পুরুলিয়া: ফাইল লোপাটের অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়াল পুরুলিয়া পুরসভায়। এই পুরসভা তৃণমূলের দখলে। অভিযোগ, এখান থেকেই পুরুলিয়ার সাহেব বাঁধ সংক্রান্ত ফাইল লোপাট হয়ে গিয়েছে। এমনও অভিযোগ, এই সরোবরের জন্য বরাদ্দ কোনও টাকার হিসাবও পাওয়া যাচ্ছে না। ফাইল না পাওয়ার বিষয়টি ইতিমধ্যেই মেনে নিয়েছেন স্বয়ং পুরসভার প্রশাসক নবেন্দু মাহালী। অন্যদিকে বিজেপিও ময়দানে নেমে পড়েছে। তাদের দাবি, এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া দরকার।
বৃহস্পতিবারই এর প্রতিবাদে পুরসভা চত্বরে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখানো হয় বিজেপির তরফে। সাহেব বাঁধের জন্য বরাদ্দ টাকা দিয়ে তৃণমূল নেতারা নিজেদের পকেট ভরছে বলে দাবি করে জেলার বিজেপি নেতৃত্ব। উল্লেখ্য ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল পুরুলিয়া শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পুরুলিয়া পুরসভার অধীনস্থ সাহেব বাঁধ জাতীয় সরোবরের স্বীকৃতি পায়।
পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা বাগমুণ্ডি বিধানসভার তৎকালীন বিধায়ক নেপাল মাহাতো এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশের উদ্যোগে তৎকালীন কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রী নমনারায়ণ মিনা ঋষি নিবারণ সায়র যা সাহেব বাঁধ বলেই বেশি পরিচিত, তাকে জাতীয় সরোবরের স্বীকৃতি দেন। তারপর থেকে কেন্দ্র সরকারের অর্থানুকূল্যে সাহেব বাঁধকে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হয়।
সুবিশাল এই জলাধারের রয়েছে একটি ইতিহাস। স্বাধীনতা পূর্ব ভারতে ১৮৪৩ সালে পুরুলিয়া শহর জুড়ে জল সমস্যা সমাধানের জন্য এই জলাধারের খনন শুরু করে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। কর্নেল টিকলে জেলের কয়েদিদের দিয়ে জলাধারের খনন কার্য শুরু করান। ৫০ একর জমির উপর পাঁচ বছর ধরে চলে খনন কার্য। ১৮৪৮ সালে জলাধারের খনন কার্য সম্পন্ন হলে কর্নেল টিকলে সাহেবের নাম অনুসারে নাম দেওয়া হয় সাহেব বাঁধ।
এরপর ব্রিটিশ শাসনের শৃঙ্খল কাটিয়ে ভারত স্বাধীন হয়। সে সময় পুরুলিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামী ঋষি নিবারণ চন্দ্র ঘোষের নাম অনুসারে সাহেব বাঁধের নামকরণ হয় নিবারণ সায়র। বর্তমানে পর্যটন মানচিত্রেও জায়গা করে নিয়েছে পুরুলিয়া শহরের সাহেব বাঁধ। শীতকালে প্রতি বছর বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখিদের আগমনে সাহেব বাঁধ আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। দূরদূরান্তের পর্যটকরা পুরুলিয়া বেড়াতে এসে সাহেব বাঁধ না দেখে ফেরেন না। জাতীয় সরোবরের স্বীকৃতি পাওয়া সেই সাহেব বাঁধের জাতীয় সরোবর সংক্রান্ত ফাইল পুরসভা থেকে উধাও হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে জেলার রাজনীতিতে।
এ প্রসঙ্গে নবেন্দু মাহালী বলেন, “জাতীয় সরোবর নিয়ে ফাইল সংক্রান্ত বিষয় আমিই প্রথম জানতে চাই। তাই বিজেপি এই ইস্যুটা পেল। বিজেপি আজ এসেছে আমার স্টেটমেন্ট শুনেই। আমিই বলেছি। ওরা ঘোলাজলে মাছ ধরতে চাইছে। কিন্তু তাদের তো দু’জন প্রতিনিধি ছিল এখানে, কাউন্সিলর। একজন বিধায়ক রয়েছেন। কেন্দ্রে ক্ষমতায় রয়েছে। এখানকার বিজেপি তো অনায়াসে সমস্ত তথ্য় কেন্দ্রের কাছ থেকে নিয়ে আসতে পারত।”
অন্যদিকে বিজেপি নেতা সত্যজিৎ অধিকারী বলেন, “পুরুলিয়ার আবেগ এই সাহেব বাঁধ। এটা জাতীয় সরোবর। অথচ তৃণমূল এর সব টাকা লোপাট করেছে এর। এখন যেই দেখছে ধরা পড়ে যাবে ফাইলটাই লোপাট করে দিয়েছে। আমরা কিন্তু এর বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবই। আমরা এর আইনানুগ তদন্ত চাই।”
আরও পড়ুন: ‘পুকুর বুজিয়ে, কাটমানি নিয়ে কোটিপতি হয়েছে ওদের কাউন্সিলররা’, শুভেন্দুর নিশানায় তৃণমূল