মথুরাপুর: শেষ দফা ভোটের আগে রাজ্যে পর পর দু’দিন ঠাসা কর্মসূচি রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। মথুরাপুরে সভা রয়েছে মোদীর। তারপর সেখান থেকে তিনি চলে যাবেন কাকদ্বীপে। শেষবেলার প্রচারে মোদী নিজের কেন্দ্রে সময় না দিয়ে এসেছেন বাংলায়। মথুরাপুরে অশোক পুরকাইত, জয়নগরে অশোক কান্ডারী এবং ডায়মন্ড হারবারে অভিজিৎ দাসকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। তাঁদের সমর্থনে সভা করছেন মোদী। মোদী কী বললেন, দেখে নিন এক নজরে…
আপনাদের জমি জায়গা অনুপ্রবেশকারীরা দখল করে নিয়েছে। CAAএর কেন এত বিরোধিতা করছে, কেন এত মিথ্যা,ভুল রটাচ্ছে? কারণ তৃণমূল অনুপ্রবেশকারীদের জায়গা দিতে চায়। হিন্দু, মতুয়া সমাজের লোক, তৃণমূল তাদের এখানে রাখতে দিতে চায় না। কিন্তু চিন্তা করবেন না। ৪ জুনের পর তৃণমূলের হাওয়া বেরিয়ে যাবে। মতুয়া সমাজ, নমশূদ্র সমাজকে অধিকার পাইয়েই ছাড়ব। মোদীর গ্যারান্টি। সব শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব মিলবে। ৪ জুনের পর আগামী ৬ মাসে দেশে বহু বড় রাজনৈতিক ভূমিকম্প আসতে চলেছে। এই পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতিকরা, দল নিজেদের মতোই ধ্বংস হয়ে যাবে। ওদের নেতা কর্মীরাও হাঁপিয়ে গিয়েছে। দেশ কোথায় যাচ্ছে, আর দল কোথায় যাচ্ছে, ওদের কর্মীরা দেখতে দেখতে হাঁপিয়ে গিয়েছে।
তৃণমূলের একটাই এজেন্ডা। ওদের সব কিছুতে কাটমানি চাই। তৃণমূল বাংলার পরিচয় নষ্ট করতে চাইছি। সাধু সন্ন্যাসীদেরও ছাড়ছে না। তৃণমূল ইস্কন, রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মতো সংস্থাকেও গালি দিচ্ছে। তৃণমূলের গুন্ডারা মঠে হামলা করছে। রামমন্দির আমাদের আস্থার কেন্দ্র। তৃণমূলের লোক রামমন্দিরকে অপবিত্র বলে। এইরকম তৃণমূল বাংলার সংস্কৃতি রক্ষা করতে পারবে না। তৃণমূল তুষ্টিকরণের জন্য দেশের সংবিধানেও হামলা করছে। আমাদের সংবিধানে দলিত, পিছিয়ে থাকাদের জন্য সংরক্ষণ দিয়েছে। কিন্তু তৃণমূলের আমলে সেই সংরক্ষণেও লুঠ হচ্ছে। মুসলমানদের OBC সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে। অনগ্রসর শ্রেণির মানুষদের অধিকার ছিনিয়ে মুসলিমদের OBC সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে। কলকাতা হাইকোর্ট এই শংসাপত্র বাতিল করে দিয়েছে। তৃণমূল এই নির্দেশ অমান্য করতে পারে না। মুসলমান মিথ্যা বলছে। ভুল রটাচ্ছে। একবার ভাবুন তুষ্টিকরণের জন্য এরা কোন সীমায় পৌঁছাতে পারে? ১ জুন আপনার ভোট এই মারাত্মক চিন্তাভাবনাকে আটকাবে। আমরা নতুন যাত্রা শুরু করব।
