পুরুলিয়া: গতমাসের শেষে দেহ উদ্ধার হয়েছিল জুড়ন মাহাতো নামে এক ব্যক্তির দেহ। ২৫ মার্চ পুরুলিয়ার জয়পুর থানা এলাকায় বাড়ির পাশেই একটি গর্তের কাছে ওই ব্যক্তির দেহ পাওয়া গিয়েছিল। সেই ঘটনায় ইতিমধ্যেই পুলিশের হাতে গ্রেফতার হল মৃতের স্ত্রী উত্তরা মাহাতো এবং তাঁর প্রেমিক ক্ষেত্রপাল মাহাতো। কীভাবে ওই ব্যক্তিকে খুন করা হয়েছিল, সেই তথ্যও হাতে এসেছে পুলিশের। পুরুলিয়া জেলার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, উত্তরা মাহাতো স্বামীকে খুনের কথা স্বীকার করেছেন। কীভাবে স্বামীকে খুন করেছিলেন উত্তরা? সেই নিয়েও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে তদন্তের অগ্রগতিতে। উত্তরাকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, জুরুনকে ডিমের ঝোল আর ভাতের সঙ্গে ২৫টি ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিয়েছিল উত্তরা। এরপর যখন জুরুন বেহুঁশ হয়ে গিয়েছিল, তখন একটি বাটখারা দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। তারপর একটি ব্লেড বা ছুড়ি জাতীয় কোনও ধারাল বস্তু দিয়ে স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে দিয়েছিল উত্তরা।
তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ধৃত ক্ষেত্রপাল মাহাতোর সঙ্গে গত পাঁচ বছর ধরে একটি বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল উত্তরা। এরপর যখন উত্তরার স্বামী সেই সম্পর্কের কথা জানতে পারে, তখন মাঝেমধ্যেই অশান্তি লেগে থাকত পরিবারে। তারপর এই অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে উত্তরা ও তার প্রেমিক মিলে প্ল্যানিং করেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। যখন উত্তরা এইসব কাণ্ড ঘটাচ্ছিল, তখনও অপর প্রান্তে ফোনে ছিল প্রেমিক। প্রেমিকের কথা মতো খুনের পর মাটিতে গর্ত করে দেহটি পুঁতে দিয়েছিল উত্তরা। তদন্তে নেমে পুলিশ ইতিমধ্যেই খুনে ব্যবহৃত বাটখারা ও ছু়ড়ি জাতীয় বস্তুটি উদ্ধার করেছে। দেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও পুরুষাঙ্গ কাটা থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। পুলিশ জানতে পেরেছে, খুনের আগে এবং তারপরও সারারাত ফোনে কথা হয়েছে উত্তরা ও ক্ষেত্রপালের। এমনকী যে মোবাইল ফোন ও সিমকার্ডটি উত্তরা ব্যবহার করছিল, সেগুলিও ক্ষেত্রপালের দেওয়া বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
জানা যাচ্ছে, ২০ তারিখ থেকেই নিখোঁজ ছিলেন ওই ব্যাক্তি। তিন দিন পর থানায় নিখোঁজ ডায়রিও করেছিল জুড়নের ছেলে অপূর্ব মাহাতো। আত্মীয়দের বাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয় খোঁজ খবরও। এরমধ্যেই ওই বাড়ির পাশের গর্ত করা জায়গা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখান থেকে জুড়নের পচা গলা দেহ উদ্ধার করে। তারপর তদন্তের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গেই উঠে আসে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।