পূর্ব মেদিনীপুর: ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ভাসুরের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত আবার নিজেকে শাসকদলের কর্মী বলেই দাবি করেন। পুলিশে অভিযোগ জানিয়েও বিশেষ কোনও লাভ হয়নি। অগত্যা সোশ্যাল মিডিয়ায় এসে হলদিয়ার গৃহবধূর আর্তনাদ, “রঙ না দেখে গ্রেফতার করা হোক অভিযুক্তকে।” জেলা তৃণমূল সভাপতির কাছেও আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
যৌথ পরিবারের থেকে মহা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এক গৃহবধূ। তাঁর অভিযোগ, ভাসুরই ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছেন। এবং তাতে নাকি যোগ রয়েছে ভাসুরের ছেলেরও।
ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে নিজেকে বাড়ির মধ্যেই দোতলার ঘরে বন্দি রাখেন ওই বধূ। এমনটাই দাবি তাঁর। রান্না ও পানীয় জল সংগ্রহ করতে তাঁকে নীচে নামতেই হয়। আর নামলেই সেই কুৎসিত গালাগালি, কদর্য ইঙ্গিত, কখনও ধর্ষণের হুমকি সহ্য করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ।
ওই গৃহবধূর অভিযোগ, বিষয়টা আজকের নয়। গত দু’ বছর ধরেই এমনটা চলছে। পুলিশে অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ। মৌখিক বা লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি। উল্টে নাকি ওই মহিলাকেই সংযত থাকার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ।
অগত্যা সোশ্যাল মিডিয়াতেই আর্তনাদ হলদিয়ার গৃহবধূর। ফেসবুক লাইভে এসে ওই মহিলা বলেন, গত ২ বছর ধরে এমনই চলে আসছে। অসহায় গৃহবধূ জানিয়েছেন, সবচেয়ে বড় কথা থানায় গিয়ে কোনও সুরাহা হয়নি। ভবানীপুর থানায় দু’দুবার গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সময় দায়িত্বে থাকা আধিকারিক নাকি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, মহিলাদেরই উদ্যোগ নিয়ে মারধর করতে হবে অভিযুক্ত ভাসুর ও ভাসুরের ছেলেকে।
বছর তিরিশের ওই গৃহবধূ বলেন, “আমার দুই মেয়ে। কিন্তু ওদের অত্যাচারের ভয়ে বড় মেয়েকে হোস্টেলে রাখতে বাধ্য হয়েছি। কারণ দোতালায় নিজেকে বন্দি রাখা সত্ত্বেও ওরা মাঝে মাঝে এসে আমার দরজায় ধাক্কা দেয়, দরজা খুলতে বলে। অশ্লীল ইঙ্গিত করে।”
ওই গৃহবধূর স্বামী এলাকারই ছোটো ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। সকালে কাজে বেরিয়ে যান, রাতে ফেরেন। স্বামী বাড়ি না থাকলেই বাড়িতে এই অশালীন পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়তে হয় তাঁকে, এমনটাই অভিযোগ। স্বামীর পৈত্রিক বাড়িতে দোতলায় থাকেন ওই গৃহবধূ। একতলায় থাকেন অভিযুক্ত ভাসুর ও তাঁর ছেলে। অভিযুক্তরা নাকি এমনও হুমকি দেন, তাঁরা তৃণমূল কর্মী বলে প্রশাসন কিছুই করতে পারবে না। সবটাই মহিলার বয়ান অনুযায়ী।
এই বিষয়ে হলদিয়া মহকুমা পুলিশ আধিকারিক রাহুল পাণ্ডে বলেন, “বিষয়টি জানা ছিল না, গুরুত্ব দিয়ে পুরো ঘটনা দেখা হবে। খতিয়ে দেখেই আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এই বিষয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি তুষার মণ্ডল বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের দল নেত্রী। ওঁর আদর্শে আমরা অনুপ্রাণিত। দলনেত্রী সর্বক্ষেত্রে মহিলাদের এগিয়ে রাখেন। আর সেখানেই এক মহিলার প্রতি এই ঘটনা কখনই মেনে নেব না আমরা। ওই ব্যক্তি আমাদের দলের কোনও কর্মী হতে পারে না। যদিও পারিবারিক বিষয়। তা সত্ত্বেও আমি ব্যাক্তিগত ভাবে দলমত না দেখে ওই অভিযুক্তদের গ্রেফতারের আবেদন জানাচ্ছি।” এদিন অভিযুক্তদের এ প্রশ্ন করা হলে, তাঁরা কোনও কথাই বলতে চাননি।