দক্ষিণ ২৪ পরগনা: রোখা গেল না অবশেষে। মৃত্যু এলই। ২৪ ঘণ্টা যুদ্ধের পরেও মৃত্যুর কাছে হার মানতে হল মৎস্যজীবী অমল দন্ডপাটকে। বাঘের হামলায় শনিবারই গুরুতর জখম হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, শেষরক্ষা হল না। হাসপাতালেই মৃত্যু হল ওই মৎস্যজীবীর (Fisherman)।
বেসরকারি ওই হাসপাতাল সূত্রে খবর, ওই মৎস্যজীবীর মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছিল। প্রাথমিকভাবে, তাঁর শুশ্রুষা করা হলেও ক্ষত সারেনি। অমলের মাথায় আর চোখেও আঘাত লাগে। ডানদিকের চোখ কার্যত খুবলে নিয়েছিল বাঘ। মাথার পেছনেও আঘাত লেগেছিল। এমন গুরুতর চোট সামলাতে পারেননি পঞ্চাশোর্ধ্ব অমল। শনিবার গভীর রাতে হাসপাতালেই মৃত্যু হয় ওই মৎস্যজীবীর।
শনিবার, কাঁকড়া ধরতে গিয়ে কুলতলিতে ফের বাঘের হামলায় জখম হন অমল। বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। কোনওরকমে বাঘের হাত থেকে বাঁচেন তিনি। ওইদিনই তাঁকে হাসপাতালে দেখতে যান প্রাক্তন সুন্দরবন মন্ত্রী কান্তি গাঙ্গুলী।
কান্তিবাবু বলেন, “সাতটা নাগাদ মৎসজীবীরা কাঁকড়া ধরতে যান। জলের ভিতরে ঘাপটি মেরেছিল বাঘটি। হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁর উপর। ওঁর সোয়েটার ছিড়ে গিয়েছে। তাঁর চোখে, মাথায় আর মুখে কামড়ে দিয়ে টানাটানি করতে থাকে বাঘটি। পরে লাঠি পেটা করে তাড়ানো হয় তাকে। ক্ষুধার্ত বাঘ খাবার না পেয়ে এই কাজ করেছে। বনদফতরের মানুষজন এখনও আসেননি। ওই ব্যক্তির দুটি চোখ হয়ত নষ্ট হয়ে যাবে। সরকারের উচিত এদের পরিবারগুলির পাশে দাঁড়ানো।”
এদিকে, বাঘের হামলায় জখম সজনেখালি বিটের অফিসার পার্থ হালদার। তাঁকে স্পিড বোটে গোসাবা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। গোসাবার গ্লাসখালি ও এমলিবাড়ি গ্রাম লাগোয়া নদীর চরে বাঘের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছেন বনকর্মীরা। সেই দলে ছিলেন বিট অফিসার পার্থ হালদারও। সেসময়ই আচমকা বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়ে। থাবা লাগে তাঁর গায়ে। আকস্মিকতার ঘোর কাটিয়ে ওঠার আগেই পার্থর শরীরের মাংস খুবলে নিয়ে পালিয়ে যায় বাঘ।
প্রসঙ্গত, ক্রমেই পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে গোসাবায়। আগে বাঘটি ছিল চরঘেরি এলাকায়। চার কিলোমিটার দূরে গ্লাসখালি ও এমলিবাড়ি গ্রাম লাগোয়া নদীর চরে বাঘটিকে শনিবার সকালে দেখতে পাওয়া যায়। সাতজেলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার একাধিক জায়গায় গ্রামবাসীরা বাঘের পায়ের টাটকা ছাপ দেখতে পেয়েছেন বলে জানান। বাঘের আতঙ্কে ঘুম উড়েছে গ্রামবাসীদের। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের বন কর্মীরাl ওই এলাকার বাসিন্দারা নতুন করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেনl এদিন সকালে প্রথমে সেখানকার মৎস্যজীবীরে নজরে পড়ে বাঘের পায়ের ছাপ।
শুক্রবার সকালে গোসাবা ব্লকের অন্তর্গত লাহিড়িপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গ্রামের বিধান কলোনিতে নতুন করে বাঘের আতঙ্ক ছড়ায়। চর এলাকায় একাধিক পায়ের ছাপ দেখতে পান তাঁরা। মৎস্যজীবীরাই গ্রামের দিকে থাকা গোমর নদীর চর ধরে এগোতে থাকেন। সেখানে পায়ের ছাপ দেখতে পান বলে দাবি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন বনকর্মীরাও।
বন দফতর গ্রামের দিকে নাইলনের জাল দিয়ে ঘিরে ফেলেন। যাতে নদী সাঁতরে আবার নিজের জঙ্গলে ফেরত যেতে পারে বাঘটি, সেই ব্যবস্থা করা হয়। সজনেখালি, বসিরহাট রেঞ্জের সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের আরও বন কর্মীরা সেখানে চলে যান। ছিলেন সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের উপ ক্ষেত্র অধিকর্তা জোন্স জাস্টিন। সকালে আবার অন্যত্র দেখা যায় বাঘের পায়ের ছাপ।
আরও পড়ুন: Siliguri Municipal Election: নির্বাচনে আদর্শ বিধি ‘ভেঙে’ জনসংযোগে গৌতম, কমিশনে নালিশ পদ্মের