আজ শনিবার ২৭ মে দুই মেদিনীপুরে দুই কর্মসূচি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার খাদিকুলে বিস্ফোরণস্থলে যাচ্ছেন প্রথমে। এরপর সেখান থেকে যাবেন পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবজোয়ার কর্মসূচিতে যোগ দেবেন তিনি। শুক্রবার শালবনিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়ের উপর হামলার অভিযোগ ওঠে। একাধিক জামিন অযোগ্য দায়ের মামলাও রুজু করেছে ঝাড়গ্রাম পুলিশ। চারজন আটকও হয়েছেন। শুক্রবার রাতেই গোপীবল্লভপুরে অধিবেশন থেকে এই ঘটনা নিয়ে সুর চড়ান অভিষেক। শনিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বলেন, নজর সেদিকে।
পঞ্চায়েতের আগে দলকে এককাট্টা হওয়ার বার্তা দিলেন মমতা। বললেন, “তৃণমূল ঝগড়া না করলে, তাহলে তৃণমূলকে হটানোর ক্ষমতা কারও নেই। তৃণমূলের নিজেদের মধ্যে যদি বোঝাপড়া থাকে, তৃণমূল দিল্লিকে লড়ে নেবে। লড়তে চান কি? আগামী দিনে লড়তে হবে। পঞ্চায়েত তো ছোট্ট। বড়টা তো বসে আছে। পঞ্চায়েত শক্তিশালী হলে, তবেই তো বড়টায় ধাক্কা মারতে মারবেন জমকালো করে। বিজেপিকে হারানোর জন্য ভাল ভাবে, মাথা খাটিয়ে রাজনীতি করুন। আমাকে কথা দিতে হবে আপনারা ঝগড়া করবেন না পঞ্চায়েতে, গন্ডগোলে যাবেন না, প্ররোচনায় পা দেবেন না। কোনও কেউটে সাপ কামড়াতে এলে, কামড়াবেন না। লাঠি দিয়ে তাড়াবেন।”
গতকাল বীরবাহাদের উপর আক্রমণ যে মোটেই ভালভাবে দেখছেন না মমতা, তা স্পষ্ট করে দিলেন নিজেই। বললেন, ‘আমরা কেউ দুর্বল নই। আমার বীরবাহা হাঁসদাকে মেরেছে। যতক্ষণ বিচার না হবে, আমি দেখছি। আমি আবারও বলছি, খেলা তো হবেই। আরও বেশি করে খেলা হবে। আগের বার ফুটবল হয়েছে, এবার ফুটবল, হকি, ক্রিকেট, তীরন্দাজিও হবে। সবরকমের হবে। আদিবাসি নাচও হবে।’
মানস ভূইঞাকে মমতার প্রশ্ন, ‘মানসদা শুধু সবং করলে চলবে? শুধু সবংয়েই মাদুরকাঠি, স্ট্যাচু, সুইমিং পুল, সবংয়েই সব… আরে জেলাটা তো আপনার। আপনি বাংলার মন্ত্রী। আমি মাদুরের একটা ক্লাস্টার করার কথা বলেছি। সেটা সবং আর পিংলার মাঝখানে করতে বলেছি। তাহলে সবং, পিংলা ও ডেবরা সব জায়গার মানুষই সুবিধা পাবেন। আপনারা যদি ভাবেন আমি খবর রাখি না, তা ভুল। আমি সব খবর রাখি।’
ঘাটালের কাজ নিয়েও খুব একটা সন্তুষ্ট নন মমতা। বললেন, ‘ঘাটালে ভাল করে কাজ করুন। সমস্যা আছে। দেবকেও একটু ডাকবেন।
মমতা বললেন, ‘কেশিয়ারিতে একটু গড়বর আছে। আজ যারা সেখানে দায়িত্বে আছেন, হয় তারা সেই পরিস্থিতি বদলাবেন, নাহলে আমি তোমাদের বদলে দেব। শ্রীকান্ত মাহাতো কত বড় নেতা, অথচ মাহাতোর কথা বোল্ডলি বলেন না। ওদের হয়ে আমরা চিঠি দিয়েছি। কেন্দ্র বলে দিয়েছে, করতে পারব না। রিজেক্ট করে দিয়েছে। চারবার চিঠি দেওয়া হয়েছে মাহাতোদের জন্য। এপ্রিল মাসে আবার চিঠি দিয়েছি। এগুলি জোর গলায় বলতে পারো না? কেন বলতে পারো না? আমরা চোর না ডাকাত?’
