কাঁথি: শান্তিকুঞ্জের অন্দরের ভাবগতি দেখে মনে হচ্ছে এবার বোধহয় শুভেন্দু অধিকারীর ঘরেও পদ্ম ফোটার সময় সমাগত। সৌমেন্দু অধিকারীকে কাঁথির পুর প্রশাসক পদ থেকে অপসারণের পর তাঁর বিজেপি যোগের সম্ভাবনা ক্রমেই জোরাল হচ্ছে। সৌমেন্দুর প্রতি দলের এমন ভূমিকায় ক্ষুব্ধ দিব্যেন্দুও। অন্যদিকে ১ জানুয়ারি তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবস। ইতিমধ্যেই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছে ২০২১-এর প্রথম দিন থেকেই বিধানসভা দখলের লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে দলের সকল স্তরের কর্মীকে। আর তার প্রথম ধাপ হিসাবে রাজ্যজুড়ে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে পালন করা হবে প্রতিষ্ঠা দিবস। প্রত্যেক জেলার সভাপতি থেকে পঞ্চায়েত স্তরের কর্মী একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই উদযাপনে শামিল হোক চায় দল। কিন্তু শোনা যাচ্ছে দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে থাকছেন না পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি শিশির অধিকারী। ‘পায়ের অবস্থা স্বাভাবিক নয়’ বলেই সরে থাকছেন তিনি। তবে শিশির ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, গত কয়েকদিনে দলের সঙ্গে তাঁর পরিবারের দূরত্ব ভালভাবে মেনে নিতে পারছেন না কাঁথির সাংসদ। শুভেন্দুর বিজেপিতে যাওয়া, সৌমেন্দুকে প্রশাসক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া, সব মিলিয়ে দলের প্রতি কিছু ‘হতাশ’, কিছুটা ‘বিরক্ত’ তিনি।
আরও পড়ুন: অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট, ‘অপসারণ’কে চ্যালেঞ্জ করে এবার আদালতের পথে সৌমেন্দু
শিশির-ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, দল ছাড়ার পর শুভেন্দুকে তৃণমূলের তরফে যেভাবে বিশ্বাসঘাতক বলে চিহ্নিত করা হয়েছে তাতে শিশিরবাবুও ব্যথিত। তিনি নাকি ঘনিষ্ঠ মহলে এ নিয়ে খানিক উষ্মাও প্রকাশ করেছেন। তিনি নাকি এমনটাও বলেছেন, দলের খারাপ সময়ে এই অধিকারীরাই জনবল বাড়িয়েছিল। তাঁরা যা পেয়েছেন, যোগ্যতার নিরিখেই পেয়েছেন। আজকাল খুব একটা বাড়ির বাইরে বের হন না শাসকদলের এই বর্ষীয়ান সাংসদ। পায়ে অস্ত্রোপচারের পর বিশ্রামকেই আষ্টেপৃষ্টে বেধে রেখেছেন নিজের সঙ্গে। শান্তিকুঞ্জেই শীতের প্রহর কাটছে তাঁর।
অধিকারী পরিবারের রাজনীতিতে একটা অদ্ভূত স্বতন্ত্রতা লক্ষ্য করা যায়। অন্তত এতদিন দেখা গিয়েছে। শিশির অধিকারী, তাঁর তিন ছেলে শুভেন্দু-দিব্যেন্দু-সৌমেন্দু রাজনীতির আঙিনায় প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু কেউই কারও রাজনীতির পরিসরে ঢোকেননি। শুভেন্দু পূর্ব মেদিনীপুরের বাইরে বেরিয়ে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করলেও দিব্যেন্দু বা সৌমেন্দুর রাজনীতিটা একেবারেই নিজেদের এলাকা কেন্দ্রিক। শিশিরবাবুও কলকাতার রাজনীতিতে খুব একটা ঢোকেননি। জেলা সামলেছেন। বাকি সময়টা দিল্লিতে।
আরও পড়ুন: টেটের বিজ্ঞপ্তি জারি, ৩১ জানুয়ারি পরীক্ষা
কিন্তু গত কয়েকদিনে অধিকারীরা বুঝিয়ে দিয়েছে, পরিবারের ঊর্ধ্বে কিছুই নয়। শিশির অধিকারী মুখে যতই বলুন ছেলে দল ছাড়লেও তিনি ছাড়বেন না। আজকাল কিন্তু দলীয় অনুষ্ঠানে যাওয়া একেবারেই কমিয়ে দিয়েছেন। সৌমেন্দুকে কাঁথির প্রশাসক পদ থেকে সরানো নিয়ে সরব হয়েছেন দিব্যেন্দু। শুভেন্দুও ভাইদের নিয়ে টুকটাক ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যও করছেন। রাজনৈতিক মহল বলছে, শুধু শারীরিক অসুস্থতাই নয়, মানসিকভাবেও কিছুটা বিপর্যস্ত শিশির অধিকারী। সোশ্যাল মিডিয়ায় গেরুয়া পোশাকে সৌমেন্দুর ছবি যেভাবে বিতর্ক তৈরি করছে, তাতে কিছুটা ব্যথিত শিশিরবাবু। আটমাস আগে মহাকাল মন্দিরে তোলা ছবি হঠাৎ করে ‘ভাইরাল’ হয়ে গেল, এটা ভেবে বিরক্ত হচ্ছেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান এই সাংসদ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পরিবার আর রাজনীতির ময়দান এক নয় ঠিকই। এখানে সকলের কক্ষপথ আলাদা। কিন্তু টানা পরিবার সম্পর্কে অভিযোগ শুনতে শুনতে কোথাও যেন পরিবারের কর্তা হিসাবে শিশির অধিকারীর মধ্যেও একটা বিরক্তি কাজ করছে। হাজার হোক তিনি পিতা, কোথাও হয়তো মনে হচ্ছে, তাঁর ছেলেদের লঘু পাপে গুরু দণ্ড দিচ্ছে তাঁরই দল। সেখান থেকেই হয়তো একটু নিভৃতে থাকছেন তিনি। তবে দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে না থাকার সম্ভাবনায় নয়া বিতর্ক দানা বেধেছে। শুভেন্দু যে বলেছেন, ঘরেও পদ্ম ফুটবে। দুইয়ে দুইয়ে চার করছেন অনেকেই।