দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ‘চাপে রাখবি’, ‘ডিস্টার্ব সারিয়ে দিতে হবে’- প্রকাশ্যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে ডিএ-র দাবিতে আন্দোলনকারী সরকারি কর্মীদের ঠিক এইভাবেই ‘চাপে রাখতে’ দলীয় কর্মীদের পাঠ পড়ালেন ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা কাইজার আহমেদ। ভাঙড় ১ নম্বর ব্লকে বড়ালিতে একটি দলীয় সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে বেশ কয়েকজন আইএসএফ কর্মী তৃণমূলে যোগদান করেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আবহে দলীয় কর্মীদের উজ্জীবিত করতে একের পর এক গরম ভাষণ দিতে থাকেন কাইজার। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে বিরোধীদের টার্গেট না করে, কাইজারের আক্রমণের মূল লক্ষ্য হয়ে ওঠেন যাঁরা ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন করছেন, অর্থাৎ সেই প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত সরকারি কর্মীরাই। তাঁদের অনশন আন্দোলনকে কটাক্ষ করে কাইজার বলেন, “যত খায়, পোষায় আর না। এটা কিন্তু দিদির কথা। ওরাই আবার কিন্তু ভোট করাতে আসবে। আমাদের জায়গার লোক অন্য জায়গায় যাবে, আর অন্য জায়গার লোক এখানে আসবে। যারা সব প্রিসাইডিং অফিসার হয়। ওরা কিন্তু সব ওই লোক, যারা ভাতা দাও বলে আন্দোলন করছে, ভোট করতে যাব না বলে আন্দোলন করছে। ওরা যখন বুথে আসবে, নিজেদের লোক বলে চাটাচাটি করো না কিন্তু। সব ডিস্টার্ব।” এরপরই দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে তাঁর নিদান, “ওদের ডিস্টার্ব সারিয়ে দিতে হবে কিন্তু। ওদের ওই মুরগির মাংস টাংস খাওয়ানোর চিন্তাভাবনা করিস না কিন্তু। চাপে রাখবি।”
বিতর্ক যে দানা বাঁধবে, তা সম্পর্কে ভালভাবেই অবগত কাইজার। কিন্তু তাতে খুব একটা বিশেষ আমল দিতে নারাজ তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তাঁর সহাস্য মুখে জবাব, “ডিএ নিয়ে যারা আন্দোলন করছেন, তারাই হবে প্রিসাইডিং অফিসার। আমাদের কর্মীদের মধ্যে, বিশেষত এটা ভাঙড়ের মানুষের কালচার, সেটা হল আতিথেয়তা। খাবার-ফ্যান-আলোর ব্যবস্থা করে দেয় আমাদের কর্মীরা। আমাদের কর্মীরা আবার রান্নাবান্না করে খাবার নিয়ে যায়। আমি এবার বলে দিয়েছি, ওত বেশি আপ্পায়ন করার দরকার নেই।”
বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক চর্চা তুঙ্গে। আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকি বলেন, “ওরা সবসময়ই প্রভাবিত করার চেষ্টা করে এনেছেন। তবে কেউ যদি আইন বহির্ভূত কথা বলেন, তাহলে আইনের কাছে জবাব দিতে হবে। এটা ২০১৮ সাল নয়, যে এক চেটিয়া ভোট করিয়ে বেরিয়ে যাবে। গণতন্ত্র রক্ষার দায়িত্ব আমাদের কাঁধে।”
তবে একটি বিষয় উল্লেখ্য, ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন করায় তাঁরা ভোটের ডিউটিতে গিয়ে কোনও রকমের সমস্যায় যে পড়তে পারেন, তা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন আন্দোলনকারীরাও। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফে ভোট কর্মীদের নিরাপত্তার দাবি জানানো হয়েছে ইতিমধ্যেই। রাজভবনে ডেপুটেশন দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনেও এই দাবি তাঁরা জানিয়েছেন।