শাসক দলের অন্দরে জেলাস্তরে ক্ষমতার রাশ নিয়ে দ্বন্দ্ব যে তৈরি হয়েছে, তা এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা থেকেও স্পষ্ট। বললেন, ‘জুন এলাকায় ঘোরে। সুজয় জুনের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবে। জুন আমাদের সাংস্কৃতিক মঞ্চের মেয়ে। খুব পপুলার মেয়ে। আমাকে বাধ্য কোরো না কোনও ব্যবস্থা নিতে। শিউলির সঙ্গে একটা গন্ডগোল হয়েছিল কেশপুরে। আমি বলছি, ওটা মিটিয়ে নিতে। যাঁরা পুরনো-নতুন রয়েছে… আগামী দিনে যদি তোমায় দাঁড়াতে হয়, পঞ্চায়েত, লোকসভা নির্বাচন করাতে হয়… দলকে কে জেতাবে, সেটা আগে দেখতে হবে। অজিত মাইতি অনেক পুরনো। আমার দলের অনেক দিনের সহকর্মী। কেউ কেউ এখন আবার অজিতের কথা শোনে না, পাত্তাও দেয় না। আর অজিতেও দোষ আছে, একটু গ্রুপিজ়ম করার। এগুলো বন্ধ করো। আস্তে আস্তে ভাল করে কাজ করো। তোমাকে সবাই মানবে।’
মমতা বললেন, ‘২০০০ টাকা আপনার কাছে থাকলেও ব্যাঙ্ক জমা নিচ্ছে না। দোকানদারের কাছে গেলে, দোকানদার ভয়ে ২০০০ টাকার নোট নিচ্ছে না। এটা তাহলে আগে ভাবা উচিত ছিল না? ২০১৬ সালেই তো করলেন নোট বদল। তাহলে আজ আবার নোটবদল কেন? যদি করতেই হয়, তাহলে আগে অপশন তৈরি করে জনগণকে সুবিধা দিয়ে তারপর করবেন। আমার তো সংশয় হচ্ছে, কোনও একটি রাজনৈতিক দল এই টাকাটি মজুত করে রেখে দিয়েছে। আমি তো বাড়িতে অফিসে খুঁজে দেখলাম আটটা নোট বেরিয়েছে। অর্থাৎ, বুঝতেই পারছেন ওই নোট আমরা ব্যবহারই করি না। আমরা ছোট নোট বেশি ব্যবহার করি।’
আন্দোলনের নামে যাঁরা বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছেন, তাঁদের উদ্দেশেও হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন মমতা। বললেন, ‘যাঁরা কয়েকদিন ধরে ক্রমাগত অ্যাটাক করছেন। রেল লাইন অবরোধ করছেন। রাস্তা অবরোধ করছেন। বাড়ি-গাড়ি ভাঙছেন। এখানে জাতি-দাঙ্গা করার চেষ্টা করছেন যে মাথারা, সেই মাথাগুলি মনে রাখবেন… যদি ভালভাবে থাকতে হয়, আপনাদের মাথায় ছাতা আমি ধরব। আর যদি মনে করেন বিভেদের রাজনীতি করবেন, টাকা খেয়ে বিজেপি যা বলবে… অভিষেকের কনভয়ে, বীরবাহার কনভয়ে অ্যাটাক করা হচ্ছে। কেন? আমি সব সহ্য করতে পারি, আমি চোখ রাঙানি সহ্য করি না।’
বিজেপিকে একহাত নিয়ে মমতা বললেন, ‘আপনাদের মধ্যে আগুন লাগিয়ে দেবে। মণিপুরে যেমন রক্ত ঝরছে, এখানেও সেরকম হঠাৎ করে একদিন হলে… দিল্লির থেকে সেনা চলে আসবে। বন্দুক ধরবে। গুলি করবে। মরে গেলে একটা কোর্ট কেসও করতে পারবেন না। একটা আইন আছে।’
মমতা বললেন, ‘শালবনিতে জ্যোতিবাবুরা জমি দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর কিছু হয়েছিল? হয়নি। জিন্দালদের এই কারখানা আমি এসে উদ্বোধন করেছিলাম। আপনাদের জন্য একটা সুখবর দিই। জিন্দালদের কারখানার পর যে জমিটুকু ওদের কাজে লাগেনি, সেটা ওরা আমাদের ফেরত দিচ্ছে। এখানে আমরা একটি বড় শিল্পকেন্দ্র তৈরি করছি। আজ মেদিনীপুরে কী হয়নি? ছয়টি মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, স্টেডিয়াম, অলচিকি ভাষার কোর্স করা হয়েছে। আমি ঠিক করেছি, আগামী দিনে আমি নিজে একটি ট্রাইবাল ডেভলপমেন্ট বোর্ড তৈরি করব। আমি নিজে চেয়ারম্যান থাকব। আমার সঙ্গে বীরবাহা হাঁসদা ও অন্যান্য আদিবাসী ভাইবোনরা থাকবেন।’