তৃণমূলের কাছে একটাই হাতিয়ার বেচে রয়েছে। ওদের এখন একটাই হাতিয়ার, ‘এটা হতে দেব না।’ আমরা মহিলাদের সুরক্ষার জন্য হেল্পলাইন বানিয়েছিলাম। তৃণমূল বলল, এটা হতে দেব না। আমরা দেশের সব মহিলাকে উজালা সিলিন্ডার দিচ্ছি। বাংলার সরকার লাখো আবেদনে ঝুলে রয়েছেন। তৃণমূল সরকার বলছে, এটা হতে দেব না। মোদী প্রত্যেক গরিবে বিনা পয়সায় চিকিৎসায় সুবিধা দিচ্ছে। ৭০ বছরের বেশি বয়স্ক মানুষের চিকিৎসা বিনা পয়সায় হবে। কিন্তু তৃণমূল বাংলায় আয়ুস্মান যোজনা করতে দিচ্ছে না। বলছে, এটা হতে দেব না। তৃণমূলের জয় বড় লোকসান এখানকার লক্ষ মৎস্যজীবীদের হচ্ছে। কেন্দ্র মৎস্যজীবীদের জন্য এত যোজনা চালাচ্ছে, ফিশানম্যানদের কিষান ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা দিচ্ছি, … ২০ হাজার কোটি টাকার ফান্ড দিয়েছি, কিন্তু তৃণমূল বলছে, এটা হতে দেব না। তৃণমূল বাংলায় ফিশিংয়ের আইন জারি হতে দিচ্ছে না। বিমা মিলছে না ওদের।
৪ কোটি গরিবকে পাকা ঘর বানিয়ে দিয়েছি। ১২ কোটি বাড়িতে জল, সব গ্রামে বিদ্যুৎ। ভারত এখন বিকশিত ভারতের পথে। আগামী পাঁচ বছরে সোনার ভারত গড়ার ক্ষেত্রে নির্ণায়ক শক্তি হতে হবে। বিকশিত ভারতের জন্য বিকশিত বাংলার নির্মাণ জরুরি। এটা তখনই সম্ভব, আপনারা এমন সাংসদ নির্বাচন করবেন, যিনি দেশের কাজ করবেন। আমাকে বেশি করে বিজেপির সাংসদ নির্বাচিত করে দিল্লিতে পাঠান, আমি ভরসা দিচ্ছি, বিকশিত বাংলা হবেই। আমার সমস্ত ক্ষমতা লাগিয়ে দেব।
আপনারা দশ বছরের বিকাশ যাত্রা দেখেছেন। দেশের কোটি গরিব জীবনের ন্যূনতম সুবিধা পেতেন না। না খেয়ে মৃত্যু হত। কোটি মানুষের মাথায় ছাদ ছিল না, মহিলাদের জন্য শৌচালয় ছিল না। সব থেকে বড় দুর্ভাগ্য ছিল, এই সমস্যা মেটানোর জন্য চেষ্টাও হত না। পরিবারতন্ত্র রাজনীতি মানুষকে শেষ করে দিয়েছে। যে দেশের স্বাধীনতা আমাদের সঙ্গে হয়েছিল, তারা আজ কোথায় পৌঁছে গিয়েছে? আমাদের কাছে এত যুব শক্তির সম্পদ রয়েছে, কিন্তু আমরা পিছিয়ে পড়ছিলাম। ভারত এখন এগিয়ে চলেছে। গোটা বিশ্ব দেখছে। গোটা বিশ্বে ভারতের ডঙ্কা বাজছে।
আপনাদের এই উচ্ছ্বাসই বলে দিচ্ছে, বিজেপির জয় কতটা শক্তিশালী হতে চলেছে। আমাকে বলা হয়েছে, পরশু ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এখানে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। মঞ্চ বানানোর সমস্যা ছিল। শেষ মুহূর্তে আপনারা খোলা আকাশের নীচে জড়ো হয়েছেন। এত কম সময়ে, এত বড় সভার আয়োজন মুখে কথা নয়। আপনাদের ধন্যবাদ। কাল সন্ধ্যায় কলকাতার মানুষ রোড শোতে যে ভালোবাসা দিয়েছেন, তা মাথায় তুলে রাখব। আমি সেই দৃশ্য কখনও ভুলব না। চব্বিশের এই নির্বাচনে বাংলায় এটাই আমার শেষ সভা। এরপর ওড়িশা চলে যাব। কাল পঞ্জাবে থাকব। কালকের মধ্যে প্রচার শেষ।