সোনারপুর : ছোটবেলা থেকেই সেলাইয়ের কাজে ঝোঁক। উৎসাহ দিতেন মা। কিন্তু, দশম শ্রেণিতে পড়তে পড়তেই জীবনে নামে বড় বিপর্যয়। মারা গিয়েছিলেন বাবা। মা ও পাঁচ বোনের সংসারে নামে দারিদ্রের অন্ধকার। তবে সেই দারিদ্রকে সঙ্গী করেই নেমেছেন জীবন যুদ্ধে। কথা হচ্ছে সোনারপুরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রীতিকনা গোস্বামীকে নিয়ে। পরবর্তীতে তাঁর নেশাকেই তিনি করেছেন পেশা। তিনিই এবার পাচ্ছেন পদ্মশ্রী পুরষ্কার (Padma Shri Award)। ছোটবেলাতেই প্রথম অর্ডার পেয়েছিলেন পীতাম্বরি নামে একটি সংস্থার কাছ থেকে। সেই শুরু। তারপর চলেছেন দীর্ঘপথ। কাজ মাথায় নিয়েই করেছেন পড়াশোনা, হয়েছে বিয়ে। তবে থেমে থাকেনি সেলাইয়ের কাজ। এরইমধ্যে রপ্ত করে ফেলেছেন নকশিকাঁথায় সেলাইয়ের একাধিক নতুন কায়দা।
১৯৯০ সালে ওয়েস্টবেঙ্গল ক্রাফট কাউন্সিল থেকে নকশিকাঁথার কাজের অর্ডারও পান। সেই কাজ করে কুড়োন অনেক প্রশংসাও। পরের বছরই নকশিকাঁথার কাজ শেখানোর একটি সেন্টারও খোলা হয়। নাম দেওয়া হয় কমলাদেবী কাঁথা সেন্টার। যা আজও চলছে। যার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। ২০০১ সালে তিনি তাঁর কাজের জন্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল কালাম আজাদের কাছ থেকে জাতীয় পুরষ্কারও পান। এবার তাঁর হাতেই উঠতে চলেছে পদ্মশ্রী পুরষ্কার। এমনকী তিনি কাজ শেখানোর জন্য কোনও পারিশ্রমিকও নেন না। কাজ শেখাতে গিয়েছেন বিদেশেও। এর আগে তার কাকা পণ্ডিত নিখিল ঘোষ গানের জন্য পদ্মভূষণ পেয়েছিলেন। তাঁরই ভাইঝিও এবার পেতে চলেছেন পদ্ম পুরষ্কার। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই বিদেশ থেকেও তাঁর কাজের প্রশংসা করা হয়েছে। প্রীতিকনা দেবীর পদ্ম পুরষ্কার পাওয়ার খবরে খুশির হাওয়া সোনারপুরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। উচ্ছ্বসিত তাঁর প্রতিবেশীরাও।
খুশি ওই ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা লক্ষ্মী সাহাও। প্রীতিকনা দেবীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ তিনি। বলেন, “আমাদের সঙ্গে খুবই ভাল সম্পর্ক। খুব ভাল ব্যবহার ওনার। একদম ঘরের লোকের মতো মেশেন। এখন তো শুনছি উনি পদ্মশ্রী পাচ্ছেন। এতো খুবই খুশির খবর। উনি তো দিনের বেশিরভাগ সময় কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। বাড়িতে মেয়েরা সেলাইয়ের কাজ শিখতে আসেন। তারমধ্যেও উনি সময় পেলেই আমাদের সঙ্গে গল্প করেন।” আর এক বাসিন্দা সুমতি সাহা বলেন, “প্রীতিকনা কাকিমা তো খুবই ভাল মানুষ। নকশিকাঁথার বুনোনে ওনার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। তাঁর এই স্বীকৃতিতে খুবই খুশি হয়েছি আমরা। খবরটা শোনার পর থেকে খুব আনন্দ হচ্ছে। চেষ্টা থাকলে যে বয়সটা কোনও ব্যাপার নয় তা দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি। অনেক পরিশ্রমের ফসল তাঁর এই স্বীকৃতি।”