পুরুলিয়া: ভোট মঙ্গলে (West Bengal Assembly Election 2021) পুরুলিয়ায় (Purulia) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রে তিন সভা রয়েছে তাঁর। পারা বিধানসভার সগড়কা মাঠে প্রথম সভা করছেন নেত্রী। বিজেপিকে বিঁধতে বদ্ধপরিকর নেত্রী। দিচ্ছেন এক গুচ্ছ কর্মসংস্থান ও শিল্পে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি। পারার সভা থেকে নেত্রী বললেন, “আমরা ডবল টিচার রিক্র্যুট করব, যাতে আরও অনেক শিক্ষক নিয়োগ হয়। আমরা চিকিৎসক নেব. আমরা প্যারা মেডিক্যাল স্টাফ নেব, নার্স নেব, একশো দিনের কাজ বাড়াব। ” দেখে নিন এক নজরে নেত্রী কী কী বললেন…
ভোট লুঠ করতে এলে হাতা খুন্তি নিয়ে তাড়া করুন। বিজেপি ভোটারদের বাদ দেওয়ার ছক কষছে। পাঁচ বছর কষ্ট করার থেকে এক দিন কষ্ট করব আমরা।
১৮ বছরের পর বিধবাদের এক হাজার টাকা করে ভাতা। আগামী দিনে বাংলা সবাইকে চাকরি দেবে। বাংলা কারোর কাছে ভিক্ষা করে না।
আমরা দাঙ্গা পুজো করি না। ওরা দাঙ্গা পুজো করে। এখানে ট্যুরিজম শিল্পকে ঢেলে সাজাব। ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেব। প্রথম সুদ আমরাই দিয়ে দেব। ট্যুরিস্ট আসবে, সে আপনার বাড়িতে থাকবে। হোম ট্যুরিজম। দার্জিলং, পুরুলিয়ায় করেছি। এখানেও ঢেলে সাজাবো।
অসমে ১৪ লক্ষ ছেলেমেয়ের নাম বাদ দিয়েছে। সেরকম আপনাদের ছেলেমেয়েদের নামও বাদ দিয়ে দেবে। বলবে ওরা ভোটার নয়। ওদের বাইরে থেকে নিয়ে আসুন। এখানে কাজের অভাব হবে না। বিনা পয়সা পাঁচ কেজি চাল ডান পান। আমি একা জিতলে তো হবে না, প্রার্থীরা না জিতলে হবে কী করে? কোন প্রার্থী ভাল, কোন প্রার্থী খারাপ, তা দেখার আপনাদের দরকার নেই। আমি দেখে নেব। আমি স্বপনকে বকেছিলাম। জানি আদিবাসীদের টিলা নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। আমি কলকাতায় বসে থাকলেও কোথায় কী হচ্ছে আমি জানি।
সব তুলে দিতে চাইছে ওরা। তাহলে মানুষ খাবে কী? বিজেপির মাথা চিবোলে তো আর খাবার জুটবে না মানুষের! আর মাথা চেবানো যায়ও না, এটা ভুল। আগেও বলেছিল। এমপি জিতিয়ে নিয়ে গেল। সেই এমপি এলাকায় এক দিনও এসেছে? সে জামসেদপুরে গিয়ে বসে আছে। জয়পুরের আমাদের একটা প্রার্থী বাতিল করে দেওয়া হল। ছোট্ট ভুলে বড় ভুল।
স্বপন বেলতোড়িয়ায় প্রার্থী হল কি না হল, ভুলে যান। স্বপন বেলতোড়িয়ার ম্যাটার নয়, যদি আপনারা চান সরকারটা আমি তৈরি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাহলে ভোটটা জোড়া ফুলে দিতে হবে। আমি জানি আদিবাসীদের কিছু সমস্যা ছিল। আপনারা যা বলবেন, সেটাই হবে।
ত্রিপুরা, অসমের ইস্তাহার নিয়ে আসুন বিজেপি-র। বলেছিল সব শিক্ষককে স্থায়ী চাকরি করে দেবে। ১০ হাজারকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দিয়েছে। কিছুই হয়নি। ইস্তেহারে বলবে, করবে না, মিথ্যে কথা বলে বেড়াচ্ছে।
ছোটো মেয়েদের বলছে গাড়িটা চালাবে। একটা গাড়ি দিয়ে বলছে পাঁচ জন মিলে চালাও। তারপর ভোট মিটলে কী হবে? একমাস পর তো পগারপার। ঝাড়খণ্ডে হেরেছে, এখানেও হারবে।
এটা দিল্লির সরকার নয়। আগেরবার পুরুলিয়ার এমপি জিতল। জিতে পালিয়ে গেল। আমি একটা ভিডিয়ো দেখছিলাম, ঝাড়গ্রামের প্রার্থী বলছে, ভোটের আগের দিন আসিস, টাকা দিয়ে দেব। ভোটের খরচ দিয়ে দেব। নির্বাচনের আগে টাকা দিয়ে বলবে, বিজেপি-কে ভোট দে। এটা সাধারণ মানুষের টাকা। বিজেপি-কে বলবেন, কোটি কোটি টাকা চুরি করেছিস। আর দিচ্ছিস তো মোটে ৫০০ টাকা। টাকা দিয়ে ভোট দেবেন না। ভোটের একমাস বাদে পগার পার, তারপর আর পাত্তা পাওয়া যাবে না।
৫ লক্ষ কোটি টাকা ইনভেস্ট হবে স্মল স্কেল ইন্ডাস্ট্রির জন্য। ৫ লক্ষ ছেলেমেয়ের চাকরি হবে। মাটির সৃষ্টি প্রকল্পে কয়েক কোটি ছেলেমেয়ের কর্ম সংস্থান। ৫০ শতাংশ বেকারি কমাব। দারিদ্রতা ৩৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। আমরা এটাকে ৫ শতাংশ করে দেবো।
