Madrasah Result 2022: রুজি-রুটির জন্য গাছ কাটতে যেত, সেই ‘কাঠুরিয়া’ সাহারুল নিজের চেষ্টায় হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় চতুর্থ

Sonarpur: সোমবার সন্ধ্যায় সাহারুলের বাড়িতে যান ভাঙড় ২ ব্লকের বিডিও। তাঁর হাতে শুভেচ্ছা পত্র সহ আর্থিক অনুদান, শিক্ষা সামগ্রী তুলে দেন বিডিও কার্তিকচন্দ্র রায়।

Madrasah Result 2022: রুজি-রুটির জন্য গাছ কাটতে যেত, সেই 'কাঠুরিয়া' সাহারুল নিজের চেষ্টায় হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় চতুর্থ
সাহারুল ইসলাম (নিজস্ব ছবি)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 31, 2022 | 2:07 PM

ভাঙড়: সোমবার বেরিয়েছে হাই মাদ্রাসার রেজাল্ট। সফল ভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন একাধিক পড়ুয়া। অদম্য জেদ, নিয়মিত অধ্যাবসায় থাকলে একজন খেটে খাওয়া পড়ুয়া নিজেকে কোন জায়গায় নিয়ে যেতে পারে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ ভাঙড়ের সাহারুল ইসলাম। সাহারুল এলাকায় ছাত্র হিসেবে যত না বেশি পরিচিত তার থেকে বেশি পরিচিত কাঠুরিয়া হিসাবে। রুটি-রুজির জন্য বাবার সঙ্গে নিয়মিত গাছ কাটতে যায় সাহারুল। সেই ছাত্রই এবার হাই মাদ্রাসার বোর্ডের আলিম পরীক্ষায় ৮১৬ নম্বর পেয়ে রাজ্যে চতুর্থ হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যেই তাঁর এই সাফল্যের জন্য তাঁকে শুভেচ্ছা পত্র পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

সোমবার সন্ধ্যায় সাহারুলের বাড়িতে যান ভাঙড় ২ ব্লকের বিডিও। তাঁর হাতে শুভেচ্ছা পত্র সহ আর্থিক অনুদান, শিক্ষা সামগ্রী তুলে দেন বিডিও কার্তিকচন্দ্র রায়। সাহারুল বলেন, ‘এই সাফল্যের জন্য অনেক প্রতিবন্ধকতা পরোতে হয়েছে। কিন্তু তা আমাদের বুঝতে দেয়নি বাবা-মা। আমি অনেক কষ্ট করেছি। আমার টিউশনের শিক্ষকরাও অনেক সাহায্য করেছে।’

কাশীপুর থানার ভগবানপুরের পাকাপোল গ্রামের বাসিন্দা আবু তাহের মোল্লা। তিনি স্ত্রী ও পাঁচ ছেলেকে নিয়ে বসবাস করেন। গাছ কাটার কাজ করে কোনও রকমে অতিকষ্টে দিন গুজরান করেন। সংসারের হাল ধরতে তাই পড়াশোনার ফাঁকে মাঝে মধ্যেই বাবার সঙ্গে গাছ কাটতে যায় সাহারুল। তাঁরা পাঁচ ভাই অত্যন্ত মেধাবী।  প্রত্যেকেই পড়াশোনা করেন। ভাইদের মধ্যে ছোট সাহারুল। তাঁর ইচ্ছা, বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে উচ্চ শিক্ষা লাভ করে কলেজে শিক্ষকতা করার। কিন্তু সাধ থাকলেও সাধ্য নেই। এই অবস্থায় তাঁর ইচ্ছাপূরণ কীভাবে হবে তাই নিয়ে চিন্তায় পড়েছে পরিবার। সাহরুলের বাবা আবু তাহের মোল্লা বলেন, ‘আমি নিজে বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারেনি। পাঁচ ছেলে যাতে পড়াশোনা করে তাঁর জন্য সব রকম ভাবে চেষ্টা করছি।’

সাতুলিয়া ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট শেখ গোলাম মইনুদ্দিন বলেন, ‘সাহারুল ছোট থেকেই আমাদের মাদ্রাসার ছাত্র। ও অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। ওর উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে যাতে কোনও সমস্যা না হয় তার জন্য আমরা মাদ্রাসার পক্ষ থেকে সবরকম সহযোগিতা করব।’

অন্যদিকে, ঘুটিয়ারি শরিফের বাঁশড়ার বনমালীপুর আবু জাফরিয়া সিদ্দিকিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে এবার আলিম পরীক্ষা দিয়েছিল মহসিন সর্দার। সে এবার মাদ্রাসা বোর্ডের আলিম পরীক্ষায় রাজ্যের মধ্যে ৮১১ নম্বর পেয়ে ষষ্ঠ স্থান লাভ করেছে। বনমালীপুরের বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার সর্দারের ৬ মেয়ে ২ ছেলে। সামান্য সবজির ব্যবসা করে কোনও রকমে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সংসার সামলান। মহসিনের ইচ্ছা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে ডাক্তার হওয়া। কিন্তু বাধ সেধেছে আর্থিক অনটন। সংসারের হাল সামলাতে বাবার সঙ্গে তাঁর এক দিদি গৃহশিক্ষকতা করে ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ সামাল দেয়।

ভাল ফল করেছে ভাঙড়ের কালেরাইট মোহাম্মদিয়া দারুস সুন্নাত সিনিয়র মাদ্রাসার পড়ুয়ারা। এখান থেকে এবার ফাজিল পরীক্ষা দিয়েছিল ইলিয়াস মোল্লা। সে এবার ৫৩৬ নম্বর পেয়ে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছে।ইলিয়াসের বাবা ইব্রাহিম মোল্লা বলেন, ‘ছোট থেকেই ও অত্যন্ত মেধাবী। আমার তেমন সামর্থ্য নেই জেনে কোনওদিন অন্যায় আবদার করেনি। ওর উচ্চশিক্ষার জন্য কোনও সহৃদয় ব্যক্তি যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে ওর স্বপ্ন পূরণ হতে পারে।’

বাড়িতে সেলাইয়ের কাজ করে নিজের পড়ার খরচ সামলাত তাহেরা খাতুন। সে এবার কালেরাইট মোহাম্মদিয়া দারুস সুন্নাত সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পরীক্ষা দিয়েছিল। ৫২৬ নম্বর পেয়ে সে রাজ্যের মধ্যে দশম স্থান অধিকার করেছে। সংসারে অভাব-অনটন লেগেই আছে। তাই নিজের পড়ার খরচ চালাতে বাড়িতে সেলাইয়ের কাজ করার পাশাপাশি গৃহশিক্ষকতা করে নিজের পড়ার খরচ চালাত তাহেরা। তার ইচ্ছা উচ্চ শিক্ষা লাভ করে শিক্ষকতা করা।