সুন্দরবন: বয়স সবে আড়াই। ঠিক মতো কথাও ফোটেনি মুখে। অধিকাংশ সময় বিছানা আর মায়ের কোলে বসেই কেটেই যায় যার দিন, সেই শিশুই কি না এখন ইন্ডিয়া বুক অব রেকর্ডের অধিকারী! অবাক হলেও সত্যি।
সুন্দরবনের নামখানা ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম মদনগঞ্জের অহেঞ্জিতা মিস্ত্রি। অনাহাসেই ঝর-ঝরিয়ে বাংলা ও ইংরেজিতে কবিতা ও গল্প, বাংলা ও ইংরেজি মাসের নাম, জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে শোনানোর পাশাপাশি মনীষী ও পশু-পাখির নাম বাংলা ও ইংরেজিতে বলে ফেলতে পারে। এতটুকু বয়সে একসঙ্গে এতকিছু করার জন্য ইন্ডিয়া বুক অব রেকর্ডের খেতাব জিতেছে এই একরত্তি শিশু। ছোট্ট অহেঞ্জিতার সর্বভারতীয় এই খেতাব জেতার খবর পেয়ে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছে কাকদ্বীপ মহকুমা প্রশাসন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার নামখানা ব্লকের মদনগঞ্জ গ্রামের অভাবী পরিবারে বেড়ে ওঠা অহেঞ্জিতার। বাবা অরুণ মিস্ত্রি কলকাতা পুলিশে কর্মরত। ছোট থেকে বাড়িতে মায়ের কাছে বাংলা ও ইংরেজি কবিতা ও গল্পের তালিম নেওয়া। বাকি বাংলা ও ইংরেজি মাসের নাম, জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে শোনানোর পাশাপাশি মনীষী ও পশু-পাখির বাংলা ও ইংরেজিতে নাম শেখান মা বিজলী মিস্ত্রি।
সর্বক্ষণ মেয়ের সামনে এসব কিছু আওড়াতে থাকতেন বিজলীদেবী। মায়ের মুখে শুনতে শুনতে ছোট্ট অহেঞ্জিতাও রপ্ত করে ফেলে সবকিছু। মেয়ে সবধরনের পারফরম্যান্স ভিডিয়ো করে জমিয়ে রাখতে শুরু করেন অহেঞ্জিতার মা। একাধিক ভার্চুয়াল প্রতিযোগিতাতেই সেই ভিডিয়ো পাঠাতে শুরু হয়। গত আগস্ট মাসে অনলাইনের মাধ্যমে ‘ইন্ডিয়া বুক অব রেকর্ডস্’-এ নাম তোলার জন্য আবেদন জানানো হয়। কিছুদিনের মধ্যে সংস্থার তরফে অহেঞ্জিতার পারফরমেন্সের কিছু ভিডিয়ো চাওয়া হয়।
সেই মত তার সব ভিডিয়ো পাঠিয়েও দেওয়া হয়। ছোট্ট শিশুর মনে রাখার স্মৃতিশক্তি দেখে মনভরে বিচারকদের। রাতারাতি ইন্ডিয়া বুক অব রেকর্ডস এ জায়গা করে নেয় সুন্দরবনের একরত্তি। ফোন করে অহেঞ্জিতার মাকে সেই খবর জানানো হয়। প্রথমে কেউই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। সোমবার সকালে মেডেল এবং শংসাপত্র বাড়িতে পাঠানো হলে খুশিতে ফেটে পড়েন পরিবারের সবাই। সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই ফোনে একের পর এক শুভেচ্ছা আসতে শুরু করে। মেয়ের এই সাফল্যকে আগামী দিনের পথচলার প্রথমধাপ হিসেবেই দেখছেন মা বিজলী মিস্ত্রি।
অহেঞ্জিতার মা বিজলী মিস্ত্রি বলেন, ‘এর পিছনে ওরই ক্রেডিট। তবে ওকে মুখস্থ করাতে গিয়ে অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছি আমি। সব থেকে চ্যালেঞ্জিং ছিল ওকে এক জায়গায় বসিয়ে স্টপ ওয়াচ চালিয়ে নন এডিং ভিডিয়ো পাঠাতে হয়েছে ইন্ডিয়া বুক অব রেকর্ডের টিমকে। এমনও হয়েছে একটা ভিডিয়ো করতে এক সপ্তাহ সময় লেগে গিয়েছে। তবুও হাল ছাড়িনি আমি। মেয়ের সাফল্যে খুব খুশি হয়েছি।’