মহিষাদল: আবারও ‘খাপ পঞ্চায়েতের’ ছায়া জেলার মহিষাদলে (Mahishadal)। জগৎপুর কুইল্যা রবীন্দ্রপল্লী সমবায় সমিতির সভাপতি, সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের নামাঙ্কিত ফতোয়া পোস্টার ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে এলাকায়। সূত্রের খবর, এলাকার বাসিন্দা ছবিলাল দাসের পরিবারকে আমন্ত্রণ জানানোর অভিযোগে এলাকার বাসিন্দা সনাতন দাসের বাড়ির অন্নমহোৎসবের অনুষ্ঠান বয়কটের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওই পোস্টারে। সূত্রের খবর, বর্তমানে এলাকায় কার্যত একঘরে হয়ে রয়েছেন ছবিলাল দাসের পরিবার।
এদিকে পোস্টার নজরে আসার পর একপ্রকার বাধ্য হয়ে ছবিলাল দাসের বাড়িতে গিয়ে আমন্ত্রণ ফিরিয়ে নেন সনাতন দাস। সূত্রের খবর, বছর তিনেক আগে এক মহিলাকে বিয়ে করেন ছবিলালের ছেলে। পল্লী কমিটির অভিযোগ, ওই মহিলার অন্যত্র বিয়ে হয়েছিল। তাঁকে তুলে নিয়ে এসে ফের বিয়ে করে ছবিলালের ছেলে। যা মেনে নিতে পারেনি পল্লী কমিটি। সে কারণে কমিটি থেকে ছবিলালকে বাদ দেওয়ার পাশাপাশি তাঁর পরিবারকে একঘরে করে রাখে কমিটি। জানা গিয়েছে, সোমবার স্থানীয় বাসিন্দা সনাতন দাসের বাড়িতে ছিল মদনচাঁদ জিউর ভোগ প্রসাদ বিতরণের অনুষ্ঠান। সে জন্য রবিবার পাড়ার অন্যান্য বাসিন্দাদের পাশাপাশি ছবিলালের পরিবারকেও আমন্ত্রণ জানিয়ে আসেন সনাতন দাসের বাড়ির লোকজন। অভিযোগ, তারপরই রাতারাতি এলাকার বিভিন্ন জায়গায় সাঁটিয়ে দেওয়া হয় জগৎপুর কুইল্যা রবীন্দ্রপল্লী সমবায় সমিতির ফতোয়া পোস্টার। বিষয়টি নজরে এলে শোরগোল পড়ে যায় এলাকাবাসীদের মধ্যে। সূত্রের খবর, এলাকার দীর্ঘদিন থেকে তৃণমূল করতেন ছবিলাল দাসের ছেলে প্রণয় দাস। ওই মহিলাকে বিয়ে করার পরেই তাঁকে দল থেকে সাসপেন্ডও করা হয়।
সূত্রের খবর, ফতোয়া পোস্টারে লেখা ছিল, “এতদ্বারা সমস্ত পল্লীবাসীগণকে বিশেষভাবে জানানো হইতেছে যে আগামীকাল অর্থাৎ ইং ২৬/১২/২০২২ তারিখ সোমবার পল্লীবাসী শ্রী সনাতন দাসের বাড়িতে মদনচাঁদ জিউর ভোগ প্রসাদ আমন্ত্রণে কোনওভাবেই যাওয়া যাবে না। কারণ, ছবিলাল দাসকে আমাদের পাড়া থেকে বাদ দেওয়া সত্বেও সনাতন দাসের বাড়ির লোকজন ছবিলাল দাসকে ভোগ প্রসাদ খাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমাদের অসম্মান করা হয়েছে। আমাদের এড়িয়ে যে বা যাঁরা সনাতন দাসের বাড়ির ভোগ প্রসাদ গ্রহণ করতে যাবে তাঁদের কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি ভোগ করতে হবে।”
এমনকী পল্লী কমিটির ফতোয়া না মানলে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা পর্যন্ত করা হবে বলে লেখা ওই পোস্টারে। এমনকী যে বা যাঁরা ছবিলাল দাসের পরিবারের সঙ্গে মেলামেশা করবে প্রয়োজনে তাঁদেরকেও একঘরে করে রাখা হবে বলে জানানো হয়। বিষয়টি নজরে আসার পর রবিবার রাতে গিয়েই ছবিলালের বাড়িতে গিয়ে আমন্ত্রণ ফিরিয়ে নেন সনাতন দাস। তবে এ বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। মন্তব্য করতে চাননি পল্লী কমিটির মাথারাও। এ ব্যাপারে থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ জমা না পড়লেও স্থানীয়স্তরে বোঝাপড়ার মাধ্যমে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহিষাদল থানার ওসি প্রলয়কুমার চন্দ্র।
ঘটনা প্রসঙ্গে ছবিলাল দাসের ছেলে প্রণয় দাস বলেন, “আমাদের এলাকার কিছু মাতব্বর কিছুদিন ধরেই এসব কাজ করে আসছে। ওরা নতুন দায়িত্ব পেয়েছে। আমি আগে এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেস করতাম। কিন্তু, সম্প্রতি দল ছেড়ে দিয়েছি। ওই মেয়েকে বিয়ে করার পর দল আমাকে সাসপেন্ড করে। আমার বাবাও আমাকে শাস্তি দিয়েছে। ২০১৯ সালে বিয়ে করার পর আমি বাড়ির বাইরে থেকেছি। বাবার তৈরি বাড়িতেও আমি থাকতে পারিনি। না। আর এখন এ ঘটনা ঘটল।”