পুরুলিয়া: শ্রী পঞ্চমী তিথিতে পুরুলিয়ায় শুরু হল চার দিনের অকাল বিশ্বকর্মা পুজো (Viswakarma Pujo)। এই পুজোয় মেতে উঠলেন পুরুলিয়ার (Purulia) সূত্রধর সমাজ। পুরুলিয়া শহর ছাড়াও ঝালদা-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় শতবর্ষ ধরে এই পুজোর প্রচলন হয়ে আছে। সব থেকে জাঁকজমক করে পুজো হয়ে থাকে পুরুলিয়া শহরের নামোপাড়ায়। শ্রী পঞ্চমী তিথি থেকেই টানা চার দিন হয়ে থাকে দেব কারিগরের আরাধনা। ১৪০ বছরেরও বেশি আগে এই পুজোর সূচনা করেন এখানকার সূত্রধর সমাজ। আজও একই ভাবে তারা সেই রীতি পালন করে চলেছেন তাঁরা। দেব কারিগরের এই অকাল আরাধনা প্রসঙ্গে একটা বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে নামোপাড়ায়। সূত্রধর সমাজের প্রবীণদের কথায় পুরুষানুক্রমে মূর্তি গড়াই তাঁদের কাজ। তাঁদের ইষ্ট দেবতা হলেন বিশ্বকর্মা। তাঁর পুজো হয় ভাদ্রমাসের শেষে। বিশ্বকর্মার পুজো চলার সময় নিজেদের যন্ত্রপাতিকে বিশ্রামে পাঠিয়ে দেন তাঁরা। কিন্তু সেই সময় চলে আসে বাঙালির সব থেকে বড় উৎসব দুর্গাপুজো। দশভূজার মূর্তি নির্মাণ করার জন্য তাই প্রচণ্ড ব্যস্ত হয়ে যান সূত্রধরা। স্বাভাবিক ভাবেই যন্ত্রপাতিগুলিকে বসিয়ে রাখা এসময় অসম্ভব। বাধ্য হয়ে তাই নমঃ নমঃ করে সেই সময় বিশ্বকর্মার পুজো করতে হত তাঁদের।
এই ভাবে পুজো করাটা মন থেকে মেনে নিতে পারেননি তাঁদের পূর্ব পুরুষরা। তাঁরাই একদিন সবাই মিলে বসে ঠিক করেন অন্ত্যন্ত নিষ্ঠা ও ভক্তির সঙ্গে করতে হবে দেব কারিগরের আরাধনা। সেই মতো ঠিক হয় শ্রীপঞ্চমী তিথিতে চারদিন ধরে হবে এই পুজো। তারপর থেকেই এই বিশ্বকর্মা পুজোয় চারদিন নিজেদের কাজ বন্ধ রাখেন সূত্রধর সমাজ। পুরুলিয়া শহরের ছুতোর পাড়ায় কাঠের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন বেশিরভাগ পরিবার। এই চারদিন ধরে উৎসবে মেতে ওঠেন তাঁরা। এই কটা দিন সকাল সন্ধ্যা মন্দির চত্বরে ভিড় জমান গ্রামবাসীরা। এখন এই পুজোর কথা প্রচারিত হয়েছে দূর দূরান্তে। বাইরে থেকেও বহু মানুষ আসেন এই অকাল বিশ্বকর্মা দর্শনে। একই ভাবে ঝালদার আনন্দবাজার সূত্রধর বিশ্বকর্মা পুজো কমিটিও এই সময় বিশ্বকর্মার পুজো করে থাকেন। ঝালদার অন্যতম বড় আকর্ষণ হল এই পুজো। অনেকেই বলেন শ্রীরামচন্দ্র অকাল বোধন করে বসন্তকালের দেবী দুর্গার পুজো করেছিলেন শরৎকালে। সেই পুজোই আজকে বাঙালির সব থেকে বড় পার্বণ।
পুরুলিয়ার সূত্রধর সমাজও অকাল বোধন করেন দেব কারিগরের। বাস্তবেই এই পুজো এক ব্যতিক্রম।