নন্দীগ্রাম: ‘নন্দীগ্রাম- মেদিনীপুরের ভূমিপুত্রকে চায়, বহিরাগতকে নয়।’ মঙ্গলবার মমতার (Mamata Banerjee) নির্বাচনী সভার আগে এরকমই কিছু পোস্টার পড়েছিল নন্দীগ্রামে (Nandigram)। যা নিয়ে নাম না করে বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) কে নিশানা করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এদিন সভা থেকে মমতার কটাক্ষ, “কেউ কেউ বলছে আমি নাকি বাইরের লোক। আমি বাংলার লোক বাইরের লোক হয়ে গেলাম ভাই?” এর পর মমতা যোগ করেন দিল্লি-রাজস্থান থেকে যাঁরা আসছেন তাঁরা ঘরের লোক হয়ে গেলেন আর আমি বাইরের? এখানেই না থেমে মমতার বার্তা, “তোমার মেদিনীপুর জ্বললে আমি আসি, আমার বীরভূম জ্বললে তুমি যাও। আজ আমি বহিরাগত হয়ে গেলাম? তাহলে তো আমার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দরকার ছিল না!” তার পর সভায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, “যদি মনে করেন আমার দাঁড়ানোর দরকার নেই, তাহলে বলুন আমি চলে যাব। যদি মনে করেন ঘরের লোক, তাহলে কাল নমিনেশন জমা দিতে যাব।”
একুশের নির্বাচনে বাংলার অন্যতম ফোকাস নন্দীগ্রাম কেন্দ্র। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র থেকে লড়াই করছেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য়দিকে তাঁর একদা সতীর্থ এবং অধুনা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। মমতাকে নন্দীগ্রাম থেকে ৫০ হাজার ভোটে হারানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শুভেন্দু, বলেছিলেন যে ৬২ হাজারের আশায় নন্দীগ্রামে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন সেখানেো তিনি সিঁদ কাটবেন। অর্থাৎ, বিজেপি নেতা সংখ্যালঘু ভোটকেই ইঙ্গিত করেছিলেন। আর এদিন মমতার বার্তা, মানুষে মানুষে ভাগাভাগি হয় না। ১০০ শতাংশ ভোটই আমাদের। পাশাপাশি তাঁর হুঁশিয়ারি, আমার সঙ্গে হিন্দু কার্ড খেলবেন না।
গত জানুয়ারি মাসে তেখালির সভা থেকে মমতা ঘোষণা করে দেন এবার তিনিই নন্দীগ্রামের প্রার্থী। এদিন সেই প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, “আমি যেদিন লাস্ট এসেছিলাম তখন নন্দীগ্রামে বিধায়ক ছিল না। তখন আমি বলেছিলাম যদি আমি দাঁড়াই কেমন হবে? আপনারা বললেন খুব ভাল হবে। আপনাদের ভালবাসায় আমি প্রার্থী হয়েছি। আমার দু’চোখ নন্দীগ্রাম।” তিনি আরও বলেন, সিঙ্গুর না থাকলে নন্দীগ্রাম হত না। আমি নিজে গ্রামের মেয়ে। গ্রামের প্রতি আমার বরাবরই টান। এবারে আমার টার্গেট ছিল নন্দীগ্রাম নাহলে সিঙ্গুর থেকে দাঁড়াব।”
এদিন নন্দীগ্রামের সঙ্গে ভবানীপুর কেন্দ্রের উন্নয়নের তুলনা টেনে মমতার প্রতিশ্রুতি, হলদিয়ার সঙ্গে আমি নন্দীগ্রামকে জুড়ে দিতে ব্রিজ হবে। নন্দীগ্রামকে আগামিদিনে ‘মডেল নন্দীগ্রাম’ করতে চান বলে জানান মমতা। বলেন, নন্দীগ্রামে কেউ বেকার থাকবে না। বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির কথাও এবারের নির্বাচনী ইস্তেহারে রাখছেন তিনি। তৃণমূল নেত্রী আরও জানান, এখন রেয়াপাড়ায় এক বছরের জন্য দুটো বাড়ি নিয়েছেন। তিন মাস অন্তর তিনি নন্দীগ্রাম ঘুরে যাবেন। তবে পরে নন্দীগ্রামেই কুঁড়ে ঘর বানিয়ে থাকবেন।
আরও পড়ুন: ‘মমতা ২০০ শতাংশ হারবে’, মেদিনীপুরে সুর চড়ালেন কৈলাস
নন্দীগ্রামে ভোট আগামী ১ এপ্রিল। মমতার বার্তা, “পয়লা এপ্রিল ওদের এপ্রিল ফুল করে দেবেন।” বিজেপির সঙ্গে সঙ্গে সিপিএমকে নিয়েও বার্তা দেন মমতা। প্রসঙ্গত, এই প্রথম বামেরা সিপিএম প্রার্থী দিতে চলেছে নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে। যা নিয়ে মমতার তোপ, “পুরনো সিপিএম কিছু ফিরে এসেছে। ওদের আর ঢুকতে দেবেন না।” এর পর যোগ করেন, কেউ কেউ কেস দিয়ে ভয় দেখাবে। যারা ফেস করতে পারে না তারাই কেসের কথা বলে।”