ভাঙড়: মনোনয়নপর্ব থেকে যা শুরু হয়েছিল, তার ক্লাইম্যাক্স দেখল ভাঙড়। রাতভর বোমাবাজি। সকাল থেকে উত্তেজনা। সকালেই আইএসএফ প্রার্থীর দরজার বাইরে তালা। তাঁকে ঘর থেকে বের হতেই দেবেন না কেউ, আর সেই উদ্দেশ্যেই তালা। এই দিয়ে শুরু হয়েছিল ভাঙড়ের পঞ্চায়েত-খবর। তারপর ভাঙড়ে বোমাবাজিতে ঝলসে যায় দুই শিশু। বেলা যত গড়াতে থাকে, ততই জ্বলতে থাকে ভাঙড়ের বিভিন্ন প্রান্ত।
আইএসএফ বনাম তৃণমূল। দু’পক্ষেরই মূলত সংঘর্ষ। বেলা চারটের পরও উত্তেজনা। দুপুর গড়িয়ে বিকাল। আইএসএফের সমর্থকরা এবার প্রতিবাদে নামেন। রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে চলতে থাকে বিক্ষোভে। আর বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে সেই বিক্ষোভ দেখতে থাকেন মহিলারা। আইএসএফের অবরোধে আটকে পড়েন বিহার পুলিশের আইপিএস পদমর্যাদার এক আধিকারিক। তিনি অনুরোধ করেন, যে তাঁরা বিহার পুলিশের। তাই তাঁদের গাড়ি যেন ছেড়ে দেওয়া হয়। অনুরোধের পর গাড়ি যেতে দেওয়া হয়।
বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, সকাল থেকে একাধিক হিংসা, বোমাবাজি, গুলিচালনার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কোথায় কেন্দ্রীয় বাহিনী? রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বিরোধীরা। শেষ বেলা পর্যন্তও তপ্ত ছিল ভাঙড়ের মাটি। বিরোধীরা বলছেন, বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনের হিংসা হার মানাবে বিহার, উত্তরপ্রদেশকেও। এই পরিস্থিতিতে বিহার পুলিশের পদস্থ কর্তাকে TV9 বাংলার প্রতিনিধি প্রশ্ন করেন, বিহারে এমন ভোট হয়? উচ্চ পদস্থ সেই কর্তা তখন দৃশ্যত অস্বস্তিতে। হেসে বললেন, ‘জানে দো ইয়ার!’ আদৌ তাঁর হাসিতে কি সুপ্ত ছিল অন্য কোনও ইঙ্গিত? তা অবশ্য আলোচনা সাপেক্ষ।
তবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা তুলতে পারলেন না বিক্ষোভ। তৃণমূল নেতা শরিকূলের গ্রেফতারির দাবিতে নাছোড়া আইএসএফ সমর্থকরা। গ্রামবাসীরাও অভিযোগ করছেন, পুলিশ ঘুষ খেয়েছে। সন্ধ্যা পৌনে ছ’টা পর্যন্তও চলতে থাকে বিক্ষোভ। তারপর আসে রাজ্য পুলিশ। পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন গ্রামবাসীরা। সমাধানসূত্র এখনও অধরা।
তবে এত মামলা মোকদ্দমা করে যত পরিমাণ কেন্দ্রীয় বাহিনী বাংলায় আনা হল, তাদের ভূমিকা কি সেভাবেও দেখা গেল? রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছে বটে, কিন্তু তাঁদের তো আটকে রাখা হয়েছে। বরং আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে ভোটের কাজে সেই ব্যবহৃত হয়েছেন সিভিক ভলান্টিয়ররাই।