আমি টাকা দিতাম, কিন্তু দুই মেদিনীপুর আমাকে দেখতে দেওয়া হতো না: মমতা
"যাঁরা দল ছেড়ে গিয়েছেন ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। শতায়ু হোন। দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি হন।" তবে বাংলার দিকে যাতে তাঁদের নজর না পড়ে সে সাবধানবার্তাও শুনিয়েছেন মমতা।
পূর্ব মেদিনীপুর: এতদিন টাকা দিতেন তিনি, তবে সবটা তাঁকে দেখতে দেওয়া হতো না। সোমবার তেখালির জনসভা থেকে এমনটাই অভিযোগ করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘অন্য লোকের’ হাতে নন্দীগ্রাম ছেড়ে তিনি যে ‘ভুল’ করেছেন এদিন সে খেদও ধরা পড়েছে দলনেত্রীর গলায়। একইসঙ্গে বক্তব্যের শুরুতেই নন্দীগ্রামের ইতিহাস আওড়ে তিনি বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন যে এই মাটির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কতটা আত্মিক। নন্দীগ্রামের লড়াই একদা তিনিই লড়েছিলেন এবং এবার থেকে তিনিই সরাসরি নন্দীগ্রামের দেখভাল করবেন। তেখালির মঞ্চ থেকেই মমতার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা যে তিনি স্বয়ং এবার নন্দীগ্রাম থেকই বিধানসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
এদিন মমতা বলেন, “পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম আমার নিজের জেলা। আমি এবার থেকে নিজের মতো করে তা দেখে নেব। চিন্তা করবেন না। আগে আমাকে দেখতে দেওয়া হতো না। আমি টাকা দিতাম, কিন্তু কাজ করত অন্য লোক। আমি হয়তো সবটা জানতামও না। তবে সবটাই করে দিতাম। এবার থেকে আমি নিজেই দেখব।”
উল্লেখ্য, নন্দীগ্রাম-সহ গোটা পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল সংগঠন এবং বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিত্বের ভার দীর্ঘদিনই অধিকারীদের হাতে ছেড়ে রেখে ‘নিশ্চিন্তে’ (অন্তত প্রকাশ্যে) ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সম্প্রতি শুভেন্দু অধিকারীর তৃণমূল ত্যাগ এবং অধিকারী পরিবার-জোড়াফুল শিবিরের সম্পর্ক তিক্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে ওই জেলার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। ফলে, অধিকারী ‘দখলদারি’ কাটিয়ে দলীয় সংগঠন সাজাতে আদা জল খেয়ে নেমে পড়েছে তৃণমূল। এমতাবস্থায় মমতার কাছেও স্পষ্ট যে দুই মেদিনীপুরে তৃণমূলকে বাদ দিয়েও শুভেন্দু এবং অধিকারীরা একটা আলাদা পরিচিতি তৈরি করতে পেরেছেন। নন্দীগ্রাম, ময়না, হেঁড়িয়া, তমলুক কিংবা কাঁথিতে ‘দাদার অনুগামী’রা বহরে বেশ চওড়া। অধিকারীদের এই আধিপত্যই এবার ভাঙতে মাঠে নামলেন স্বয়ং মমতা।
আরও পড়ুন: আমি যদি নন্দীগ্রামে প্রার্থী হই কেমন হয়: মমতা
নন্দীগ্রামে প্রার্থী হচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ঘোষণা করলেন নিজেই #Nandigram । #MamataBanerjee । #TV9Bangla pic.twitter.com/N1gvD5UIRy
— TV9 Bangla (@Tv9_Bangla) January 18, 2021
কিন্তু মমতাকে এখানকার কাজকর্ম ‘দেখতে না দেওয়ার’ তত্ত্বে সুর চড়াচ্ছে বিরোধীরা। বিজেপির তরফে দাবি করা হচ্ছে, মমতার এই বক্তব্য বুঝিয়ে দিল শুভেন্দু বারবার নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে যে অভিযোগ তুলেছেন তা কতটা যুক্তিযুক্ত। পাঁচ বছর পর কেন ‘বোধোদয়’, এতদিন কেন নন্দীগ্রামে মমতা যাননি, সে প্রশ্নই তুলেছে গেরুয়া শিবির। বাম নেতা সুজন চক্রবর্তীর কাছে আবার মমতার এই ধরনের কথা ‘নিজ মুখে হার স্বীকার’। তবে যে যাই বলুক, এদিনের সভা থেকে মমতার যাবতীয় ঘোষণা বিধানসভার লড়াইয়ে ভিন্ন মাত্রা যোগ করল এ কথা অনস্বীকার্য।