ডায়মন্ড হারবার: রাজ্যে নারী সুরক্ষা নিয়ে যখন গুচ্ছ-গুচ্ছ অভিযোগ উঠছে? ঠিক সেই সময় ভয়াবহ ঘটনার খবর প্রকাশ্যে। ডায়মন্ড হারবারে বিচারকের আবাসনে উঠল দুষ্কৃতী হামলার অভিযোগ। রায় পছন্দ না হওয়ায় দুষ্কৃতী হামলা বলে সন্দেহ বিচারকের। শুধু তাই নয়, আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য, পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে উঠল এই দুষ্কৃতীদের মদত দেওয়ার অভিযোগ। কলকাতা হাইকোর্ট ও জেলা জজ আদালতে চিঠি দিয়েছেন আতঙ্কিত বিচারক।
জানা গিয়েছে, বিচারকের একটি চিঠি জমা পড়েছে কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলেন কাছে। সংশ্লিষ্ট চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, ডায়মন্ড হারবারের বিচারক যে আবাসনে থাকেন, সেই আবাসনে রাত্রি এগারোটা থেকে সাড়ে এগারোটা নাগাদ মুখ ঢেকে কয়েকজন দুষ্কৃতী ঢোকে। বন্ধ করে দেয় বিদ্যুতের আলো। কার্যত তছনছ করা হয় আবাসন। এরপর বিচারক পুলিশে অভিযোগ জানাতে গেলে সেই অভিযোগ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে দাবি। সেই কয়েকজন পুলিশ আধিকারিকের নামও উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে।
বিচারকের এও অভিযোগ, পৈলান পুলিশ হেডকোয়াটারের কুমারেশ দাসের নির্দেশেই ওই দুজন আসে। তারা আবাসনের বিদ্যুতে কেটে দেবে বলে জানান। তাতেই বিচারক বাধা দেন। এরপর রাত্রিবেলা ফের আরও কয়েকজন আসে ও লুটপাট চালায়। সংশ্লিষ্ট চিঠিতে বিচারক এও উল্লেখ করেছেন, জেলা পুলিশের কাজে তিনি নিরাদপদ বোধ করছেন না। একই সঙ্গে তিনি এও উল্লেখ করেছেন, বেশ কিছু ক্ষেত্রে পকসো মামলায় তাঁর রায় সম্ভবত এই পুলিশদের পছন্দ হয়নি। সেই কারণেই তাঁর বাড়িতে এসে হামলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “আমি খুব বিস্মিত নই। আমি আগেও বলেছি নিম্ন আদালতের বিচারকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আমার জুনিয়র তিনি এখন বিচারক। আমায় জানিয়েছিলেন তাঁরা এখন আতঙ্কে আছে। সকালবেলা তিনি যখন মর্নিং ওয়াকে যান সেই সময় বাইকে চড়ে কয়েকজন এসে বলে সামলে চলবেন। অর্থাৎ দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে রায় দেওয়া হয় তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক এত নিবিড় যে বিচারকদেরও রেহাই নেই।” অপরদিকে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “একবার ভাবুন পশ্চিমবঙ্গের আতঙ্কের পরিবেশে সাধারণ মানুষের সঙ্গেই এবার আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন খোদ জেলা আদালতের বিচারকও! ‘ভাইপো’-এর মডেল সংসদীয় ক্ষেত্র ডায়মন্ড হারবারে রাতের অন্ধকারে বিচারপতি আবাসনে হামলার ছক কষা হয়েছিল। ইলেক্ট্রিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য মুখ ঢাকা দেওয়া অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। সবথেকে গুরুত্বপুর্ন বিষয়, এই ঘটনার সঙ্গে ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশের এক অফিসারের নামও উঠে এসেছে। কুমারেশ বিশ্বাস নামে এক অফিসার নাকি আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীদের ক্রমাগত চাপ দিয়েছিলেন ওই ব্যক্তিদের প্রবেশ করানোর জন্য। আতঙ্কিত হয়ে বিচারক কলকাতা হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার এর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তাঁদের সন্দেহ, যেহেতু বেশ কয়েকটি পকসো মামলায় রায় ঘোষণা করেছেন বিচারপতি তার জন্যই নাকি হামলার ছক কষা হয়েছিল।”