কলকাতা: নন্দীগ্রাম দিবসের এক কর্মসূচিতে চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন সেখানকার বিধায়ক তথা রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। তাঁর দাবি, তৃণমূলের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী সংগঠন ছিল সিপিএমের (CPIM)। বামপন্থীরা সকলে খারাপ নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সঙ্গে আরও একধাপ এগিয়ে শুভেন্দুর দাবি, “আমাদের সঙ্গে প্রচুর বামপন্থী এসেছেন। নন্দীগ্রামে বামপন্থীদের একটি বড় অংশ, যাঁরা হিন্দু, আমাকে ভোট দিয়েছিলেন বলে আমি জিতেছি। আমি অকপটে স্বীকার করি।” বিরোধী দলনেতার এই মন্তব্যে বেজায় চটেছে বাম শিবির। কড়া সমালোচনায় বিদ্ধ করেছে বাম নেতৃত্ব।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে হাই প্রোফাইল নন্দীগ্রামে শাসক দলের প্রার্থী হয়েছিলেন স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির পদ্ম প্রতীকে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন তৃণমূল থেকেই আসা শুভেন্দু অধিকারী। আর বামেরা এই লড়াইয়ে সামনে এগিয়ে দিয়েছিল তরুণ মুখ মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে। দাঁতে দাঁত কামড়ে দুই হাই প্রোফাইল রাজনীতিকের মাঝে নির্বাচনী ময়দান আঁকড়ে রেখেছিলেন মীনাক্ষী। নন্দীগ্রামের ভোট নিয়ে শুভেন্দুর এই বিস্ফোরক দাবির পর টিভি নাইন বাংলার তরফে ফোনে যোগাযোগ করা হয়েছিল মীনাক্ষীর সঙ্গে। তিনি শুভেন্দুকে পাল্টা দিয়ে বলেন, “ওনার কথার তো স্থায়িত্ব থাকছে না। উনি এতদিন বলছিলেন নন্দীগ্রামে, পূর্ব মেদিনীপুরে লাল ঝান্ডার লোক নেই। লাল ঝান্ডার লোক নেই তো লাল ঝান্ডার লোক আবার কীসের? এই ধরনের কথা রাজনীতিতে কাম্য নয়।”
সঙ্গে মীনাক্ষীর আরও সংযোজন, “ভোট কারও পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। উনি কী করে বুঝলেন, বামপন্থীরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছে? একমাত্র তারাই বুঝতে পারে যারা ইভিএম-এর সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। আমরা বলেছিলাম, নন্দীগ্রামে পোলিং এজেন্ট বসিয়েও আসলে রিগিং হয়েছে। উনি সেটাকেই মান্যতা দিয়ে দিলেন। উনি যে রাজনীতি করেন, এটি তার বহিঃপ্রকাশ।”
কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, “তৃণমূল ও বিজেপি উভয়েই প্রতিযোগিতায় নেমেছিল লাল ঝান্ডা নেই, তা প্রমাণ করার জন্য। তারা দুই পক্ষেই এখন লেগে পড়েছে বামপন্থীদের সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য। তৃণমূল বা বিজেপির সার্টিফিকেট নিয়ে বামপন্থীরা চলে না। ওদের হাল এমন হয়েছে, নিজেরাই বাঁচার জন্য, একে অন্যের বিরোধিতা করতে গিয়ে বামেদের ভাল বলছে। মানুষের কাছে উভয়েই ধরা পড়ে গিয়েছে। বামপন্থাকে দুর্বল করার হিম্মত তৃণমূল বা বিজেপি কারও নেই। নিজেরা দুর্বল হচ্ছে, তাই বামপন্থার কথা মুখে এনে নিজেদের শক্তি কৃত্রিমভাবে বাড়ানোর চেষ্টা করছে।”
বাম-হিন্দু ভোটের যে তত্ত্ব শুভেন্দু তুলেছেন, সেই নিয়েও বিরোধী দলনেতাকে একহাত নেন সুজন। বলেন, “বিজেপি বলে তৃণমূলকে সাহায্য করছে সিপিএম। তৃণমূল বলে বিজেপিকে সাহায্য করছে সিপিএম। এখন আবার নতুন অ্যাঙ্গেল এসেছে, নন্দীগ্রামে বাম-হিন্দু ভোটে বিজেপি জিতেছে। বামেদের ভোট হিন্দু-মুসলিম বিচারে হয় না। ওটা তৃণমূল, বিজেপির হয়।”