দক্ষিণ ২৪ পরগনা: দুয়ারে সরকারের শিবিরেই (Duare Sarkar) বসেছে জেরক্স মেশিন। ১০ টাকা দিলেই হাতে হাতে মিলছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম! এদিকে, শিবিরে বসে রয়েছেন খোদ সরকারি আধিকারিক! তাঁর সামনেই এমন ঘটনা! হেসেই দুর্নীতির অভিযোগ ওড়ালেন সেই সরকারি অফিসার! চাঞ্চল্যকর এই ছবি কুলতুলির দুয়ারে সরকার শিবিরের। বৃহস্পতিবার দুয়ারে সরকার শিবিরের এমন ছবি সামনে আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।
অভিযোগ, কুলতুলি ব্লকের কৈখালী-গোপালগঞ্জের একটি স্কুলে বৃহস্পতিবার দুয়ারে সরকারে Duare Sarkar) শিবির শুরু হয়। ওই শিবিরে উপস্থিত ছিলেন সরকারি আধিকারিকরা। তাঁদের সামনেই আনা হয় জেরক্স মেশিন। অভিযোগ, জেরক্স মেশিন থেকে লক্ষ্মীর ফর্মের ফোটোকপি করে সেই জাল ফর্ম ১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। সেই ফর্মই পূরণ করে শিবিরে জমা দিচ্ছেন সকলে।
ফর্ম নিতে আসা টুসি মণ্ডল নামে এক আবেদনকারীর কথায়, “আমরা নিয়ম মেনেই ক্যাম্পে এসেছি। এসে শুনছি ফর্ম নেই। ১০ টাকা দিলে ফর্ম পাওয়া যাবে। তাই ১০ টাকা দিয়ে ফর্ম তুলেছি। এছাড়া আর কী করব! অফিসাররাও কিছু বললেন না। ফর্ম ভরে জমা দেওয়ায় হয়ে গিয়েছে।” ভগবতী সাঁফুই নামে অন্য এক আবেদনকারী বলেন, “এত লাইন হচ্ছে যে ফর্মই পাচ্ছি না। তাই ওই ছাপানো ফর্ম নিচ্ছি। ১০ টাকা দিলেই ফর্ম মিলছে। ক্যাম্প থেকে বলা হচ্ছে ফর্ম নেই। ফর্ম ভরতে গেলে টাকা দিতে হবে। সেইমতোই আমরা ফর্ম কিনে নিয়ে ভরে জমা দিচ্ছি।”
কিন্তু, সরকারি আধিকারিকের সামনেই কীভাবে হয়ে চলেছে এই দুর্নীতি? যদিও, সেই অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়ে শিবিরে উপস্থিত সরকারি আধিকারিক বিশ্বজিত্ হালদার অল্প হেসে বলেন, “কী আর করা যাবে! ফর্ম কম সংখ্যায়। যা আছে আর যা আবেদনকারী, তাতে এই কটা ফর্মে কুলোবে না। তাই এই ব্যবস্থা।” প্রশ্ন উঠছে, সরকারি আধিকারিক হয়ে কীভাবে এ হেন গা-ছাড়া মনোভাব পোষণ করতে পারেন কেউ? এমনকী প্রশ্রয় দিতে পারেন দুর্নীতিকেও? পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে পঞ্চায়েতের ভূমিকা নিয়েও।
যদিও, তৃণমূল উপপ্রধান এই ঘটনায় বলেন, “আমরা বিষয়টি আগে জানতাম না। কিছু আবেদনকারীর থেকে ব্যাপারটা জানতে পেরেই ব্লক উন্নয়ন আধিকারিককে জানিয়েছি। আশা করছি তিনি দ্রুত পদক্ষেপ করবেন। এখানে আমাদের এর চেয়ে বেশি কিছু করার নেই।” পাল্টা বিজেপির জেলা সভাপতি বলেন, “কুলতুলিতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম আগেও বিক্রি করা হয়েছে। আমরা বলেও কোনও লাভ হয়নি। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে কোনও মা-লক্ষ্মী টাকা পাবেন না। সব তৃণমূলের পেঁচারাই খেয়ে নেবে। বাংলায় এখন চুরি ছাড়া কিছু হয় না। তৃণমূলের গুন্ডাদের হাতে এভাবেই রাজ চলছে, চলবে যতদিন ওরা ক্ষমতায় থাকবে।”