মমতা বললেন, ‘আজ মণিপুরের অবস্থা দেখুন। এত লোক মারা গিয়েছে। কই, আজ পর্যন্ত তো কেউ যাননি (বিজেপির)। বলছে, পরে একদিন যাবে। কবে যাবে? সব শেষ হয়ে যাওয়ার পর? মণিপুরে রক্ত ঝরছে। আর কেউ কেউ নাচাগানা করে বেরাচ্ছে। নাচাগানাকে আমি সম্মান দিই, কারণ আমি নিজেও গান ভালবাসি। কিন্তু যখন কোথাও রক্ত ঝরে, মানবিকতার স্বার্থে পাশে দাঁড়াতে হয়। আমিও যেতে চাই মণিপুর। কিন্তু আমাকে যাওয়ার অনুমতি দেবে না।’
মমতা বললেন, ‘এখন বলছে এনআরসি করতে হবে। আমাকে চিঠি দিয়ে বলছে, আমিই একমাত্র টাস্ক ফোর্স করিনি। তিন চার দিন আগেই চিঠি এসেছে। কেন করব? আমি যদি টাস্ক ফোর্স করি, তাহলে সেই টাস্ক ফোর্সকে বলবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখতে কারা কারা অন্য দেশের। মানে কে হিন্দু আর কে মুসলমান। এই তো অবস্থা।’
মমতা বললেন, ‘এত বড় সাহস! কাল আমাদের দলের মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদার গাড়িও ভাঙচুর করেছে। তিনি একজন আদিবাসী কন্যা। অনেক কাজ করেন। সিনেমা, নাটকে কাজ করেন। ওকে আমি অনেক কাজ করাই, ওর গাড়ি ভেঙেছে। আমি এখনও বিশ্বাস করি, কুড়মি ভাইরা এই কাজ করতে পারে না। আমি মনে করি কুড়মিদের নাম করে বিজেপির স্লোগান নিয়ে এই অত্যাচার করেছে বিজেপি। তারা আদিবাসী মেয়ের গায়ে হাত দিয়েছে। অভিষেককে আক্রমণ করতে গিয়েছিল। অনেক সংবাদমাধ্যমের গাড়িতে আক্রমণ করেছে। তা সত্ত্বেও আমরা কিছু করিনি। পুলিশ আইনত যা বুঝবে, তা করবে। কিন্তু গদ্দারি করে, টাকার জোরে, জাতি-দাঙ্গা লাগিয়ে বাংলাকে বা তৃণমূল কংগ্রেসকে শেষ করতে পারবে না।’
মমতা বললেন, ‘আমরা বলেছিলাম বদলা নয়, বদল চাই। তাই আমাদের কর্মীদের এত অত্যাচারের পরেও রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নজরুলগীতি গাইতে বলেছিলাম। অনেক সময় সিপিএম বলে তাহলে গ্রেফতার করল না কেন। আরে করিনি তো দয়া করে! গ্রেফতার করলে তো সবাইকে করতে হত। সুব্রতদা আজ বেঁচে নেই। কিন্তু সুব্রতদা মাঝে মাঝেই আমাকে বলত, এটা মমতা তোর বড় দোষ। তুই এই সিপিএমে ক্ষমা করে দিলি। তুই জানিস ওরা কী অত্যাচার করেছে? ওদের সপ্তাহে একদিন করে পেটাই দেওয়া দরকার। সুব্রতদা আজ বেঁচে নেই। কিন্তু কথাটা আমার মাঝে মাঝেই মনে পড়ে। মারব না আমরা কাউকে। পাপের মার বিচুটি পাতা দিয়ে ঘষলেই চলে যাবে। বন্দুকের, লাঠির দরকার নেই।’
শালবনির মঞ্চ থেকে বিরোধীদের একহাত নিলেন মমতা। বললেন, ‘তৃণমূলের নামে আজ বিজেপি ও সিপিএম বড় বড় কথা বলে বেরাচ্ছে। সারা রাজ্যের কথা ছেড়ে দিয়ে যদি শুধু মেদিনীপুরও ধরি, তাহলে চমকাইতলা, গড়বেতা, ছোটআঙারিয়া, নেতাই, লালগ্রাম, নন্দীগ্রাম, কেশিয়াড়ি, কেশপুর… এই জায়গাগুলি আসবে। কী করেননি আপনারা! ধোপা-নাপিত বন্ধ। স্কুলে যাওয়া বন্ধ। হাতগুলো কেটে নিয়েছেন। মুণ্ডু কেটে হলদি নদীর জলে ভাসিয়ে দিয়েছেন।’
মমতা বললেন, ‘গণতন্ত্রে দল বড় হলে বিভিন্ন মতামত আসতেই পারে। সব মতামতকে সম্মান জানিয়েই বলি, শেষ পর্যন্ত যিনি দলের প্রতীক পাবেন, তাঁকে সকলকে সমর্থন করতে হবে।’
