Kanyashree: মাটির বাড়ি ভেঙেছিল আমফান, ‘চার বছরেও একটা ঘর দিল না’, চোখে জল ‘কন্যাশ্রী’র

Manatosh Podder | Edited By: সায়নী জোয়ারদার

Feb 28, 2023 | 7:14 AM

Burdwan: মহুয়াদের মাটির বাড়ি ছিল। চার বছর আগে আমফান ঝড়ে ভেঙে যায় মহুয়াদের মাটির বাড়ি। তখন থেকেই বাবা মায়ের সঙ্গে গাছের নীচে আশ্রয় নিয়েছে সে।

Kanyashree: মাটির বাড়ি ভেঙেছিল আমফান, চার বছরেও একটা ঘর দিল না, চোখে জল কন্যাশ্রীর
চোখে জল মহুয়ার। ডানদিকে ঘরের সামনে বসে মহুয়ার মা বাবা।

Follow Us

পূর্ব বর্ধমান: ২০২০ সালের মে মাস। সেই কবে ঘর ভেঙেছে আমফান (Amphan)। মাঝের এতগুলো বছরে তৈরি হল না নতুন ঘর। ত্রিপলের ঝুপড়িতে পড়াশোনা করে এবার উচ্চমাধ্যমিকে (HS Examination 2023) বসছে গলসির মহুয়া চৌধুরী। রাস্তার ধারে ঝুঁকে পড়েছে একটি শিশু গাছ। তার নিচে ত্রিপল টাঙানো। আর এটাই মহুয়াদের বাড়ি। এ বাড়ি থেকেই মাধ্যমিক দিয়েছে মেয়েটা। উচ্চ মাধ্যমিকও দেবে। রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী প্রকল্পে টাকা পেলেও, মহুয়াদের জোটেনি মাথার উপরে ছাদ। গলসির আটপাড়া গ্রামে এতদিন ধরে বাস। মহুয়ার বাবার অভিযোগ, সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি কেউ। প্রশাসনও মুখ ফিরিয়েই রেখেছে। ফলে কোভিডের কঠিন সময় থেকে শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সব লড়াই-ই এই ত্রিপলে ঘেরা আস্তানা থেকে চলে তাঁদের। আট-দশ ফুটের একটি ত্রিপল দিয়ে ঘেরা আস্তানা। এটাকেই এখন ঘর বলে মহুয়ারা। ভিতরে একটা চৌকি পাতা। সেখানেই খাওয়া, ঘুমনো। দিনভর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি। যদিও এ নিয়ে পঞ্চায়েত বা ব্লক প্রশাসনের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি। তা পেলেই যুক্ত করা হবে এই প্রতিবেদনে।

মহুয়াদের মাটির বাড়ি ছিল। চার বছর আগে আমফান ঝড়ে ভেঙে যায় মহুয়াদের মাটির বাড়ি। তখন থেকেই বাবা মায়ের সঙ্গে গাছের নীচে আশ্রয় নিয়েছে সে। ঘরের উত্তর দিকে কোণে খোলা আকাশের নীচে রান্না করেন মহুয়ার মা। বৃষ্টি নামলে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। আক্ষেপে নিজেদের জীবনটাকে গরু ছাগলের সঙ্গে তুলনা করলেন মহুয়া ও তার বাবা মা।

মা রেখা বেগম গৃহবধূ। বাবা মান্নান চৌধুরী দিনমজুর। সপ্তাহে দু’দিন কাজ হয় তো পাঁচদিন বন্ধ। ফলে অভাব নিত্যদিনের সঙ্গী। এই অবস্থায় বাড়ি আর সারাবেন কীভাবে? স্থানীয় লোয়া রামগোপালপুর পঞ্চায়েত ও গলসি-১-এর বিডিও অফিসে বার বার জানিয়েও কোন সুরাহা পাননি বলে জানান মহুয়ার বাবা, মা।

রেখা বেগম বলেন, “আমফান ঝড়ে মাটির বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। ততদিন ধরে এখানে আছি। বিডিওকে কাগজ দিয়ে এসেছি, দেখেনি। গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য তো দেখেই না। পঞ্চায়েতের প্রধানও এখন চোখ মেলে দেখে না। এভাবেই পাঁচ বছর হয়ে গেল আছি। গরু, ছাগলই আমরা। আর কিছু নেই। কষ্ট হয়, কাউকে বলতে পারি না। আমার মতো আর কারও যেন না হয়। ফাঁকা জায়গায় রান্না করি। এমনও হয় ঝড় বাদলে রান্নাই করা হয় না।”

স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, গ্রামবাসীর তো সামর্থ নেই বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার। তবে যাদের হাতে ক্ষমতা আছে, সেই পঞ্চায়েত বা প্রশাসনও মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। মহুয়ার বাবা মান্নান চৌধুরী বলেন, “কেউই পাশে এসে দাঁড়ায়নি। এভাবে আছি। দিস্তা দিস্তা কাগজ খরচ করে আবেদন করে আসি প্রশাসনের কাছে। কেউ কিছু দেখলই না।”

বাবা-মায়ের এমন অসহায়তা দেখে চোখের জল আটকাতে পারে না মহুয়া। তার কথায়, “ঝড়ে ঘর ভাঙার পর এভাবেই থাকছি। কষ্ট করে বাবা পড়ায়। এরপর আর কী করবে। বাবা কিছু রোজগার করে। আর স্কুল থেকে যে টাকা পাই সেই টাকা দিয়ে সংসার চলে।” আর কিছুদিনের মধ্যেই হয়ত পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে যাবে। আবার গণতন্ত্রের উৎসবের ধ্বজা উড়বে রাজ্যজুড়ে। তবে মহুয়ার মতো ‘কন্যাশ্রী’দের জীবন বোধহয় এভাবেই ‘শ্রী’হীন থেকে যাবে।

Next Article