উল্লেখ্য, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পে ‘দুর্নীতি’ এই প্রথম নয়। সরকারিভাবে প্রকল্প চালু হওয়ার কথা ঘোষণার পর থেকেই ধূপগুড়ি, মালদা-সহ একাধিক এলাকায় এই দুর্নীতির ছবি সামনে এসেছে। এমনকী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম তুলতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়েছেন এই ছবিও ধরা পড়েছে। কোথাও বা প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে মোটা টাকা নেওয়ার অভিযোগও সামনে এসেছে। সম্প্রতি, বিজেপি রাজ্য় সভাপতি দিলীপ ঘোষ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে বলেছেন, “বাংলার মানুষকে ভিখারি বানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ৫০০ টাকার জন্য মানুষ লাইনে দাঁড়াচ্ছে। মারপিট করছে। পদপিষ্ট হচ্ছে।”
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে যাতে কোনওরকম দুর্নীতি না হয়, তার জন্য় প্রথম থেকেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুয়ারে সরকারের শিবির কোনও দলীয় কার্যালয়ে করা যাবে না কেবল নয়, শিবিরের আশেপাশে কোনওরকম দলীয় নেতৃত্বও উপস্থিত থাকতে পারবেন না বলে আগেই নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে, টাকা নেওয়া তো দূরের ব্যাপার। কেউ যদি এ ধরনের কাজ করে থাকেন তবে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে পিছপা হবে না সরকার এমনটা আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্য়মন্ত্রী।
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ফর্ম নিয়ে যাতে কোনও জালিয়াতি না হয়, তারজন্য়েও বিশেষ পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্য়মন্ত্রী স্পষ্টই বলেন, “দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য কাউন্টার থাকবে, সবার প্রথম সেখানে যেতে হবে। সেখানে গেলেই একটি ফর্ম পাওয়া যাবে। সেই ফর্মে একটি নির্দিষ্ট নম্বর থাকবে। সেই নম্বরের রেকর্ড সরকারের কাছেও থাকবে।” মুখ্যমন্ত্রী জানান, “এই ফর্ম কোনও ভাবে জেরক্স বা ডুপ্লিকেট করা যাবে না। এই ফর্ম ছাড়া অন্য কোনও ফর্ম নেওয়াও হবে না। কেউ যাতে এই ফর্মের অপব্যবহার করতে না পারে তার জন্যই এই ব্যবস্থা।”
মমতা আরও জানান, ফর্মের সঙ্গেই কম্পিউটার জেনারেটেড ইউনিক নম্বর থাকবে। তার সঙ্গে আধার কার্ডও লিঙ্ক করে দেওয়া হবে। এই নম্বরটাই ফর্ম ফিলাপের জন্য স্বীকার্য হবে। ঘুরপথে যদি কেউ অন্যভাবে ফর্ম জোগাড় করে তা জমা দেওয়ার চেষ্টা করে, তা মেনে নেওয়া হবে না। শুধুমাত্র দুয়ারে সরকার শিবির থেকেই ফর্ম নিতে হবে। তারপরেও কী করে চলছে এই নকল ফর্ম বিলি? যদিও এ বিষয়ে এখনও নীরব জেলা প্রশাসন।
দেখুন ভিডিয়ো:
আরও পড়ুন: ‘অবিবেচক মুখ্যমন্ত্রী’, দুয়ারে রেশন প্রকল্প বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ ডিলারদের