সোমবার কাকভোরে নামাজ পড়তে যাওয়ার পথে খুন হন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর থানার বামনগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি সইফুদ্দিন লস্কর। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,পাঁচ জন দুষ্কৃতীর ছোড়া গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তাঁর শরীর। পালানোর সময় একজনকে ধরে ফেলেন ক্ষিপ্ত জনতা। অভিযোগ, গণপিটুনির জেরে মৃত্যু হয় সাহাবুদ্দিন লস্কর নামে ওই অভিযুক্তের। এরপর থেকে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় সংশ্লিষ্ট গ্রামে। তৃণমূল নেতাদের দাবি, বিজেপি-সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই পরিকল্পনা মাফিক খুন করেছে তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিনকে। সূত্রের খবর, শার্প শুটার দিয়ে খুন করা হয়েছে তাঁকে।
সোমবার থেকে মঙ্গলবার (দুপুর ১টা) পর্যন্ত ঘটনাক্রম
ক) ভোরবেলা নমাজ পড়তে যাওয়ার সময় খুন হন তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর। অঞ্চল সভাপতি হওয়ার পাশাপাশি তিনি বামনগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের দলুয়াখাঁকি গ্রামের তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য।
খ) বাইকে করে পাঁচজন দুষ্কৃতী এসে গুলি করে অভিযুক্তকে। এমনটাই অভিযোগ। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন তৃণমূল নেতা। বাইকে করে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। ভোরবেলা এই গুলির শব্দে ছুটে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বাইকের পিছনে ধাওয়া করেন তাঁরা।
গ) অভিযোগ, বাইকে করে পালাতে গিয়ে অপর একটি বাইকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে অভিযুক্তদের দু’চাকার। মাঝ পথেই বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। ওদিকে থেকে আসা ক্ষিপ্ত জনতা সেই সময় পাকড়াও করে সাহাবুদ্দিন লস্কর নামে এক ব্যক্তিকে। বাইকে থাকা অপরজন চম্পট দেয়।
ঘ)ক্ষিপ্ত জনতার রোষের মুখে পড়ে সইফুদ্দিন। অভিযোগ, তাঁকে বেধড়ক মারধর করে জনতা। এমনকী মোবাইলে তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। ভিডিয়োয় দেখা যায়, সাহাবুদ্দিন বলেছেন, পাঁচজন মিলে খুন করেছে সইফুদ্দিনকে।
ঙ) ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় এক অভিযুক্তকে। তাঁর নাম সাহারুল শেখ।
চ) তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় চড়ে রাজনীতির পারদ। শাসকদল দাবি করে যাঁরা খুন করেছে সকলে তাঁরা সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতী। এই সন্দেহর বশে দলুয়াখাঁকি গ্রাম আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
ছ) সকাল ৭টা নাগাদ দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে গোটা গ্রাম। পুড়ে যায় বাড়িঘর, আসবাব, ধানের গোলা থেকে যাবতীয়। হাহাকার পড়ে যায় গ্রামজুড়ে। দমকলকে খবর দেওয়া হলেও প্রায় চার ঘণ্টা দেরীতে এলাকায় ঢোকে দমকল। কোনও উপায় না দেখে নিজেদের সম্বল বাঁচাতে গ্রামের মহিলা-শিশুরা বালতি করে পুকুর থেকে জল এনে ঢালতে থাকে।
জ) গ্রামবাসীদের দাবি, তাঁরা অভিযুক্তদের চেনেন না। তবে সিপিএম করেন বলেই তৃণমূলের দলবল তাঁদের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছেন। এমনকী, দমকলকেও গ্রামে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এমনকী খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
ঝ)ঘটনার দায় অস্বীকার করেছে সিপিএম। তাদের দাবি, তৃণমূলের দলীয় কোন্দলেই খুন হয়েছে সইফুদ্দিন। সেই দায় চাপানো হচ্ছে তাদের ঘাড়ে।
ঞ) মৃত সইফুদ্দিনের স্ত্রী সিপিএমকে দায়ী করলেও তাঁর বক্তব্যেও দলীয় কোন্দলের আভাস পাওয়া গিয়েছে। এমনকী অভিযুক্ত সাহাবুদ্দিনেরও স্ত্রীর দাবি, তাঁর স্বামী সিপিএম করতেন না।
ট) রাজনৈতিক সমীকরণ বলছে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওই এলাকায় নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায় তৃণমূল। সিপিএম-এর কোনও চিহ্নই নেই। তাহলে কীভাবে খুন? নিজেদের গোষ্ঠী কোন্দলের দায় এড়াতেই কি বাম শিবিরের মাথায় বন্দুক রাখছে শাসক দল? উঠছে প্রশ্ন