দক্ষিণ ২৪ পরগনা: বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরেছেন ৯৫ জন বন্দি মৎস্যজীবী। কিন্তু এখনও ভয়ে শিঁটিয়ে তিলোকচন্দ্রপুর গ্রামের ফেরত আসা মৎস্যজীবীরা।
তিলোকচন্দ্রপুর গ্রাম! এই গ্রামের ৮০ শতাংশ মানুষই মৎস্যজীবী। প্রায় প্রত্যেক বাড়ি থেকে কেউ না কেউ ট্রলার নিয়ে সমুদ্রে যান। এই গ্রামের ৯৬ জন মৎস্যজীবী বাংলাদেশে আটকে পড়েছিলেন। গত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ভারতীয় মৎস্যজীবী ভারতের জলসীমানা লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের জলসীমানায় ঢুকে পড়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। তারপরে বাংলাদেশের পটুয়াখালি এবং মঙ্গলায় আটক ছিলেন তাঁরা। দুই দেশের তরফে মৎস্যজীবীদের আন্তর্জাতিক জল সীমানা লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এরই মধ্যে বাংলাদেশ জুড়ে শুরু হয় হিংসা। তার মধ্যে তাঁদের ওপরেও চলেছে অত্যাচার।
ফিরেছেন ৯৫ জন। কিন্তু এখনও একজন ফেরেননি। বদলে ফিরেছে তাঁর জামাকাপড়। তাঁরই স্ত্রী গুরুমনি। তাঁর স্বামী ভয়ে ট্রলার থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। আর খোঁজ মেলেনি তাঁর। বাংলাদেশি নৌসেনাদের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে সমুদ্রে ঝাঁপ দেন। তাঁর স্ত্রীর মুখেই উঠে এল বিস্ফোরক তথ্য।
গুরুমনি বলেন, “আমার স্বামী তো ভয়ে ঝাঁপ দিয়েছেন। ওই যে নেভি ধরছে, কোস্ট গার্ড ধরছে, মারছে, খুব মারছে, সেই দেখেই ভয়ে ঝাঁপ দিয়েছে। ওরা যদি এভাবে মারধর না করত, তাহলে তো বেঁচে ফিরত আমার স্বামী।”
আর যাঁরা বেঁচে ফিরেছেন? বাংলাদেশি নৌসেনারা যে কী অত্যাচার চালিয়েছেন, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ তাঁদের শরীরের অবস্থাই। তাঁরা দু’পায়ে দাঁড়াতে পারছেন না। কীভাবে হয়েছে অত্যাচার? শুনলে আঁতকে উঠতে হয়। মুখে গামছা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, লাঠি মুখে ঢুকিয়ে গুঁজে দেওয়া হয় গামছা, এরপর এক পায়ে দাঁড় করিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। বাথরুম যেতে দেওয়া হত না, দু’দিন খেতে দেওয়া হয়নি, ভয়ঙ্কর বক্তব্য উঠে আসছে তাঁদের মুখে।
রণজিৎ দাস নামে এক মৎস্যজীবী। তাঁকেও আটক করে রাখা হয়েছিল। এখনও সে দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে ভয়ে কেঁপে ওঠে তাঁর গলা। বলেন, “আমাদের সামনেই অফিসাররা বলছিল, পেটে ছুরি মেরে জলে ফেলে দে ওদের… এমন মারত, কত যে লাঠি ভেঙেছে। এক পায়ে দাঁড় করিয়ে পায়ের পাতায় মারত। চোখ বেঁধে রেখে নিতম্বে লাঠি দিয়ে মেরে দগদগে ঘা করে দেওয়া হয়।।”
মাটির ঘর, ত্রিপলের ছাউনের নীচে বসে রণজিৎরা। চোখের পাতা বুজতে ভয় পাচ্ছেন ওঁরা। ঘরে ফিরেও ভুলতে পারছেন না সেই দুঃসহ স্মৃতি।
বাংলাদেশের বিষোদগারে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমি ওঁদের দেখেই জিজ্ঞাসা করলাম, খুড়িয়ে হাঁটছেন কেন? প্রথমে বলতে চায়নি ভয়ে। জানতে পারলাম, তাঁদের মারধর করা হয়েছে। দড়ি দিয়ে বেঁধে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়েছে। কোমর থেকে পা পর্যন্ত চোট। কাঁদছিল।” পরিচয় দেখিয়ে দিল ইউনূস প্রশাসন।