আমরা ডবল টিচার রিক্র্যুট করব, যাতে আরও অনেক শিক্ষক নিয়োগ হয়। আমরা চিকিৎসক নেব. আমরা প্যারা মেডিক্যাল স্টাফ নেব, নার্স নেব, একশো দিনের কাজ বাড়াব। সব বাড়িতে আজলের ব্যবস্থা নেব। ৭৫ শতাংশ ইউনিট বিদ্যুৎ যারা নেয়, তাদের ভাড়া দিতে হয় না। আগামী দিনেও সুলভে বিদ্যুৎ করে দেব।
ওরা ভেবেছিল আমাকে কাবু করবে। ওরা জানে না আমি ভাঙি তবু মোচকাই না। শিক্ষার জন্য ক্রেডিট কার্ড, জামিন ছাড়াই। মহিলাদের হাতে টাকা। আরও মেডিক্যাল কলেজ তৈরি হবে। ১০০ দিনের কাজকে আরও বাড়িয়ে দেওয়া হবে। বিনা পয়সায় খাদ্য দেওয়া হবে। অগাস্ট সেপ্টেম্বরে দুয়ারে সরকার হবে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করে নেবেন। ৫ লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে। তফশিলিদের জন্য ৬০ বছরের উপরের মানুষরা পাচ্ছেন ১ হাজার টাকা করে। ১৮ বছর বয়সেও বিধবা হলে বিধবা ভাতা পাবেন।
কোথায় গেলো ১৫ লক্ষ টাকা? আপনারা অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে পেয়েছেন? ওরা বিশ্বাসঘাতকের দল, গদ্দারের দল। ওরা দানবদের দল, দস্যুদের দল। উত্তরপ্রদেশে দেখুন এসসি, এসটির ওপর কী অত্যাচার চলছে।
আমার কাছে খবর আছে মণ্ডল কমিশনে যাদের নাম ছিল, ভারত সরকার সেগুলো বাংলায় ওবিসিতে অনুমতি দেয়নি। আগামী দিনে আমরা করে দেব। বিজেপি আদিবাসীদের জমি কেড়ে নিয়েছিল। আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি। এখানে মানভূমি, কুর্মি অ্যাকাডেমি হয়েছে। বিজেপির লোকেরা এসে অন্য একটা লোকের গলায় মালা দিয়ে চলে যায়। বীর কানহার মূর্তি ভেঙে দিয়ে চলে যায়। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে দিয়েছে। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ডিএনএ টেস্টের কথা বলে। বিজেপিতে মেয়েদের সম্মান নেই।
পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, মেদিনীপুরের কিছু জায়গা নিয়ে আমরা মাটির সৃষ্টি প্রকল্প করছি। মাটিতে আমরা শস্য ফলাব। তাতে দেখবেন একশো দিনের কাজ দুশো দিনের হয়ে যাবে। অনেক মানুষ কাজ পাবেন। এখন এখানে অনেক রাস্তা তৈরি হয়েছে। আগে পুরুলিয়া আসতাম, মা-বোন ভাইদের মুখ শুকিয়ে গিয়েছে মাওবাদীদের ভয়ে। আজ পুরুলিয়া শান্তিতে আছে।
আমরা জল স্বপ্ন প্রকল্প করছি। পুরুলিয়ায় অনেক খরা জমি রয়েছে। সেখানে সেচ হয় না। আমরা ২৫ হাজার হেক্টর জমি বেছে নিয়েছি। সেখানে কোনও চাষ হত না। সেই জমিগুলিতে ৫৮ হাজার কোটি টাকা খরচ করে জল স্বপ্ন প্রকল্প করছি। পাশাপাশি মাটির সৃষ্টি প্রকল্পের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান করে দেব। জল কষ্টের হাত থেকে বাঁচতে। নেতুড়িয়া সহ দশটি ব্লকে সোলার বেস্ড পানীয় জল সরবরাহ করা হয়েছে।
১০ বছরে এই অঞ্চলে এসেছে উন্নয়নের জোয়ার। এলাকার কাঠামো পাল্টে গিয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতি হয়েছে। অনেক রাস্তা তৈরি হয়েছে। এখানে দীর্ঘদিনের সমস্যা ছিল পানীয় জলের। পারা, রঘুনাথপুর অঞ্চলে তিনটে পানীয় জল প্রকল্প হয়েছে। বসানো হয়েছে ৩৩ হাজার টিউবওয়েল। যখন ক্ষমতায় আসি এই জেলায় মাত্র ১৯ শতাংশ লোক জল পেত। আজ ১৫০ কোটি টাকা দিয়ে ১৯ টা প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। জাইকা জল প্রকল্প, আমরা সাত বছর ধরে চেষ্টা করছি, এটা জাপান সরকারেপ সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চুক্তি অনুযায়ী ২ বছরের মধ্যে করার কথা ছিল। ওরা সময় নিয়েছে। ২২ সালের মার্চ মাসের মধ্যে ৫টি ব্লক ও মিউনিসিপ্যালিটি এলাকায় ৮ লক্ষ মানুষ জলের কানেকশন পাবেন।