খেজুরি: ফের উত্তপ্ত পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরি। রাজনৈতিক সংঘর্ষের জেরে উত্তপ্ত খেজুরির নিজকসবা গ্রাম পঞ্চায়েতের আলিপুর বাজার। তৃণমূল-বিজেপি-র গণ্ডগোলের জেরে সংঘর্ষ বাধে এলাকায়। শুরু হয় বোমাবাজি ও পাথর ছোড়াছুড়ি। ঘটনায় ধৃত সাতজন বিজেপি কর্মী।
জানা গিয়েছে, বিজেপির প্রতীকে জেতা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য উদয়শঙ্কর মাইতি পরে যোগদান করেন তৃণমূলে। এরপর খেজুরি ২ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হন তিনি। এ দিন খেজুরির আলিপুর বাজারে তৃণমূলের দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে যান উদয়শঙ্কর। অভিযোগ, সেই সময় সভাপতি সহ তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ উঠে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় তালপাটি উপকূল থানার পুলিশ বাহিনী। কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় খেজুরির আলিপুর বাজার।
অভিযোগ, পুলিশ কর্মীদের লক্ষ্য করে বোমাবাজি ও পাথর বৃষ্টি শুরু হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে নামে তালপাটি উপকূল থানার সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় একাধিক পুলিশ বাহিনী। ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমাবাজি ও পাথর বৃষ্টি শুরু হয় বলে খবর। ঘটনায় তৃণমূল নেতা সহ বেশ কয়েকজন কর্মী সমর্থককে উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও, পরিস্থিতি কার্যত অগ্নিগর্ভ হয়ে যায়।
অভিযোগ, কয়েকশো বিজেপি কর্মী বোমাবাজি ও পাথর বৃষ্টি করতে করতে এগিয়ে আসে। সেই সময়ে পুলিশ পিছু হাঁটতে বাধ্য হয়। আটকে পড়েন একাধিক পুলিশ কর্মী। অভিযোগ তাঁদের মারধর করা হয়। আহত অবস্থায় দু’জন পুলিশ কর্মীকে উদ্ধার করে শিলাবেড়িয়া ব্লক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থায় অবনতি হলে তমলুক জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে নামানো হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। শনিবার বিকেলে পরিদর্শণে আসেন পূর্ব মেদিনীপুরে পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য।
পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় তালপাটি উপকুল থানার পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলার রুজু করে তদন্ত শুরু করে। শনিবার রাতভর অভিযান চালিয়ে পুলিশ খেজুরি বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে সাত জনকে গ্রেফতার করে। অভিযুক্তরা হল মদনমোহন মালি,দেবব্রত জানা, সঞ্জু বারিক, রাজেশ মণ্ডল, শিবনাথ বেরা, দুলাল জানা ও হরনাথ বেরা। প্রত্যেকের বাড়ি তালপার্টি উপকূল থানার বিস্তীর্ণ এলাকায়। রবিবার অভিযুক্তদের কাঁথি মহাকুমা আদালতে তোলা হয়। বিচারক ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন ।
এরা প্রত্যেককে বিজেপি কর্মী সমর্থক হিসেবে পরিচিত। রবিবার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ বোমাবাজি,পুলিশ কর্মীর উপর হামলা,সরকারি সম্পত্তি নষ্ট,পুলিশের গাড়ির ভাঙচুর, খুনের চেষ্টা সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে।
জেলা পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “পুলিশ কর্মীর হামলার অভিযোগ রুজু করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত সাত অভিযুক্ত ধরা পড়েছে।”
এই ঘটনায় ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। কাঁথি সাংগঠনিক জেলা বিজেপি নেতা অসীম মিশ্র বলেন, “পুলিশের নির্দেশ লোকদের গ্রেফতার করেছে। রাতের অন্ধকারে খেজুরিতে পুলিশ তাণ্ডব চালাচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ও পুলিশ সন্ত্রাস করছে।”
পাল্টা জবাব দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস। কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি তরুণ মাইতি বলেন, “খেজুরি সিপিএমের হার্মাদগুলো এখন বিজেপির ঝান্ডা ধরে এলাকায় তাণ্ডব চালাচ্ছে। পুলিশের উপরও হামলা চালাতে ছাড়ছে না। আইন আইনের পথে চলবে। আমরা পুলিশকে অনুরোধ করছি রঙ না দেখে ব্যাবস্থা নিন।”
অপরদিকে খেজুরির সন্ত্রাস এর পেছনে শাসক তৃণমূল,বিজেপি ও পুলিশি মদত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বাম নেতা ঝাড়েস্বর বেরা।