পূর্ব মেদিনীপুর ও কোচবিহার: দিনহাটা (Dinhata), খড়দহ (Khardaha), গোসাবা (Gosaba), শান্তিপুর (Shantipur) উপনির্বাচনে কার্যত খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছে বিজেপি (BJP)। চারকেন্দ্রেই ফোটোফিনিশ জয় তৃণমূলের। কিন্তু, করোনা পরিস্থিতিতে বিজয়োত্সব না করতে নির্দেশ দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই নির্দেশকে অগ্রাহ্য করে কার্যত চলল তৃণমূলের বিজয় মিছিল। কোথাও বাইক মিছিল করে কোথাও বা সবুজ আবির উড়িয়ে, ‘উল্লাসে’ কোনও খামতি ছিল না।
মঙ্গলবার কার্যত দেখা গেল বিজয়োত্সবে বিন্দুমাত্র লাগাম নেই তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের। পাশকুঁড়ায় কমিশনারের নির্দেশ উপেক্ষা করেই প্রায় ৩০০ বাইক নিয়ে মিছিল করেন তৃণমূল কর্মীরা। খোদ পাশকুঁড়ার প্রাক্তন ব্লক সহ-সভাপতি মুফলেসর দত্ত, মইদুল খান-সহ একাধিক নেতৃত্বের উপস্থিতিতেই চলে বিজয় মিছিল। কোভিড বিধি ভঙ্গ করেই অরক্ষিত মুখে চলে বিজয় মিছিল। ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের যদিও দাবি, বিজেপির বিরুদ্ধে ও তাদের মিথ্য়াচারের বিরুদ্ধে জয়লাভের জন্যই এই মিছিল। কোভিড বিধি মেনেই মিছিল করা হয়েছে।
অন্যদিকে, দিনহাটাতে ভোট গণনা কেন্দ্র থেকে বেরনোর পরেই বিজেপি প্রার্থী অশোক মণ্ডলকে ঘিরে ধরে তৃণমূল কর্মীদের বিক্ষোভ দেখানোর অভিযোগ ওঠে। বিজেপি প্রার্থী অশোক মণ্ডলকে ঘিরে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি ‘জয় বাংলা’ স্লোগানও দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। শুধু তাই নয়, এরপর অশোক মণ্ডলের গায়ে সবুজ আবির ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। যদিও, সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল কর্মীরা।
প্রসঙ্গত, উপনির্বাচনে জয়লাভের পর খোদ তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্টই জানিয়ে দেন বিজয়োত্সব করা যাবে না। কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত। কেন তারপরেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ অমান্য করে চলল উদযাপন? উঠছে প্রশ্ন। যদিও, এ বিষয়ে কার্যত মুখে কুলুপ শাসক শিবিরের।
এদিকে, খড়দহ, দিনহাটা এবং গোসাবা- এই তিন কেন্দ্রে জামানত জব্দ হয়েছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, সন্ত্রাসকে হাতিয়ার করে এবং ভোটিং মেশিনারিকে কাজে লাগিয়ে জয় পেয়েছে তৃণমূল। বিজেপির রাজ্য সভাপতির কটাক্ষ, মানুষ বোকা নয়। উপনির্বাচনে কীভাবে দেড় লাখ ভোটের ব্যবধান হয় সে প্রশ্ন তুলেছেন দিলীপ ঘোষও।
উল্লেখ্য, একুশের ভোটের ফলাফলে এই চার কেন্দ্রের দুটিতে জয় পায় তৃণমূল এবং বিজেপি দুই। কিন্তু উপনির্বাচনে ৪-০ করে জয় পেল তৃণমূল। দিলীপ ঘোষের দাবি, গোসাবা বা দিনহাটায় নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকারই প্রয়োগ করতে পারেনি মানুষ। তাই শোভনদেবের চেয়েও রেকর্ড ভোটে জেতেন উদয়ন গুহ কিংবা সুব্রত মণ্ডল। তাঁরা কি শোভনদেবের চেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় নেতা ছিলেন? প্রশ্ন দিলীপের।
এদিকে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, ‘বিজেপি একটা হাওয়া। কেন্দ্রের জনবিরোধী নেতা, ব্যক্তি কুৎসা, তৃণমূলের উন্নয়ন সবটার প্রতিফলন পড়েছে এই ভোটে।’
এদিন, ৯৩ হাজার ৮৩৮ ভোটে জয়ী হলেন খড়দহের তৃণমূল প্রাথী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। কোচবিহারের দিনহাটায় বিজেপিকে পরাজিত করল তৃণমূল। উদয়ন গুহ ওই কেন্দ্রে ১ লক্ষ ৬৪ হাজার ৮৯ ভোটে জয়ী। গোসাবায় ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ৫১ ভোটে জিতছেন তৃণমূলের সুব্রত মণ্ডল। ওই কেন্দ্রে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন বিজেপি-র পলাশ রানা। শান্তিপুরে প্রায় ৬৪ হাজার ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন ব্রজকিশোর গোস্বামী।
আরও পড়ুন: Kalyan Banerjee: ‘কেউ কথা রাখেনি!…আমায় মেনে নিতে হবে’, রাজীবের প্রত্যাবর্তনে ‘অভিমানী’ কল্যাণ