মমতা বললেন, ‘তৃণমূলে নবজোয়ার কর্মসূচি যাঁরা পরিকল্পনা করছেন, তাঁরা গত একমাসের উপরে রোদফাটা গরমে, স্তব্ধ হয়ে, দগ্ধ হয়ে, প্রখর রোদে, দারুণ অগ্নিবাণে একের পর এক জেলা ঘুরে আজ শালবনিতে এসেছে। যারা দলকে ভালবাসে, দলকে তৈরি করে, দলের ভাবমূর্তি তৈরি করে… তাদের জন্য এই সভা। তাঁদের মতামত নেওয়ার জন্য। অনেকে বলতেন, আমার সঙ্গে তো আলোচনা করাই হয়নি। এর থেকে বড় আলোচনা সভা আর কী হতে পারে!’
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘একদিকে আমাদের মানবিক সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সরকার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার করে আপনাকে ৫০০ টাকা, ১০০০ টাকা মাসে দিচ্ছে। আর অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদীর দানবিক সরকার সেই টাকা নিয়ে দিল্লিতে চলে যাচ্ছে। একদিকে আমাদের মানবিক সরকার, অন্যদিকে বিজেপির দানবিক সরকার।’
সভামঞ্চে পৌঁছে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একমঞ্চে মমতা ও অভিষেক।
সভায় যাওয়ার আগে এদিন বিকেলে শালবনি হাসপাতালে পৌঁছে যান তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন তিনি। হাসপাতালের কর্মী ও প্রসূতি মহিলাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন, কুশল বিনিময় করেন। শিশুরা কেমন আছে, সেই খোঁজ নেন। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে জানালেন, হাসপাতালের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা দেখে খুশি তিনি।
মমতা বলেন, পরিবারগুলোতে সাহায্য় করতে আজ এসেছি। অনেকদিন ধরে চেষ্টা করছি এখানে আসার। কিন্তু আকাশের মুখ এত গম্ভীর, পরিস্থিতি আমাকে অ্যালাও করেনি। কিন্তু আজ সকালেও যখন বৃষ্টি হচ্ছিল, রিস্ক নিয়ে বেরিয়ে এসেছি। আমাকে একবার আসতেই হবে। আমি আপনাদের সকলের কাছে আমার মাথা নত করে এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইছি এবং আপনাদের যদি কোনওরকম কোনও সহযোগিতা করতে পারি আপনারা বলবেন।
মমতা বলেন, এলাকার লোকজনকে বলব, ওসিকে জানান এরকম বেআইনি বাজি তৈরি হলে। ওসি ব্যবস্থা না নিলে আমাকে বলুন। ২ দিনে ওসিকে বদলে দেবো। এখানকার ওসিকেও বদলানো হয়েছে। কারণ, তাঁকে বলা সত্ত্বেও অ্যাকশন নেননি। উপরমহলের ইন্টালিজেন্স যদি সঠিক সময়ে কাজ করত তাহলে এরকম হতো না। আমি জানি ঝাড়খণ্ড রাজ্য থেকে অনেক অস্ত্র আসে, এটা ওড়িশা বর্ডার। এখান থেকে ক্র্যাকার্স বানিয়ে ওড়িশায় যায়। আমার নলেজে সবই আছে। বর্ডার সিল করুন। হোমগার্ডের চাকরি যাঁরা পেলেন, বর্ডারে নিযুক্ত করুন। এলাকায় কাজ করবে, বাইরেও যেতে হবে না। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগও রাখতে পারবে।
বাজি কারখানায় নিহতদের সকলের পরিবারকে বলব, দুর্বল না লড়াই করতে হবে। এটা আমার হাতেও ছিল না আপনার হাতেও ছিল না। যিনি বেআইনিভাবে বাজি তৈরি করেছেন, তাঁর জীবনও চলে গিয়েছে। তাঁর পরিবারের দু’জন গ্রেফতারও হয়েছেন। তাঁকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু সে সময় তিনি নাম বদল করে কটকের হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। আমাদের পুলিশ সেখানে পৌঁছেও গ্রেফতার করে।
তড়িদাহত হয়ে যারা মারা গিয়েছেন, তাঁদের পরিবারকেও ২ লক্ষ টাকা করে সাহায্য ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর। বলেন, সারা বাংলাজুড়ে, আমি জেলাশাসকদের অনুরোধ করব জেলার মন্ত্রী, বিধায়কদের নিয়ে নিহতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে দিতে। আজ আমি ঘোষণা করার পর আগামিকাল থেকে তা দিতে শুরু করবেন।
