দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ফের আলোচনায় মরিচঝাঁপি। চার দশক আগের ঘটনা নিয়ে আজ, সোমবার পথে বিজেপি। আজ মরিচঝাঁপি চলোর ডাক দিয়েছে তারা। সোমবার বারুইপুরে বিজেপি পার্টি অফিসের সামনে ইতিমধ্যেই মরিচঝাঁপি দিবস পালন করেছেন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। তারপর এখান থেকে রওনা দেন সুন্দরবনের গোসাবার মরিচঝাঁপির উদ্দেশে।
বারুইপুরে অগ্নিমিত্রার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য তপশিলি মোর্চার সভাপতি ডঃ সুদীপ দাস-সহ অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্ব। এদিন শ্রদ্ধা জ্ঞাপন অনুষ্ঠান থেকেই তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল। তিনি মরিচঝাঁপি গণহত্যা ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের দাবি তুলেছেন।
অগ্নিমিত্রা পালের কথায়, “প্রতি বছরই এই ৩১ জানুয়ারি দিনটা আমরা স্মরণ করি। এই ইস্যুগুলো খুবই সমসাময়িক। আজকে কেন মুখ্যমন্ত্রী এদের পাশে দাঁড়াননি? রাজনীতি করার জন্য? আমরা জানতে চাই। আমরা ৩১ তারিখ তফশিলি মোর্চার তরফে এই কর্মসূচি করছি। আমি নিজে থাকব। আমাদের কয়েকজন শীর্ষ নেতৃত্বের থাকার কথা। আমরা মরিচঝাঁপি যাব, সেখানকার মানুষের পাশে দাঁড়াব। আমরা এই ঘটনার তদন্ত কীভাবে এগোনো যায় তার ব্যবস্থা করব। ওখানে মানুষ খুবই খারাপ অবস্থায় আছেন। মরিচঝাঁপির ঘটনা যেখানে হয়েছিল, সেই দ্বীপে যেতে দেওয়া হয় না। আমরা দেখব, ওখানে যাওয়ার চেষ্টা করব।”
তিনি আরও বলেন, “৪০ বছর আগে যে নৃশংস খুন করা হয়েছিল, সেই ঘটনার পরবর্তী পর্যায় রহস্যময়। সিপিএম সে সময় খুন করেছিল, আর মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বিচারের। কিন্তু কোথায় বিচার? পুলিশের তদন্ত হয়েছে। কিন্তু তার রিপোর্ট কই? যে মানুষগুলো খুন হল, তাঁদের পরিবারের খোঁজ নিয়েছেন কেউ? আজ তাই আমরা তাঁদের জন্য বিচার চাইছি।”
তবে পদ্ম শিবিরকে কটাক্ষ ছুড়েছে তৃণমূল। বামেরা ছুড়েছেন চ্যালেঞ্জ। বাম বিদায়ের পর এক দশক কেটে গেলেও মরিচঝাঁপিতে বিশেষ আলো পড়েনি। এ জন্য তৃণমূলকে দায়ী করছে বিজেপি।
প্রেক্ষাপট
বাম আমলে মরিচঝাঁপি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ ঘিরে উত্তাল হয়েছিল বাংলা। ১৯৭৯ সালের জানুয়ারি মাসে মরিচঝাঁপি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছিল। ২৪ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ড চলে বলে অভিযোগ ওঠে। সে সময় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতি বসু। অভিযোগ উঠেছিল, মরিচঝাঁপি দ্বীপে বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্বাস্তুদের একাংশ আশ্রয় নিয়েছিলেন। পুলিশ তাঁদের হঠাতে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হয় সংঘর্ষ, বহু উদ্বাস্তু প্রাণ হারান বলেও অভিযোগ ওঠে। এতগুলো বছর পর সেই তদন্তের রিপোর্ট পেশ করার দাবি জানাচ্ছে বিজেপি।
হঠাৎ কেন তৎপর বিজেপি?
মরিচঝাঁপি নিয়ে হঠাত্ বিজেপির এতো তত্পরতা কেন? পর্যবেক্ষকদের একাংশ বলছেন, মতুয়া নিয়ে তারা বেকায়দায় পড়েছে। সিএএ কবে কার্যকর হবে ঠিক নেই। তার উপর কমিটি অসন্তোষে শান্তনু ঠাকুরদের বিদ্রোহে বিজেপি বেসামাল। উদ্বাস্তুদের সমর্থন ধরে রাখতেই কি হাতিয়ার ভুলে যাওয়া ইতিহাস? আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই শাসকদলের বিরুদ্ধে অস্ত্রে শান দিতে পদ্ম শিবিরের নতুন ইস্যু মরিচঝাঁপি-অভিযান।