তমলুক: বাড়ির দরজা বন্ধ। বারবার ডাকাডাকি করলেও কোনও সাড়া নেই। পরিচারিকাও এসে ফিরে যায়। কিন্তু, দীর্ঘসময় বাড়ি থেকে কেউ বের না হওয়াতে বাড়তে থাকে সন্দেহ। শেষে খবর দেওয়া হয় পুলিশে। দরজা ভাঙতেই চোখ কপালে উঠে যায় সকলের। দেখা যায় ঘরের মেঝেতে মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে এক শীর্ণকায় বৃদ্ধের দেহ। আর তাতে প্রাণ নেই। সেই দেহ জড়িয়ে ধরে শুয়ে রয়েছে মেয়ে। হাজার চেষ্টা করেও তাঁকে বাবার থেকে আলাদা করা যাচ্ছে না। ছাড়তে গেলেই জোর চিৎকার। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুর (Purba Medinipur) জেলার তমলুক থানার তাম্রলিপ্ত পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে পদুমবসান এলাকায়।
পদুমবসান এলাকারই এক বাড়িতে থাকতেন ভোলানাথ দে নামে ৮০ বছরের বৃদ্ধ। তিনি কৃষি দফতরে কাজ করতেন বলে জানা গিয়েছে। সঙ্গে ছিল তাঁর ৩৫ বছরের মেয়ে মান্তু দে। তিনি আবার মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। স্থানীয় সূত্রে খবর, গত সপ্তাহের মঙ্গলবার থেকে বাড়ির দরজা ভিতর থেকে বন্ধ থাকায় পরিচারিকা আর বাড়িতে ঢুকতে পারেননি। প্রত্যহ বারবার দরজা ধাক্কা দিয়ে ও চিৎকার করে ডাকার পরেও ভেতর থেকে দরজা খোলেনি কেউ। ঘটনায় শোরগোল শুরু হয় এলাকায়। প্রতিবেশীরাই খবর দেন স্থানীয় কাউন্সিলরকে। খবর যায় তমলুক থানায়।
বুধবার তমলুক থানার পুলিশ এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকতেই চোখ কপালে উঠে যায়। দেখা যায় ওই মহিলা তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রয়েছেন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান দীর্ঘ অনাহারের কারণেই মৃত্যু হয়েছে ওই বৃদ্ধের। না খাওয়ার কারণে শারীরিকভাবে দুর্বল পড়েছেন ওই মহিলা। ইতিমধ্যেই বৃদ্ধের দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে পুলিশ। অন্যদিকে তাঁর মেয়েকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে স্থানীয় হাসপাতালে।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যাচ্ছে ভোলানাথবাবুর স্ত্রী রয়েছে। রয়েছে আরও এক মেয়ে। সেই মেয়ের আরামবাগে বিয়ে হয়েছে। মান্তুর মানসিক সমস্যার কারণে বাড়িতে রোজ অশান্তি লেগেই থাকত। সে কারণেই ভোলানাথ বাবুর স্ত্রী তার ছোট মেয়ের সঙ্গে থাকতেন বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু, এত বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরেও তাঁরা কেন খোঁজ নিলেন সেই প্রশ্নও ভাবাচ্ছে পুলিশকে।