পূর্ব মেদিনীপুর: মাছের উৎপাদন বাড়াতে খাঁচায় মাছ চাষে আপত্তি মৎস্যজীবী ফোরামের। রামনগর ১ ব্লকের চাঁদপুরে সমুদ্রে খাঁচার মধ্যে মাছ চাষে আপত্তি জানিয়ে মৎস্য দফতরে স্মারকলিপি জমা দিল মৎস্যজীবী ফোরাম।
এই সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দেবাশীস শ্যামলের বক্তব্য, ‘অগভীর সমুদ্রে খাঁচায় মাছ চাষ হলে তাতে খাবার দেওয়া হবে। এতে সমুদ্রে দূষণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া বেসরকারি সংস্থা সমুদ্রের দখল নিলে ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীদের জীবনজীবিকা সঙ্কটে পড়বে। সে কারণে সমুদ্রে খাঁচায় মাছ চাষের পরিকল্পনা বাতিলের দাবি জানিয়েছি আমরা’
বেশ কয়েক বছর আগে রাজ্য মৎস্য দফতরের সাহায্য নিয়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যানিমেল অ্যান্ড ফিশারি সায়েন্স ইউনিভার্সিটি পরীক্ষামূলকভাবে সমুদ্রে খাঁচা ফেলে ভেটকি মাছ চাষে সফলতা পায়। সেই কারণে এবার বাণিজ্যিকভাবে খাঁচা পেতে মাছ চাষে উদ্যোগী হয়েছিল মৎস্য দফতর। ইতিমধ্যেই তাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল একটি বেসরকারি সংস্থা।
সূত্রের খবর, চাঁদপুর সমুদ্রের সৈকত থেকে দেড় কিলোমিটার গভীর সমুদ্রে খাঁচায় মাছ চাষে উদ্যোগ নেয় তাঁরা। তবে অনুমতি দেওয়ার আগেই স্থানীয় মৎস্যজীবীদের জীবন-জীবিকার উপর এই প্রকল্পের কোনও প্রভাব পড়বে কি না তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করে মৎস্য দফতর।
এর প্রেক্ষিতেই স্মারকলিপি জমা করেন পূর্ব মেদিনীপুর মৎস্যজীবী ফোরাম। কাঁথি সহ মৎস্য অধিকর্তা ( সামুদ্রিক) জয়ন্ত প্রধান বলেন, ‘সমুদ্রে খাঁচার মধ্যে মাছ চাষ শুরুর আগে স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। তাঁদের সুবিধা, সমস্যা এবং আপত্তির বিষয়ে রিপোর্ট তৈরি করে দফতরে পাঠানো হবে। যা দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য মৎস্য দফতর।’
জানা গিয়েছে, সমুদ্রের যেখানে ২৬ ফুট জলের গভীরতা সেখানেই ফেলা হবে ফাইবারের কোটিং যুক্ত লোহার খাঁচা। তা ভাসিয়ে রাখার জন্য ভাসমান ড্রাম বা বয়া ব্যবহার করা হবে। আটকানো থাকবে নোঙর দিয়ে। ভাসমান খাঁচা থেকে ১২ ফুট লম্বা জাল ফেলা হবে। আর জালকে জলে ডুবিয়ে রাখতে নিচে দেওয়া হবে লোহার ভারী বল। এরপর ওই জালের মধ্যে ছাড়া হবে ছোট ভেটকি মাছের পোনা।
পাশাপাশি পমফ্রেট মাছের মতো দেখতে পমপেনো-সহ আরও বেশ কয়েকটি প্রজাতির মাছও চাষ করা হবে। ফিসারিতেও চাষ হয়ে থাকে এই সমস্ত মাছ। রাজ্যের বাঁকুড়া ও পূর্ব বর্ধমানে জলাশয়ে খাঁচার মধ্যে রুই কাতলা মাছ চাষে সাফল্য মিলেছে।
কোথাও কোথাও খাঁচায় কাঁকড়ার চাষও হচ্ছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে সমুদ্রে খাঁচার মধ্যে মাছ চাষ শুরু হয়নি। সমুদ্রে খাঁচায় মাছের উৎপাদন বাড়বে বলে সহ মৎস্য অধিকর্তার। বলেছেন, ‘খাঁচার মতো নির্দিষ্ট জায়গায় মাছের চাষ করা হলে সঠিক পরিচর্যায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এক্ষেত্রে মাছের সঠিক হিসেবও থাকবে।’
সব মিলিয়ে রাজ্য মৎস্য দফতরের পরীক্ষা মূলক খাঁচা পদ্ধতি আগামী দিনে কর্মসস্থানের নতুন দিশা দেখাবে বলেই আশা করছেন সকলে।