Last Rites: ‘হেলে দুলে যাব শ্মশানঘাটে’… চোঙায় বাজছে গান, তুমুল নাচ শ্মশানযাত্রীদের! এ কেমন শবযাত্রা!

TV9 Bangla Digital | Edited By: সায়নী জোয়ারদার

Jan 24, 2022 | 12:55 AM

Sagar: বৃদ্ধার দুই ছেলে, দুই মেয়ের ছেলে, মেয়ে, জামাই, নাতি, নাতনি মিলিয়ে সদস্য সংখ্যা প্রায় ৩০ জন।

Last Rites: হেলে দুলে যাব শ্মশানঘাটে... চোঙায় বাজছে গান, তুমুল নাচ শ্মশানযাত্রীদের! এ কেমন শবযাত্রা!
এভাবেই চোঙা লাগিয়ে চলেছেন শ্মশানযাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র।

Follow Us

দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ব্যান্ড পার্টি সহযোগে মৃতদেহ নিয়ে চলেছে শ্মশানযাত্রীরা। মাঝে মধ্যেই রাস্তায় দেহ রেখে চলছে উদ্যম নাচ। কোথাও কোনও শোক নেই, শুধুই উল্লাস। ১১৩ বছরের বৃদ্ধার এমন শেষযাত্রা কেন? পরিবারের দাবি, বৃদ্ধা নিজেই চেয়েছিলেন এভাবে তাঁর অন্ত্যেষ্টিযাত্রা হোক। কারও চোখে জল দেখতে চাননি তিনি। পরম খুশিতে তাঁকে যেন শ্মশান অবধি এগিয়ে দেয় প্রিয়জনেরা, এটুকুই চেয়েছিলেন। ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনি, তাদের পরের প্রজন্ম সকলেই এদিন শ্মশানযাত্রী ছিলেন। শনিবার রাতে সাগরের বিষ্ণুপুরে এই দৃশ্য দেখা যায়। কেউ কেউ ভিডিয়োও করে রাখেন সেই মুহূর্তে। রবিবার সকাল থেকে ঘটনার কথা মুখে মুখে ঘুরছে গোটা সাগরদ্বীপ জুড়ে।

জানা গিয়েছে, মৃত ওই বৃদ্ধার নাম ছিল বনলতা খাটুয়া। ১১৩ বছর বয়স হয়েছিল। বার্ধক্যজনিত সমস্যা ছিল শরীরে। তার মধ্যে এমন ঠান্ডা। শনিবারই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। খাটুয়া পরিবারের সদস্যরাই জানান, কুড়ি বছর আগে বনলতা খাটুয়ার স্বামী ভূপেন্দ্র খাটুয়া মারা যান। এভাবেই তাঁর স্বামীর শেষযাত্রার আয়োজন করেছিলেন স্ত্রী। এবার তাঁর মৃত্যুতেও উৎসব আনন্দে মাতে গোটা খাটুয়া পরিবার। শুধু তাই নয়, এই উল্লাস যাত্রায় অংশ নেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। শনিবার রাতে শ্মশানযাত্রার জন্য সারি বেধে আনা হয় ইঞ্জিন ভ্যান। সেখানেই ব্যান্ড পার্টি, মাইক। গান বাজছে, ‘আমি হেলেদুলে যাব শ্মশান ঘাটে’! ভ্যানে বসে গা দোলাচ্ছেন শ্মশান যাত্রীরা। একদল যুবক আবার গানের তালে তালে শবযাত্রার সামনে নেচেই চলেছেন। এই দৃশ্য দেখতে রাস্তার দু’পাশে মানুষের ভিড় জমে যায়।

এখানেই শেষ নয়। দেহ শ্মশানে পৌঁছাতেই শুরু হয় উদ্দাম নাচ। এমনকী দেহ দাহ করার সময়ও ব্যান্ড পার্টির বাজনা সঙ্গে নাচ চলতে থাকে। শ্মশানে ব্যান্ড পার্টির বাজনা শুনে আশেপাশের লোকজনেরাও ভিড় জমায় শ্মশানে। এক মুহুর্তের মধ্যে নদীর তীরে নির্জন শ্মশান হয়ে ওঠে লোকে লোকারণ্য। কৌতুহলী বাসিন্দাদের হাজারও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় মৃতের পরিবারকে। মৃত্যুর পর কেন এই আয়োজন, পরিবারের লোকজনদের কাছে জানতে চান স্থানীয় বাসিন্দারা।

মৃতের পরিবারের লোকজনেরাও বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন। তাতেও মন গলেনি এলাকার বাসিন্দাদের। বহু মানুষ এই ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করেন। সেই ছবি নেট দুনিয়ায় ভাইরাল। জেলায় এই রকম দৃশ্য এই প্রথম বলেই দাবি এলাকার বাসিন্দাদের। বৃদ্ধার দুই ছেলে, দুই মেয়ের ছেলে, মেয়ে, জামাই, নাতি, নাতনি মিলিয়ে সদস্য সংখ্যা প্রায় ৩০ জন। বৃদ্ধার বড় ছেলে গৌরহরি খাটুয়া জানান, “মৃত্যুর আগে মা ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, মা চলে গেলে যেন কোনভাবেই শোকপ্রকাশ কেউ না করে। সকলেই যেন আনন্দে মেতে ওঠেন। সেইমতো পরিবারের লোকজনেরা সকলে মিলে এই আয়োজন করেছিলাম। শ্মশানযাত্রায় সকলেই আনন্দে মেতে উঠেছিলেন।”

বনলতা খাটুয়ার ছোট মেয়ে সুভাষিনী মান্না জানান, “দীর্ঘদিন মা বয়সজনিত কারণে ভুগছিলেন। মায়ের সেই যন্ত্রণা চোখে দেখা যাচ্ছিল না। মৃত্যু হওয়াতে সেই কষ্ট থেকে বাঁচলেন মা। সব সময় মা বলতেন, তাঁর মৃত্যুতে কেউ যেন না চোখের জল ফেলে। সকলে যেন আনন্দ করে। মায়ের শেষ ইচ্ছা রাখতেই বাজনা ভাড়া করে আনন্দ করতে করতে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এমনকী দাহ করার সময়ও সকলে হইহই করে। মায়ের মৃত্যুর কষ্ট ক্ষণিকের জন্য আমরা ভুলে গেছিলাম। হয়তো এটাই চেয়েছিলেন মা।”

Next Article