মমতা বলেন, একটা মানুষ যখন চলে যান, পরিবার ফেলে রেখে যান। তার পরিবারে তখন যারা পড়ে থাকে, তারা দুর্দশায় দুঃখে আক্রান্ত হয়। এ নিয়ে অনেকে রাজনীতি, জলঘোলা করেছে। আমি কোনও রাজনীতি করতে এখানে আসিনি। আমি পরিষ্কার বলি আমি মানবিক সাহায্যের হাত বাড়াতে এসেছি। যারা মারা গিয়েছে সেই পরিবারগুলোকে আজকে আড়াই লক্ষ টাকা করে চেক দিচ্ছি। পরিবারের একজন করে হোমগার্ডের চাকরি, এটা আমি নিয়ে এসেছি। এটাই আপনাদের আমি দিচ্ছি।
ঘটনার ১১ দিন পর খাদিকুলে গিয়ে মমতা বলেন, আমরা প্রথম থেকেই যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেছি। আমাদের নেতৃত্বের টিমও পাঠিয়েছি আমি। ওয়েদার খারাপ থাকার জন্য আসতে পারব কি না ভাবছিলাম। আমি একটাই কারণে এসেছি, মানবিক।
ফায়ার ক্র্যাকার তৈরি বেআইনি। কিন্তু অনেকে পয়সার লোভে বেশি লোভ করতে চায়। নিজেও মারা গেল, এতগুলো লোককে নিয়ে গেল। ফায়ার ক্র্যাকার্স না করে গ্রিন ক্র্যাকার্স করলেও চলে।
মমতার কথায়, যেখানে যেখানে বেআইনি বাজি কারখানা আছে, আমরা নিজেরা সরকার থেকে বাজি কারখানা তৈরির ক্লাস্টার তৈরি করব। বাজি কারখানার মালিক যাঁরা সবুজ বাজি তৈরি করতে চান, সেইরকম ধরনের ক্লাস্টার করব। তাতে চাকরিও বাঁচবে। বাজিও নানা কাজে লাগে।
মমতা বলেন, এখানে বেআইনি বাজি কারখানায় ১১ জন মারা গিয়েছেন। যাঁরা চাকরি করতেন, মারা গিয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছি। এই ঘটনায় আমাদের চোখ খুলে গিয়েছে। আমরা ঠিক করেছি আগামী ২ মাসের মধ্যে আমার কাছে রিপোর্ট আসবে। মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে কমিটি হয়েছে। বেআইনি বাজি কারখানায় ফায়ার ক্র্যাকার্স তৈরি করে অনেকের পেট চলে। চাকরি যাতে কারও নষ্ট না হয় দেখব। তবে জীবন যেন নষ্ট না হয় তার জন্যও পরিকল্পনা নিচ্ছি।
এগরার খাদিকুলে পৌঁছলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অবৈধ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। গত ১৬ মে খাদিকুলে বিস্ফোরণ হয়। ১২ জন মারা যান।
এগরায় মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থল নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে সকাল থেকেই। সভাস্থলে এসেছেন নিহতদের পরিবার। শুধু তাঁরাই সভাস্থলের মঞ্চে। এসেছেনএডিজি সিআই এফ জ্ঞানবন্ত সিং, ডিআইজি মেদিনীপুর প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, ডিরেক্টর সিকিউরিটি, এসপি, ডিএম-সহ উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা।
শুক্রবার অভিষেকের উপর আক্রমণের জায়গায় কী স্লোগান দেওয়া হয়েছিল, মুখ্যসচিবকে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। কারা এই স্লোগান ছিলেন, ঘটনার পিছনে আসল ঘটনা কী, প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর।
শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ হাওড়ার ডুমুরজলায় হেলিপ্যাড থেকে কপ্টারে পূর্ব মেদিনীপুরের পথে রওনা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।