নন্দীগ্রাম: পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী নিয়ে অশান্তির আঁচ এ বার নন্দীগ্রামে। দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে সরব হয়ে দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝোলালেন তৃণমূল কর্মীরা। যা ঘিরে আরও এক বার উত্তপ্ত হল নন্দীগ্রামের রাজনীতি। পরিস্থিতির সামাল দিতে বুধবার রাতেই নন্দীগ্রামে পৌঁছলেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ানকে নিয়েই যত গন্ডগোল। তাঁকে প্রার্থী করা নিয়েই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তৃণমূলেরই অন্দরে। জেলা পরিষদ আসনে সুফিয়ানের নাম সামনে আসতেই তৃণমূলের একাংশ ক্ষেপে লাল। রীতিমতো নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়াতে শুরু করে তৃণমূলের বিক্ষুদ্ধ গোষ্ঠী। মঙ্গলবার তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন কুণাল ঘোষ। কিন্তু তাতেও কাজ হল না। বুধবার নন্দীগ্রামে তৃণমূলের পার্টি অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিল বিক্ষুব্ধরা।
জানা গিয়েছে, নন্দীগ্রামে জেলা পরিষদ আসনে দলীয় স্তরে প্রার্থী করার কথা হয়েছিল দাউদপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সামসুল ইসলামকে। কিন্তু সামসুলকে প্রার্থী না করে সুফিয়ানকে জেলা পরিষদ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে। সেই রাগে সামসুল অনুগামীরা নন্দীগ্রাম বাজারের কাছে তৃণমূলের পার্টি অফিসে তালা লাগিয়ে দেয়। ইতিমধ্যে নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীদের একাংশ।
এই প্রসঙ্গে কুণাল ঘোষ বলেছেন, “দলীয় অফিসে তালা লাগানো অবাঞ্চিত ঘটনা। প্রার্থী হওয়ার দাবিদার অনেকে হলেও আসন প্রতি একজন প্রার্থী। সে কারণে প্রার্থী হতে না পারার হতাশা থেকে কেউ কেউ এমন ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেন। সব ঠিক হয়ে যাবে।” কিন্তু পরিস্থিতি যে সহজে স্বাভাবিক হবে না তা বোঝা গিয়েছে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর মজিবর রহমানের কথায়। তিনি বলেছেন, “দু’বছর আগে থেকে ভেবেছিলাম জেলা পরিষদের টিকিট সামসুল ইসলাম পাবে। জেলা পরিষদের টিকিট শেখ সুফিয়ানকে দিয়েছে দল। দলের যাঁকে ভাল লাগবে তাঁকে টিকিট দেবে। নবজোয়ারে সুফিয়ান পেয়েছে ৭টি ভোট। শামসুল ইসলাম পেয়েছে ৭১টি ভোট। সুফিয়ান কোথাও মিটিং মিছিলে যাওয়া আসা করে না৷ যদি সামসুল ইসলামকে টিকিট না দেয়, ১০টি অঞ্চলে তৃণমূলের হয়ে নমিনেশন করব না। দল যদি মনে করে সুফিয়ান দিয়ে জেলা পরিষদ বাঁচিয়ে নেবে তো নিক।”
তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দেখে উচ্ছ্বসিত বিজেপির নেতারা। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই দলটায় এমন ঘটনা ঘটবে তা সকলের জানা। তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই।” বিজেপি জেলা সহ-সভাপতি প্রলয় পাল বলেছেন, “তৃণমূলের তো কত জন টিকিট পেয়েছে আর কত জন মনোনয়ন করেছে তার ঠিক নেই। চুরির দায়িত্ব কার হাতে থাকবে তা নিয়েই ওদের মধ্যে ঝামেলা। এই জেলায় নবজোয়ার নয়, নবজালিয়াত হয়েছে।”