Kali Puja: ধস-গ্যাস-আগুন থেকে রক্ষা করেন সিঙ্গারণ কালী

Chandra Shekhar Chatterjee | Edited By: Sukla Bhattacharjee

Nov 12, 2023 | 12:11 AM

Singaron Kali: গ্রামবাসীরা জানান, কালীপুজো যেখানে হয়, সেই বেলবাঁধ লাগোয়া খোলামুখ খনি রয়েছে। সেই খনিতে আগুন লাগলে বা ধস নামলেও কখনও মন্দিরের কোনও ক্ষতি হয়নি। এলাকায় ফাটল ধরেছে, মাঝে মাঝে আগুন বের হয়, কিন্তু সিঙ্গারণ কালী মন্দির চত্বরে তার এতটুকু আঁচ পড়েনি। এর থেকেই এই পুজোকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীদের বিশ্বাস-ভরসা আরও বেড়ে গিয়েছে।

Kali Puja: ধস-গ্যাস-আগুন থেকে রক্ষা করেন সিঙ্গারণ কালী
আসানসোলের ডাকাত কালী পুজো।

Follow Us

আাসনসোল: এক সময়ে ডাকাত ভবানী পাঠক এই জঙ্গলে ডেরা বেঁধেছিলেন। তখনই একদিন দেবী কালী নাকি তাঁকে স্বপ্নে আদেশ দেন, ওই জঙ্গলে উইঢিবিতে অধিষ্ঠান করছেন তিনি। তাঁর যেন পুজো করা হয়। সেই স্বপ্নাদেশের পর থেকেই সেখানে কালীপুজোর (Kali puja) শুরু। লোকশ্রুতি অনুযায়ী, জামুড়িয়ার তপসী জঙ্গলের ওই পুজো ভবানী পাঠকের কালী নামেই পরিচিতি। সিঙ্গারণ নদীর ধারে বলে অনেকে আবার এটিকে সিঙ্গারণ কালীপুজো বলেন। প্রায় ২৫০ বছর পার করেও রমরমিয়ে চলছে জামুড়িয়ার সিঙ্গারণ কালীপুজো। এই পুজোকে কেন্দ্র করে মেলা বসে। জেলার সর্বত্র এমনকি ভিন জেলা থেকেও বহু মানুষ এই কালীপুজোর মেলায় আসেন। কার্যত মিলনমেলায় পরিণত হয় এই পুজো।

স্থানীয়রা জানান, ১৯৬৮-৬৯ সাল পর্যন্ত জঙ্গল ঘেরা ওই কালী-স্থানে পুজো করতে যেতেন তাঁদের বাবা-কাকারা। তখনও ডাকাতদলকে তাঁরা দেখেছেন। রাতে কালীপুজোর পর পাঁঠাবলি দিয়ে ভোগ খেয়ে ডাকাতদল ডাকাতি করতে যেতেন। গ্রামবাসীরা জানান, কালীপুজো যেখানে হয়, সেই বেলবাঁধ লাগোয়া খোলামুখ খনি রয়েছে। সেই খনিতে আগুন লাগলে বা ধস নামলেও কখনও মন্দিরের কোনও ক্ষতি হয়নি। এলাকায় ফাটল ধরেছে, মাঝে মাঝে আগুন বের হয়, কিন্তু সিঙ্গারণ কালী মন্দির চত্বরে তার এতটুকু আঁচ পড়েনি। এর থেকেই এই পুজোকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীদের বিশ্বাস-ভরসা আরও বেড়ে গিয়েছে। তাঁদের বিশ্বাস, ধস, গ্যাস, আগুন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে গ্রামবাসীদের রক্ষা করেন কালীমাতা সিঙ্গারণ। তাই বেলবাঁধ, জোরজোনাকি, তপসী, সিঙ্গারণ গ্রামের বাসিন্দারা কালীপুজোর রাতে সিঙ্গারণ কালী মন্দিরে ভিড় জমান। মহাধূমধাম করে হয় পুজো।

বর্তমানে সিঙ্গারণ কালীপুজোর দায়িত্বে রয়েছেন তপসী গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। পরিবারের সদস্য সুবল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আগে উইঢিবিটি অপরাজিতা গাছে ঢাকা থাকত। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার পুজোর দায়িত্ব নেওয়ার পরে সেখানে মন্দির তৈরির পরিকল্পনা করে। কিন্তু দেবী স্বপ্নাদেশ দেন, কোনও ঘেরা জায়গায় তাঁর পুজো করা যাবে না। এরপর থেকেই চার দিক খোলা আটচালার মন্দিরে পুজো হয়ে আসছে। সুবলবাবু জানান, পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে তাঁরা জেনেছেন, উইঢিবি পরিষ্কার করতে গিয়ে তাঁদের পরিবারের একজন তিনটি পিতলের চোখ ও একটি কাঠের পাদুকা পান। উইঢিবির পাশে মাটির বেদিতে তা আজও রাখা আছে।

এই কালী পুজোকে ঘিরে আরও একটি জনশ্রুতি রয়েছে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সিঙ্গারণ কোলিয়ারি চালু করতে এসে ১২ হাত লম্বা চুল পায়। অলৌকিক এই ঘটনা দেখে সেখানে কয়লা খাদান না করে ৫০০ মিটার দূরে কোলিয়ারি চালু করেন কোম্পানির প্রতিনিধিরা। স্বাভাবিকভাবেই সিঙ্গারণ কালীপুজোর শিকড় ইতিহাসের গভীরে। ফলে এই দেবীর উপর গ্রামবাসীর অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা।

Next Article