পূর্ব মেদিনীপুর: চাকরির দাবিতে মেয়ে ১ হাজার দিন ধরে কলকাতার রাজপথে বসে। টিভির পর্দায় পরিবার দেখেছে, মেয়েটা রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাউ হাউ করে কাঁদে। দেখেছে, মেয়েটা কেমন প্রতিবাদে সরব হয়ে মাথার এক রাশ চুল অনায়াসে কেটে ন্যাড়া হয়ে গেল। এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থী রাসমণি পাত্রের পরিবার মেয়ের কথা উঠতেই ভেঙে পড়ল কান্নায়। যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি নিয়ে আন্দোলনের অন্যতম মুখ রাসমণি যে এতটা প্রতিবাদী হবে, পরিবারও তা বুঝতে পারেনি। হক বুঝে নিতে একবগ্গা মেয়ে। কোলাঘাট ব্লকের কোদালিয়া গ্রামে বসে রাসমণির ঠাকুমা, বাবা শোনালেন মেয়ের ইচ্ছাশক্তির কথা।
কোদালিয়ার পাত্র পরিবারে জন্ম রাসমণির। কৃষক পরিবারের মেয়ে রাসমণি। বাবা পরিমল পাত্র (৬৩), মা জয়ন্তী পাত্র (৫৮)। রাসমণির বিয়ে হয়ে গিয়েছে, ছোট্ট বাচ্চা আছে ঘরে। তবে মায়ের শরীর ভাল না থাকায় আপাতত বাপের বাড়িতেই থাকছেন তিনি। পরিমলবাবু ছোট থেকে বহু কষ্টে এক ছেলে এক মেয়েকে বড় করেছেন। ছেলে সেনাবাহিনীতে আছেন।
মেয়েকে নিয়ে প্রশ্ন করতেই গলা বুজে এল পরিমল পাত্রের। বলেন, “আমি একজন প্রান্তিক চাষি। চাষবাস করে দিন কাটে। মেয়েও আমার সঙ্গে মাঠেঘাটে কাজ করে। খুব কষ্ট করে লেখাপড়া শিখিয়েছি। দিনের পর দিন পড়াশোনা করে, রাত জেগে পড়ে পাশ করে চাকরির জন্য রাস্তায় বসে আছে। একরত্তি বাচ্চাটাকে ফেলে মেয়েটা রাস্তায় বসে আছে দিনের পর দিন। মেয়েটাই আমার অসুস্থ হয়ে গেল। আর পারছে না তো ওরা। সরকার একটু দেখুক এবার।”
মেয়ের এই লড়াই দেখে বাবা যদিও বা নিজেকে কিছুটা সামলাতে পারছেন, ঠাকুমা তিলোত্তমা পাত্র তো কেঁদেই চলেছেন। তিলোত্তমাদেবী বলেন, “ভগবান একটু আশীর্বাদ করুন। বাচ্চাটাকে ফেলে ওখানে পড়ে আছে। এমন নির্যাতন কেউ করে? নাতনিটার মুখের দিকে তাকাতে পারি না।”
ভোগপুর কেনারাম মেমোরিয়াম হাইস্কুল থেকে পাশ করে পাশকুড়া বনমালী কলেজ থেকে স্নাতক হন রাসমণি। এরপর ডায়মন্ড হারবারের ফকিরচাঁদ কলেজ থেকে এমএ পাশ করেছেন। শ্বশুরবাড়ির লোকেরাও খুবই সাহস জোগায়। বাপের বাড়ি তো পাশে আছেই। আজ শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে রাসমণিদের। আবারও বৈঠক হবে ২২ তারিখ। তবে রাসমণিদের লড়াইয়ের সঙ্গে সমানভাবে এই চাকরিপ্রার্থীদের পরিবারগুলোও যে ভিতরে ভিতরে কী ভীষণ লড়াই লড়ছে, তিলোত্তমাদেবীদের দেখলে তা বোঝা যায়।