পূর্ব মেদিনীপুর: ভূপতিনগরে (Bhupatinagar Blast) বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় রাজনৈতিক চাপানউতর চলছেই। শনিবারের পর রবিবারও তৃণমূলের দুই নেতার বিরুদ্ধে সরব হল বিজেপি। তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতারে দাবিতে থানায় ডেপুটেশন দেয় তারা। অন্যদিকে রবিবার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছেন বিস্ফোরণে নিহত তৃণমূল বুথ সভাপতি রাজকুমার মান্নার স্ত্রী লতারানি মান্না। লতারানির দাবি, তাঁর স্বামী বাড়িতে অবৈধভাবে বাজি তৈরি করছিলেন। সেই বাজি থেকেই বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণে নিহত তিনজনের মৃতদেহ রবিবারই ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে ভূপতিনগর থানার পুলিশ। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে দেহের ময়নাতদন্ত হবে।
নিহত রাজকুমার মান্না লতারানি মান্নার কথায়, “আমার স্বামীর বাজির ব্যবসা ছিল। শুক্রবার রাতে ৯টা নাগাদ বাজি বাঁধতে বসে। সঙ্গে আরও দু’জন ছিল। আমি তখন পাশের বাড়িতে ছিলাম। হঠাৎ শুনি বিকট আওয়াজ। ছুটে আসি আমি। এসে দেখি চারদিক ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে। ঘরদোর ভাঙা। এই দৃশ্য দেখে আমি জ্ঞান হারাই।” লতারানির থানায় যে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন, সেখানে উল্লেখ করেন, তাঁর স্বামী বেআইনিভাবে বাড়িতে বাজি প্রস্তুত করছিলেন। একাধিকবার বন্ধের কথা বললেও তা কানে তোলেননি। বাজি তৈরি করার সময় ধূমপান করার জন্যই এই ঘটনা বলে মনে করছেন তিনি।
গোটা এলাকা পুলিশ ঘিরে রেখেছে। এদিনও গোটা এলাকা থমথমে। আতঙ্কের ছাপ এলাকার লোকজনের চোখেমুখে। এরইমধ্যে এদিন বিজেপি ডেপুটেশন দেয় থানায়। সেই ডেপুটেশন দেওয়াকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিজেপি নেতা কর্মীরা ব্যাপক বাদানুবাদে জড়ান বলে অভিযোগ। বিজেপির দাবি, এই ঘটনায় তৃণমূলের লোকজনের যোগের স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। তাই এই এলাকায় যাঁদের কথাই শেষ কথা, তাঁদের গ্রেফতারের দাবি তোলে বিরোধী দল।
রবিবার সকালে দলীয় কর্মী সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করে ভূপতিনগর থানায় যান বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি। থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিজেপির কর্মী ও সমর্থকরা। ভগবানপুরে বিধায়ক তথা বিজেপি নেতা রবীন্দ্রনাথ মাইতি বলেন, “পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলের নেতা কর্মীরা এলাকায় বোমা বন্দুকের রাজনীতি করছে। বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা এই ঘটনায় মূল মাথা। তাঁদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।” স্থানীয় তৃণমূল নেতা অপরেশ সাঁতরার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
পাল্টা অপরেশ সাঁতরার অভিযোগ, “আমরা জানতামই না যে আতসবাজির কাজ করতেন উনি। ঘটনা ঘটার পর বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে শুনেছি অনুষ্ঠানবাড়িতে আতসবাজির চাহিদা থাকলে তা তিনি বানাতেন। এটা অবৈধ নিশ্চিতভাবে। ওনার স্ত্রী পুলিশকেও বিষয়টি জানিয়েছেন। পুলিশ ঘটনার সত্যতা প্রকাশ করুক বলেও জানিয়েছেন।” একইসঙ্গে বিজেপির অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “২০২১ সালে ভোটের পর এই বিধানসভায় বিজেপি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে পায়ের নীচে মাটি পেতে এসব অপ্রচার শুরু করেছে। এভাবে ফেরা যাবে না। ওরা শুধু আমার নাম নয়, বেশ কয়েকজন নেতার নামই বলছে। পুলিশই সত্যিটা সামনে আনবে।”
এ প্রসঙ্গে কাঁথি মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সোমনাথ সাহা বলেন, “এখনও পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তির স্ত্রী অভিযোগ দায়ের করেছেন। অবৈধ বাজি কারখানা অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের আগে এর বেশি কিছু তথ্য বলা সম্ভব হয়ে উঠছে না।”