা দেন, “আবার পঞ্চায়েত ভোট আসছে। গতবারের ভোটে মারপিট করে, পুলিশ দিয়ে, গুন্ডা দিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি। এদিকে মনোনয়ন আমাদের দিতে না দিয়ে যারা জিতেছিল, পাঁচ বছর লুঠ করেছে। পাবলিকের মারের ভয়ে এখন পালাচ্ছে। ছাড়বেন না কাউকে। এই পঞ্চায়েতের লোকেদের নিমগাছে বেঁধে দেবেন। খেজুর গাছে বেঁধে দেবেন। কলার ধরে হিসাব চাইবেন। কারণ, তাঁরা যে টাকা চুরি করেছে তা আপনাদের টাকা। যে টাকা চুরি করে গাড়ি কিনছে, ঘুরছে সেটা আপনার টাকা। বউকে গয়না কিনে দিচ্ছে, ছেলেকে বাইরে পড়াচ্ছে, সব আপনার টাকা। পাই পয়সা বুঝে নেবেন পঞ্চায়েতের কাছ থেকে। ভোট আসছে। বাড়িতে এলে ধরবেন গলায় গামছা দিয়ে। সেদিন আসছে।”
দিলীপের সংযোজন, “বাংলায় আমরা সুশাসন চাই, উন্নয়ন চাই। কেন্দ্র সরকার হাজার কোটি টাকা পাঠাচ্ছে, তা লুঠ হয়ে যাচ্ছে। পঞ্চায়েতের লোকেরা এত লুঠ করেছে যে এখন পদত্যাগ করতে হচ্ছে। রাস্তা হয়নি, জল নেই, বিদ্যুৎ নেই, স্কুলে শিক্ষক নেই, থানায় পুলিশ নেই, হাসপাতালে ডাক্তার নেই, নেই নেই রাজত্ব।” বিজেপির সর্বভারতী সহ-সভাপতি কটাক্ষের সুরে বলেন, এই সরকারের যদি টাকা না থাকে তা হলে পার্থ-কেষ্টদের বাড়িতে এত টাকা কোথা থেকে এল?
এ প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “দিলীপবাবু তো এ ধরনের কথাবার্তাই বলেন। ২০২১-এর নির্বাচনে সারা পশ্চিমবাংলাকে অশান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন উনি, সকলেই তা দেখেছেন। কেটে দেব, মেরে দেব বলেছিলেন উনি। আমাদের দল কিছু না বললেও বাংলার মানুষ কিন্তু ভোটবাক্সে জবাব দিয়ে দিয়েছেন। আবার উনি শুরু করেছেন। পঞ্চায়েত ভোটেও যোগ্য জবাবই দেবেন বাংলার মানুষ। আসলে দিলীপবাবুদের দলে এখন প্রতিযোগিতা চলছে। দিলীপবাবুর নিজের দলেই কোনও গুরুত্ব পাচ্ছেন না। তৃণমূল থেকে যাওয়া শুভেন্দুবাবু ওনার জায়গা থেকে ওনাকে সরিয়ে দিয়েছে। এসব বলে দিলীপবাবু এখন প্রচারে থাকতে চাইছেন।”