পূর্ব মেদিনীপুর: সোনা, রূপা, হিরের গয়না নয়। তৈরি হয় ডাল দিয়ে। তবু মহিষাদলের ‘গয়না বড়ি’ই জেলার অহঙ্কার। শীত পড়তেই বাড়ির মেয়ে-বউ-দিদিমারা শুরু করেছেন বড়ি দেওয়া। পাইকারি খুচরো বিক্রি তো আছেই, বিভিন্ন মেলাতেও স্টলে স্টলে এই গয়না বড়ির দারুণ চাহিদা। বিউলির ডালকে জলে ভিজিয়ে তারপর তা বাটা হয়। এরপর চলে ফেটানোর কাজ। ফেটানো যত মিহি হবে, তত সুন্দর হবে ‘গয়না’। সাদা পরিষ্কার কাপড়ে ওই ফেটানো ডাল ভরে পুঁটুলি বানিয়ে বড়ি দেওয়া হয়। থালা কিংবা বড় প্লেট জাতীয় পাত্রে পোস্ত বা তিলের উপর চলে এই হস্তশিল্প। তমলুক, মহিষাদলে এখন ঘরে ঘরে চলছে বড়ি দেওয়ার কাজ।
যিনি বড়ি দিচ্ছেন, তাঁর হাতের নৈপুণ্যে কোনটা কানের দুল, কোনওটা গলার হার, বাজুবন্ধ কিংবা কানপাশা হয়ে ওঠে। তবে নাম গয়না বড়ি হলেও, শুধু গয়নার ডিজাইনই নয়, মাছ, ফুল, প্রজাপতি সবই গয়না বড়ির নকশা হতে পারে। শীতের মিঠেকড়া রোদ এ বড়ি শুকানোর জন্য আদর্শ।
এই গয়না বড়ির আদর নাকি ঠাকুরবাড়িতেও ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গয়না বড়ির নকশার প্রতি এতটাই আকৃষ্ট হন যে বলেছিলেন, এ বড়ি দেখার জন্য, খাওয়ার জন্য নয়। নন্দলাল বসুর কাছে এই গয়না বড়ি ছিল বাংলা মায়ের গয়নার বাক্সের একটি রত্ন। এখন যেমন বিভিন্ন মেলায় গয়না বড়ি পাওয়া যায়, ১৯৫৪ সালে নাকি জাতীয় কংগ্রেসের এক অধিবেশনে গয়না বড়ির প্রদর্শন হয়েছিল। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক, কাঁথি, মহিষাদলের পাশাপাশি পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালেও এই বড়ি তৈরি হয়। রূপে স্বাদে এই গয়না হার মানাবে যে কোনও ধাতব অলঙ্কারকে।