পূর্ব মেদিনীপুর: কৃষক কিংবা এলাকার বাসিন্দা না হলেও সুপ্রকাশ গিরি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির চেয়ারম্যান কীভাবে হলেন? এখন এই মামলা হাইকোর্টে বিচারাধীন। মঙ্গলবার এই মামলায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। তবে, এফআইআর কপি কিংবা হাইকোর্টের নির্দেশ নামায় কোথাও সুপ্রকাশ গিরির নাম নেই। অথচ তাঁকে ঘিরেই বিতর্ক। এ প্রসঙ্গে অখিল-পুত্র সুপ্রকাশ গিরি বলেছেন, “যা হয়েছে সমবায় আইন মেনেই হয়েছে। আইন বহির্ভূত কোনও কাজ আমরা করি না।” কিন্তু মহামান্য কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশকে ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে বলে মত এই নেতার। সুপ্রকাশ গিরির দাবি, এই বিতর্ককে হাতিয়ার করে অন্তরাল থেকে তাঁর নাম কালিমালিপ্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন বেশ কিছু মানুষ তবে সময় তার উত্তর দেবে।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরির ছেলে তথা কাঁথি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রকাশ গিরির বিরুদ্ধে সমবায়ের নথি জাল করার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, ওই সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির নথি জাল করে পূর্বতন সদস্য কৃত্তিবাস মাইতির নাম মুছে সেই জায়গায় সুপ্রকাশের নাম ঢোকানো হয়েছে। অভিযোগকারী কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের পাঁচগেছিয়ার বাসিন্দার শেখ মুক্তার আলি। তাঁর বক্তব্য, সমবায় আইন অনুযায়ী সমবায় যে এলাকার, সেই এলাকার কিংবা পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দা হলে তবেই সমবায়ের সদস্য হওয়া যায়। আর কৃষক ছাড়া কেউ কৃষি সমবায়ের সদস্য হতে পারেন না। অথচ সুপ্রকাশ কাঁথি শহরের বাসিন্দা, পেশায় কৃষকও নন। তাহলে কীভাবে ওই পদ পেলেন?
এই প্রশ্ন তুলেই মামলা হয়েছিল হাই কোর্টে। মঙ্গলবার সেই মামলায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। রামনগর ১ নম্বর ব্লকের দুবলাবাড়ি টেংরামারি কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির নথি জাল করার অভিযোগে সমবায় ম্যানেজার শশবিন্দু দে’র বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে মামলা শুরু করেছে মন্দারমণি কোস্টাল থানার পুলিশ। কিন্তু মামলাকারীর আদালতে অভিযোগ করেন, সুপ্রকাশ গিরি রাজ্যের জনৈক বিধায়কের ছেলে হওয়ার সুবাদে তাঁকে রক্ষা করার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। নথি জালিয়াতির সমস্ত প্রমাণ তাঁর মোবাইলে রয়েছে বলেও আদালতের কাছে জানান অভিযোগকারী। যদিও এ প্রসঙ্গে সুপ্রকাশ গিরির বক্তব্য ছিল, “আমার এ বিষয়ে কিছু জানা নেই। আমার মেম্বারশিপ চেয়েছিলাম। সমিতিই আমাকে দিয়েছে। সমবায় আইনে রয়েছে ৩ বছরের পুরবো ডিপোজিটর হলে সমিতির সদস্য পদ পাওয়া যায়।”
মঙ্গলবারের শুনানিতে আদালত পুলিশকে অভিযোগকারীর সংশ্লিষ্ট মোবাইল ফরেনসিক ল্যাবরোটরিতে পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে। পরবর্তীতে মামলায় অন্য কারোর যোগ থাকার প্রমাণ মিললে তার নাম মামলায় যুক্ত করার নির্দেশ পুলিশকে দিয়েছে আদালত। সেসময় মামলাকারীর আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, মূল অভিযুক্তের প্রভাবশালী যোগ থাকলে কী তিনি ছাড় পেয়ে যাবেন? সেই সময় বিচারপতির পর্যবেক্ষণ ছিল, অভিযোগ থাকলে সুপ্রকাশ গিরিকে ছাড় দেওয়া হবে কেন? আগামী ৩ মাসের মধ্যে ফরেন্সিক রিপোর্ট- সহ তদন্ত রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়েছে পুলিশকে।
সুপ্রকাশ গিরির বক্তব্য, এখানেই আদালতের পর্যবেক্ষণের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। কারণ নির্দেশনামা কিংবা এফআইআর কপি কোথাও তাঁর নাম উল্লেখ নেই।