দক্ষিণ ২৪ পরগনা: কেউই কথা রাখে না। ভোটের আগে প্রতিশ্রুতির ঝুলি উপুড় করে দিলেও ভোট ফুরোলে ফুরিয়ে যায় সব প্রতিজ্ঞাও। সে কারণেই ভাঙড়ের বামনঘাটা, ঢালিপাড়া, হাটগাছা, হাদিয়ার মানুষগুলোকে দু’ দশকের বেশি সময় ধরে প্রাণ হাতে নিয়ে পারাপার করতে হচ্ছে বাসন্তী হাইওয়ের ধার ঘেষে বয়ে চলা খালের উপরের কাঠের সেতু। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ নিয়ে একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। বহু আবেদন-আর্তির পরও কাজ হয়নি।
বামনঘাটা, ঢালিপাড়া, হাটগাছা, হাদিয়া-সহ একাধিক এলাকার মানুষের বাসন্তী হাইওয়েতে ওঠার অন্যতম পথ এই কাঠের সেতু। যদিও বর্তমানে একটি বিকল্প ব্রিজ তৈরি হয়েছে। তবু প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এই ঝুঁকির পারাপারেই ‘স্বচ্ছন্দ্য’। আসলে এই সেতুর দু’ পাশে দু’টি হাই স্কুল, একটি বাজার, একটি মাছের আড়ত। তাই ঘুরপথে আর কেউ যেতে চান না।
বামনঘাটার এই মাছ বাজারে পৌঁছে গিয়েছিল TV9 বাংলা। সেখানকার মাছ ব্যবসায়ী থেকে স্কুল পড়ুয়া কিংবা অফিস কর্মী সকলেই জানালেন, এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। প্রশাসনের রং বদলেছে। কিন্তু এই দুর্দশার ছবিতে কোনও বদল নেই। তাঁদের কথায়, ভোটের আগে সকলেই ‘করে দেওয়ার’ স্তোক শুনিয়ে যান। এখানকার মানুষও মেনে নিয়েছেন, পরিস্থিতি বদলানোর নয়।
স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী রত্ন বর জানান, প্রায় ২৫ বছর ধরে সেতুর এই এক অবস্থা দেখে আসছেন তিনি। হেঁটে কিংবা সাইকেলে তো মানুষ চলাচল করেনই, বাইকও তুলে দেন কেউ কেউ। মঙ্গলবার আর শুক্রবার এখানে হাট বসে। সে দু’দিন আরও ভিড় বাড়ে। চাপ বাড়ে নড়বড়ে সেতুর বুকে। একই বক্তব্য নিয়মিত এই সেতু ধরে যাতায়াতকারী মানসী মণ্ডলেরও।
মানুষের ভোগান্তির কথা এক বাক্যেই স্বীকার করে নেনে স্থানীয় তৃণমূল নেতা প্রদীপ মণ্ডল। তিনি বলেন, “তিন বছর ধরে প্রশাসনকে আবেদন করছি এই ব্রিজটা ঠিক করে দেওয়া হোক। এই ব্রিজের পার করেই একটা হাই স্কুল রয়েছে। প্রায় আড়াই হাজার ছেলে মেয়ে রোজ যাতায়াত করে। সঙ্গে বাজার, মাছের আড়ত। চার থেকে পাঁচ হাজার লোক এই আড়তে এসে ব্যবসা করেন।” প্রদীপবাবু এই ভোগান্তির দায় পুরোটাই ঠেলে দিয়েছেন সেচ দফতর ও জেলা পরিষদের দিকে। এমনকী বিডিও অফিসের দ্বারস্থ হয়েও কাজ এগোয়নি, দাবি তৃণমূলের।
ভাঙড়-২ বিডিও কার্তিকচন্দ্র রায় অবশ্য বলছেন, “আমরা ইরিগেশন ডিপার্টমেন্ট ও পিডব্লুডিকে জানিয়েছি। যত দ্রুত সম্ভব কাজ শুরু করা যায় সেদিকেই আমাদের নজর রয়েছে।” কিন্তু এলাকার মানুষও আর ভরসা পাচ্ছেন না। তাঁরা বলছেন, প্রতিশ্রুতি এবার উপচে পড়বে। আর তার দরকার নেই। বরং তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা হোক।