পূর্ব মেদিনীপুর: সামনেই বাঙালির প্রাণের বড় উৎসব শারদ উৎসব। দুর্গাপুজোয় অপরিহার্য পদ্মফুল। পদ্মফুল ছাড়া সম্পন্ন হয় না দশভূজা পুজোর আয়োজন। দুর্গাপুজোয় সন্ধিপূজার সময় ১০৮ টি পদ্মফুল লাগবেই। কিন্তু এবার প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় দুর্গাপূজোয় পদ্ম ফুলের সঙ্কট দেখা দিতে পারে, এমনটাই আশঙ্কা করছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পদ্মফুল চাষিরা। সময়ের বৃষ্টির অভাব আবার অসময়ে বৃষ্টি পদ্ম ফুল চাষে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে। দুর্গাপূজায় পদ্মফুল পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে জেলার পদ্ম চাষিরা।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাট ও পাঁশকুড়া ফুল উৎপাদনে রাজ্যের প্রথম সারিতে। অন্যান্য ফুলের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পদ্মফুলের চাষ হয় কোলাঘাটের কোলাঘাটের সাগরবাড় হয় আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামে। মূলত রেল লাইনের পাশের জলাশয় গুলিতে পদ্মফুল চাষ হয়। চৈত্র মাস থেকে শুরু করে পদ্মফুলের চাষ চলে আশ্বিন-কার্তিক মাস পর্যন্ত। এই সময়ে অন্যান্য পূজোর পাশাপাশি মূলত দূর্গা পুজোকে লক্ষ্য রাখে জেলার পদ্ম চাষিরা। কারণ এই ফুল দুর্গাপূজায় অপরিহার্য হওয়ায় বাড়তি লাভের আশায় মুখিয়ে থাকে পদ্ম চাষিরা। কিন্তু এবার সেই আশায় বাধা হয়েছে প্রকৃতির বিরূপ আচরণ। পদ্মফুল চাষের জন্য এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাব দেখা দেয় জুন জুলাই মাসে।
বৃদ্ধ এক চাষি বলছেন, “জলহাওয়া খুব খারাপ। জল বেড়ে গিয়েছে। কুড়িগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পুজোয় জোগান খুব কম থাকবে।” আরেক চাষি বলেন, “এখানকার যা পরিস্থিতি, তা দেখে মনে হচ্ছে, পুজোয় বাজার ভাল যাবে না। বারবার নিম্নচাপ হচ্ছে। ওয়েদারই তো সব খেয়ে যাচ্ছে। গাছ বাড়ছে, কুড়িও আসছে, কিন্তু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।” তারপর তো সাধারণত দুর্গাপুজোর আগে ভোরের দিকে শিশির পড়ে। তাতে কুড়ি আরও নষ্ট হয়ে যায়।
এমনিতেই জুন জুলাই মাসে বৃষ্টি না হওয়ার ফলে পদ্ম ফুলের গাছ বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটেছে। আবার আশ্বিন মাসের শুরুতে টানা বৃষ্টির পদ্ম ফুলের কুঁড়ি আসছে না। ফলে পুজোর মুখেই পদ্মফুলের যোগান কম। অন্যান্য বছর এক বিঘা পদ্ম ফুলের জলাশয়ে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ ফুল পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমান বছরে এই প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় তার নেমে দাঁড়িয়েছে ১০০ থেকে ১৫০ তে। বাজারে চাহিদা থাকায় যোগান কম হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে পদ্ম ফুলের দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর অনেকটাই বেশি। দাম বেশি হলেও যোগান কম থাকায় চাষিদের মুখে হাসি নেই। প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় আদৌ পুজোয় এবার পদ্মফুলের দেখা মিলবে তো, আশঙ্কায় চাষিরা। আর যদি পদ্ম মেলেও, তাহলে তা যে বহুমূল্যের হবে, তা নির্দ্বিধায় বলছেন চাষিরা।