ভাঙড়: আরাবুলহীন ভাঙড়ে কোন পথে তৃণমূল? প্রতিবন্ধকতা ভুলে মুখ খুলছেন পুরনো তৃণমূল-কংগ্রেসের নেতারা! নতুন তৃণমূল চায় আরাবুলের মুক্তি! তবে কি আরাবুল ইসলাম গ্রেফতার হতেই দলের মধ্যে নবীন-প্রবীণ বিভাজন? সেই প্রশ্ন ফের উঠছে। আরাবুল ইসলাম গ্রেফতার হতেই মুখ খুলছে তৃণমূল পুরানো নেতারা। এই যেমন মুখ খুললেন বর্ষীয়ান তৃণমূল কংগ্রেস নেতা হাবিবুর রহমান বিশ্বাস। তিনি বলেন, “আরাবুল ইসলাম গ্রেফতার হয়েছে। দুঃখজনক! এবার শুভ বুদ্ধির উদয় হোক!” তিনি আরও বলেন, “পুরানো লোক যারা আছে তাঁদের ডেকে যদি এক মঞ্চে হাজির করা যায় তাহলে ভাঙড় ২ ব্লকে সাংগঠনিকভাবে কিছুটা রিকভারি হবে। দলে উপযুক্ত সম্মান না পাওয়ার জন্য আজ অনেকে অন্য দলে চলে গিয়েছে।” হাবিবুর রহমান বিশ্বাস ভাঙড় ২ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের একসময়ের সহ-সভাপতি ছিলেন। তাঁর স্ত্রী আমিনা বিবি বেগম বিশ্বাসও ২০০৮-২০১৩ সালে ভাঙড় ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছিলেন।
কী বলছে ‘নতুন’ তৃণমূল?
অন্যদিকে আরাবুল আরাবুল ইসলাম ঘনিষ্ট বলে পরিচিত ওহিদুল ইসলাম সহ অনেক নেতাই প্রকাশ্যে বলছেন, আরাবুলকে মিথ্যা কেসে আটকে রাখা হয়েছে। অবিলম্বে তাঁর মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। পানি ছাড়া যেমন মাছ বাঁচতে পারে না আরাবুল ইসলাম ছাড়া ভাঙড়ের মানুষ বাঁচতে পারে না।
দলের এমন সময় আরাবুলহীন ভাঙড়ে লোকসভায় ৫০ হাজার ভোটের লিড দেওয়ার কথা বলছেন আরাবুল ইসলাম বিরোধী হিসাবে পরিচিত তৃণমূল কংগ্রেস নেতা খাইরুল ইসলাম। তবে কী আরাবুল ইসলাম ছাড়াই ভাঙড়ের লোকসভা ভোটের বৈতরনী পার হতেই কি প্রস্তুতি শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস? যেখানে দায়িত্বে থাকবেন ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকাত মোল্লা? সেই প্রশ্নই তুলে দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস এই নেতার বক্তব্য। আগামী ৩ মার্চা বিরাট জনসভার ডাকও দিয়েছেন শওকাত মোল্লা।
এমন পরিস্থিতিতে শওকাত মোল্লা বলছেন, আইন আইনের পথে চলবে। বেল কীভাবে হয় চেষ্টা করব। যদিও বিরোধীরা বলছে, আরাবুল জেলে যেতেই ফের দ্বন্দ্ব বাড়ছে তৃণমূল নেতাদের মধ্যে। কেউ কেউ ক্ষমতা দখল করতে চাইছে। সরাসরি শওকতের মাধ্যমে দল চালাতে চাইতে চাইছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা, বলছেন সুজন চক্রবর্তী, জমি কমিটির সম্পাদক মির্জা হাসানেরা।
ভাঙড়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন নয়
যদিও ভাঙড়ে তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের ছবি নতুন নয়! রাজ্যে পালাবদলের সময় থেকেই এই ছবি দেখা যাচ্ছে। ২০১১ সালে আরাবুল ইসলাম ভাঙড় বিধানসভা থেকে তৃণমূলের কংগ্রেসের প্রার্থী হলে নির্দল থেকে প্রার্থী হন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা নান্নু হোসেন। সারা রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় এলেও ভাঙড়ে আরাবুল ইসলাম বিধানসভা ভোটে হেরে যান। কারণ হিসাবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথাই শোনা যায়।
২০১৬ ভাঙড় বিধানসভায় তৃণমূলের টিকিট পায় একসময়ের দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার দাপুটে সিপিআইএম নেতা আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। আরাবুল ইসলাম রেজ্জাক মোল্লার বিরোধিতা করে আব্দুর সালাম মোল্লা ওড়ফে রাজুকে নির্দলে প্রার্থী করেন। যদিও সেবার রেজ্জাক মোল্লা বিধানসভা ভোটে জিতে রাজ্যের মন্ত্রী হন। সেই সময়েও প্রকাশ্যে এসেছিল তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছবি।
২০২১ সালে ও আরাবুল ইসলাম বিধানসভার টিকিট পায়নি। তৃণমূলের হয়ে প্রার্থী হন রেজাউল করিম। নওশাদ সিদ্দিকীর কাছে হারেন রেজাউল। তারপর রেজাউল ও আরাবুল গোষ্ঠীর মধ্যে বারেবারে মতপার্থক্য দেখেছে ভাঙড়বাসী। এদিকে সামনেই লোকসভা ভোট। ঝাঁঝ বাড়াচ্ছে আইএসএফও। ঝাঁঝ বাড়াচ্ছে অন্যান্য বিরোধী দলেরাও। এমতাবস্থায়, ভাঙড়ে বাজিমাত করতে শাসক কী কৌশল নেয় সেদিকে নজর রাজনৈতিক মহলের।