পূর্ব মেদিনীপুর: রাজনীতিতে তিন ধারার মানুষ থাকেন। নন্দীগ্রামের সভা থেকে রাজনীতিকদের শ্রেণিবিন্যাস করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বললেন, লোভী-ভোগী-ত্যাগীতে বিভক্ত রাজনৈতিক নেতারা। কে কোন ভাগে পড়েন সেটা অবশ্য স্পষ্ট না করলেও, প্রথম দুই শ্রেণি যে অধিকারীদের জন্য বরাদ্দ তা ঠারেঠোরে ভালই বোঝালেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, কালো টাকা সাদা করতে ভাজপা ওয়াশিং মেশিনে যাঁরা ভরসা রাখছেন, মানুষ তাঁদের কোনওদিনই ক্ষমা করবেন না।
আরও পড়ুন: মমতা কেন নন্দীগ্রাম থেকে লড়ছেন?
শুভেন্দুর বিজেপিতে যোগদানের পর এদিনই প্রথম জেলায় সভা করলেন মমতা। প্রথমে কিছুটা নন্দীগ্রামের ইতিহাস শোনালেন, তারপরই রাজনীতির অলিন্দে প্রবেশ করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। নাম না করে শুভেন্দুকে কটাক্ষ, “কেউ কেউ ইধার উধার করছে। চিন্তা করবেন না। ছাত্র পরিষদে আগে সুপ্রকাশ গিরির সঙ্গে লড়ো। তারপর না হয় তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে লড়বে।” এই সুপ্রকাশ গিরি অখিল গিরির ছেলে। জেলায় যাঁর পরিচিতি অধিকারীদের ‘অ্যান্টি লবি’ হিসাবে। বারবার অখিল-অনুগামীরা অভিযোগ করেন, অধিকারীদের একচ্ছত্র রাজত্বের কারণে তাঁরা কোনওদিন জেলায় রাজনীতির প্রথম সারিতে আসতে পারেননি।
আরও পড়ুন: আমি টাকা দিতাম, কিন্তু দুই মেদিনীপুর আমাকে দেখতে দেওয়া হতো না: মমতা
তবে এখন তাঁদেরই রমরমা। অখিল গিরি জেলার দায়িত্বে। শিশির অধিকারীকে হঠিয়ে দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের ভারও মমতা তাঁর হাতেই তুলে দিয়েছেন। একাধিকবার বিভিন্ন মঞ্চ থেকে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, অখিলই তাঁর প্রথমদিনের যুদ্ধের সঙ্গী। এদিনও সে কথা তুলেই মমতা বলেন, “কেউ না কেউ তোমরা যেতেই পারে। তোমাদের স্বাধীনতা রয়েছে। আমি মনে করি ভালই করেছ। তবে আজ যারা ছেড়ে যাচ্ছ তারা তো জন্মলগ্ন থেকে ছিলে না। এই আসন থেকে লড়াই করেছিল অখিল গিরি।”
এরপরই মমতার কটাক্ষের সুর, “রাজনীতিতে তিনরকম লোক হয়, লোভী-ভোগী-ত্যাগী। যারা ত্যাগ করতে জানে তারা প্রতিবাদ করবেই। তারা কোথাও যাবে না। এক ইঞ্চি মায়ের কোল কিংবা আম্মার কোল ছাড়বে না। একদল আছে যাদের অনেক সম্পত্তি, প্রচুর টাকা, সেই টাকা রক্ষা করতে জায়গা চাই। এদিকে বিজেপি নেতারাও দিল্লি থেকে বলছে, হয় ঘরে নয় জেলে। ওয়াশিং পাউডার ভাজপা মানেই কালো মুহূর্তে সাদা। তোমরা যারা সেই ওয়াশিং মেশিন বেছে নিয়েছ ভালই করেছ। তোমরা প্রধানমন্ত্রী হও, রাষ্ট্রপতি হও, দয়া করে বাংলাকে বিক্রি করতে যেও না। ভারতবর্ষের নেতা হও, সারা পৃথিবীর নেতা হও, আমি বেঁচে থাকতে বাংলাকে বিক্রি করতে দেব না। এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ।” আর সেই চ্য়ালেঞ্জ সামনে রেখেই এদিন নন্দীগ্রাম থেকে নতুন তৃণমূলের শপথও নিলেন দলের সুপ্রিমো।