খেজুরি: রাজনৈতিক সংঘর্ষের জেরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরির আলিপুর বাজার। তৃণমূল ও বিজেপির সংঘর্ষে শুরু হয় বোমাবাজি ও পাথর বৃষ্টি। বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাত থেকে তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের বাঁচাতে গিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু পুলিশকে লক্ষ্য করেও বোমা, ইট ছোড়া হয়েছিল। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতেই মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। শনিবার রাত থেকে অভিযান চালিয়ে সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। অভিযুক্তদের সকলেই এলাকায় বিজেপিকর্মী হিসাবে পরিচিত। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বোমাবাজি, পুলিশ কর্মীর উপর হামলা, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, পুলিশের গাড়ির ভাঙচুর, খুনের চেষ্টা সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
বিজেপির প্রতীকে জেতা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য উদয়শঙ্কর মাইতি পরে তৃণমূলে যোগদান করে খেজুরি ২ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হন। এরপর খেজুরির আলিপুর বাজারে তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় কর্মসূচি করতে যান সদ্য নির্বাচিত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি উদয়শঙ্কর মাইতি সহ তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। তখনই তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ উঠে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। তাঁদের উদ্ধার করতে গিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল তালপাটি উপকূল থানার পুলিশ বাহিনী। পুলিশ পৌঁছনোর পর পুলিশকর্মীদের লক্ষ্য করে বোমাবাজি ও পাথর বৃষ্টি শুরু হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে নামে তালপাটি উপকূল থানার সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় একাধিক পুলিশ বাহিনী। ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমাবাজি ও পাথর বৃষ্টি শুরু হয়। তৃণমূল নেতা সহ বেশ কয়েকজন কর্মী সমর্থককে উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও, পরিস্থিতি কার্যত অগ্নিগর্ভ হয়ে যায়। পুলিশ পিছু হাঁটতে বাধ্য হয়। আটকে পড়েন একাধিক পুলিশকর্মী। এরপর পুলিশ কর্মীদের গণধোলাই শুরু হয়। পরে দু’জন পুলিশ কর্মীদের উদ্ধার করে শিলাবেড়িয়া ব্লক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।অবস্থায় অবনতি হলে তাঁদের তমলুক জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে নামানো হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। শনিবার বিকেলে পরিদর্শনে আসেন পূর্ব মেদিনীপুরে পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এখনও পুলিশের রুটমার্চ অব্যাহত রয়েছে।
পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় তালপাটি উপকুল থানার পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলার রুজু করে তদন্ত শুরু করে। ধৃতেরা হলেন মদনমোহন মালি, দেবব্রত জানা, সঞ্জু বারিক, রাজেশ মণ্ডল, শিবনাথ বেরা, দুলাল জানা ও হরনাথ বেরা। প্রত্যেকের বাড়ি তালপার্টি উপকূল থানার বিস্তীর্ণ এলাকায়। রবিবার অভিযুক্তদের কাঁথি মহাকুমা আদালতে তোলা হয়েছিল।
তালপার্টি উপকূল থানার ওসি গৌরব মিত্র বলেন, “পুলিশ কর্মীর হামলার অভিযোগ রুজু করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত সাত অভিযুক্তকে পাকড়াও করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করা হয়েছে। পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
খেজুরি আলিপুরে সংঘর্ষে সাতজন গ্রেফতার নিয়ে তৃণমূল বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। বিজেপি এই গ্রেফতারি নিয়ে পুলিশকে কটাক্ষ করেছে। পাল্টা দিয়েছে তৃণমূলও।