পূর্ব মেদিনীপুর: বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার তেখালির জনসভা থেকে এমনই মাস্টার স্ট্রোক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়ে দিলেন, এই ‘ লাকি জায়গা’ থেকেই তাঁর এবং তাঁর দলের নির্বাচনের লড়াই শুরু হল। একইসঙ্গে মমতার ঘোষণা, এই নন্দীগ্রাম থেকেই নতুন জন্ম হল তৃণমূলের। ২০১১ সালের আগে যে নন্দীগ্রামকে সামনে রেখে বাংলায় পালাবদলের হাওয়া বইয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো, আরও একবার ২০২১-এর ভোটের আগে সেই নন্দীগ্রামই হয়ে উঠতে চলেছে বাংলার রাজনীতির মোড় ঘোরানোর পট।
আন্দোলনকে কেউ কখনও ভোলে না। আমি নন্দীগ্রামকে ভালবাসি। আমি যদি নন্দীগ্রামে দাঁড়াই কেমন হয়। আমি নন্দীগ্রাম থেকে লড়ব। সুব্রত বক্সিকে বলব আমার নাম রাখতে। নন্দীগ্রাম থেকে নতুন করে জন্ম হল তৃণমূলের।
ভবানীপুর আমার বড় বোন, নন্দীগ্রাম আমার মেজ বোন। ভবানীপুরকে আমি অবহেলা করছি না, ওখানেও আমি দাঁড়াব ম্যানেজ করতে পারলে। তবে নন্দীগ্রামে আমি দাঁড়াবই আপনাদের বলে গেলাম। আমার বিবেক বলল এটা তোর লাকি জায়গা, এখান থেকেই তোর প্রথম প্রার্থীর নাম ঘোষণা কর। ভুল করলে গালে একটা থাপ্পড় মেরো, মুখটা ফিরিয়ে নিও না মা গো। তোমাদের পাহারাদার হয়েই থাকব। শুধু ভালবেসো: মমতা
এই তেখালি বহু ঘটনার সাক্ষী। আমার গাড়িতে ২-৩টে বুলেট এসে লাগল। অনেকে বড় বড় কথা বলে। আমাকে পেট্রোল বোমা দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। তৎকালীন রাজ্যপাল বলেছিলেন, আপনাকে মারার জন্য প্রস্তুতি হচ্ছে। আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমি মানুষের সঙ্গে। কর্মতীর্থ হয়েছে। কলেজ হয়েছে। হলদি নদীকে ঘিরে মানুষের অনেক আশা। যাতায়াতের ব্রিজ করে দেব। রাস্তাঘাট করে দেব। কৃষকদের বিল প্রত্যাহার করতে হবে। নয়ত আন্দোলন হবে। ১৪ মার্চ কৃষকদের কৃষক রত্ন দিই আমরা। কৃষকদের ভোলা যায় না। অনেকে অনেক কথা বলে। কিন্তু নন্দীগ্রামের উৎস সিঙ্গুর। : মমতা
আমি বেশি সময় দিতে পারব না। কারণ ২৯৪ টি কেন্দ্রে আমায় লড়তে হবে। ২১-এর নির্বাচনে দেখা হবে তো! সবাই ভিক্ট্রি চিহ্ন দেখান। সকলে ভাল থাকবেন: মমতা
রাজনীতিতে তিন রকম লোক হয়, লোভী ভোগী ত্যাগী। যারা ত্যাগ করতে জানে তারা প্রতিবাদ করবেই। এক ইঞ্চি মায়ের কোল, আম্মার কোল ছাড়বে না। একদল আছে যাদের অনেক সম্পত্তি, প্রচুর টাকা। সেই টাকা রক্ষা করতে জায়গা চাই। বিজেপি নেতারা দিল্লি থেকে বলছে হয় ঘরে নয় জেলে, তাই বিজেপি-ওয়াশিং মেশিনে ঢুকছে। কালো বেরোচ্ছে সাদা হয়ে: মমতা
পুলওয়ামার গেমপ্ল্যান বেরিয়ে গিয়েছে। সব ভিডিয়ো বিশ্বাস করবেন না। সব ফেক। ভোটের আগে সব তৈরি: মমতা
কেউ কেউ ইধার উধার করছে। চিন্তা করবেন না। ওরা কালো টাকা রুখতে এদিক ওদিক করছেন: মমতা
আমার মনে আছে নন্দীগ্রামে গুলি চলছে, বোমা পড়ছে, আবু সুপিয়ান তাহেররা ফোনে বলছে ‘দিদি শুনছেন গুলির শব্দ’। সেসব দিন আমরা দেখেছি। বারবার বলেছি ওরে তোরা সাবধানে থাক। আমি বসে বসে পাহারা দিয়েছি। এখন আমি কারও কাছে জ্ঞান নেব না নন্দীগ্রাম আন্দোলন কে করেছে কারা করেছে: মমতা
২০০৭ সালে নন্দীগ্রাম থেকে নিখোঁজ হয়ে যান ১০ জন। তাঁদের পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা অনুদান।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি পদে বসেছেন ডঃ সৌমেন মহাপাত্র। শিশির অধিকারীর পদে বসে নন্দীগ্রামের সভা সফল করাই তাঁর কাছে প্রথম চ্যালেঞ্জ। সর্বোচ্চ জমায়েতের জন্য কয়েক দিন আগে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকও সেরেছেন সৌমেন। আজকের সভা ঘিরে তাঁর প্রত্যাশাও তুঙ্গে। মমতাকে পুরোধা উল্লেখ করে সৌমেনের দাবি, আজকের সভায় ৩ লক্ষ মানুষ আসবেন।
নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যাওয়ার কথা ছিল ৭ জানুয়ারি। পাল্টা ৮ জানুয়ারি সভা ডেকেছিল বিজেপি। মমতার সভা না হলেও বিজেপির সভা হয়েছে। তাই আজকের সভা ঘিরে সমালোচনার সুর বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের গলায়। বিজেপি তো সভা করে এসেছে, দেখা যাক মমতা কী করতে পারেন! এই মর্মেই প্রতিক্রিয়া দিলীপের।
নন্দীগ্রামের আমদাবাদ, বিরুলিয়া, গোলপুকুরেও একাধিক জায়গায় সোমবার সকাল থেকে নজরে এসেছে ‘মমতা ব্যানার্জী গো-ব্যাক’ লেখা পোস্টার। এই ঘটনায় তৃণমূল-বিজেপি চাপানউতর তুঙ্গে।
প্রস্তুতি সারা। তৃণমূলের কর্মী, সমর্থকরা ইতিমধ্যেই সভাস্থলে আসতে শুরু করেছেন। দুপুর ১টায় জনসভা তৃণমূল নেত্রীর।