কাঁথি: মঞ্চের পিছনের ব্যানারে লেখা ছিল ‘কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষক বিরোধী কৃষি বিল ও বাংলার প্রতি বঞ্চনার প্রতিবাদে পদযাত্রা ও বিশাল জনসভা’। ব্যানারের ওই বিষয়বস্তু যে ব্যানারেই সীমাবদ্ধ থাকবে তা আগেই অনুমান করা গিয়েছিল। বুধবারে কাঁথির তৃণমূল-কর্মসূচি (TMC) কেবল তাতে সিলমোহর দিয়েছে। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার মাস কয়েক আগে থেকে শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) যেভাবে নাগাড়ে তৃণমূলকে নামোল্লেখ না করে আক্রমণ করে যাচ্ছিলেন এবং পদ্ম পার্টিতে যোগ দিয়ে যেভাবে সরাসরি ‘তোলাবাজ ভাইপো হঠাও’ স্লোগান তুলেছিলেন, এদিন পরিকল্পিতভাবে সেইসব মন্তব্যের পাল্টা আক্রমণ করতেই কোমর বেঁধে নামতে দেখা গেল তৃণমূল নেতৃত্বকে। আর ঘাসফুল শিবিরের তরফে এই পাল্টা আক্রমণের ‘দায়িত্ব’ তুলে দেওয়া হয়েছে শুভেন্দুর সঙ্গে মধ্যস্থতাকারী সৌগত রায় (Sougata Roy) এবং ‘লিফটে না উঠে সিঁড়ি ভেঙে ওঠা’ ফিরহাদ হাকিমকে (Firhad Hakim)।
বুধবারের সভা মঞ্চে উঠে প্রথম থেকেই ‘পালোয়ান’ শুভেন্দুকে নিশানা করেন প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়। মেদিনীপুরের রাজনীতিতে শুভেন্দু অধিকারী যে কোনও দিনই বড় ফ্যাক্টর ছিলেন না এবং এখনও নন সে কথা বোঝাতে অখিল গিরির লড়াকু অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দেন দমদমের সাংসদ। শুভেন্দুর নির্বাচনে পরাজয়ের অতীত স্মরণ করিয়ে দিয়ে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক আরও বলেন যে ২০০৬ সালে বরাবরের বাম বিরোধী দক্ষিণ কাঁথি আসনে শুভেন্দুর জয় মোটেই বড় সাফল্য নয়। এরপর ২০০৯, ২০১৪ এবং ২০১৬ সালে শুভেন্দুর জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যেই তাও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন সৌগত। শুভেন্দুর যাবতীয় সাফল্য এবং অর্জন যে আসলে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশীর্বাদেই তা তীব্র কটাক্ষের ঢঙে বোঝাতে চির চেনা ‘পুনঃ মুষিক ভব’ গল্পের আশ্রয়ও নিতে দেখা গেল সৌগত রায়কে।
এক নজরে শুভেন্দুকে সৌগতর আক্রমণ
এদিন কাঁথির মঞ্চে সৌগত রায়ের পর নয়া মাত্রায় শুভেন্দুকে বেঁধেন ফিরহাদ হাকিম। শুভেন্দু তৃণমূলে পরিবারবাদকে আক্রমণ করেছিলেন। বারবার প্যারাসুটে নামা, লিফটে ওঠা এবং সিঁড়ি দিয়ে ওঠার মতো রূপক ব্যবহার করে নিজের লড়ায়ের মধ্য থেকে উঠে আসার কথা তুলে ধরেছেন। এদিন সেই দিক থেকেই শিশির-পুত্রকে চরম আক্রমণ করেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি সাফ বলেন, শুভেন্দু শিশির অধিকারীর পরিবারে জন্মগ্রহণ না করলে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা পেতেন না। কলকাতা পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের প্রধান এরপরই সটান জানিয়ে দেন, তাঁর বাবা-কাকা রাজনীতি করতেন না, তিনি নিজে লড়াই করে তৃণমূলে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন, অর্থাৎ সিঁড়ি বেয়ে উঠেছেন। আর শুভেন্দু পরিবারবাদের সৌজন্যে অর্থাৎ লিফটে করে পদ পেয়েছেন।
শুভেন্দুর উদ্দেশে ফিরহাদের বাণ
তৃণমূল-শুভেন্দু বিচ্ছেদ পর্ব ইতিমধ্যে সমাপ্ত। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের দাবি, শুভেন্দু মেদিনীপুরের রাজনীতিতে কোনও ফ্যাক্টরই হবেন না। এদিনও ববি হাকিমকে বলতে শোনা গিয়েছে, তিনি কোলাঘাট ঢুকতেই স্বতঃস্ফূর্ত তৃণমূল জনতা তাঁকে বলেছেন, রাজার শাসন থেকে মুক্তি পেলাম। তবু দলে না থেকেও বুধবারের তৃৃণমূলের এই সভা আগাগোড়া শুভেন্দুময়ই হয়ে রইল।