‘আইনি সমর’! হাওয়া বদলাচ্ছে মালদায়, জেলা সভাধিপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা আনল তৃণমূল

tista roychowdhury |

Jun 17, 2021 | 6:58 PM

বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, প্রায় ফসকে যাওয়া জেলা পরিষদ নিজেদের কুক্ষিগত করতেই এই আইনি পন্থা গ্রহণ করেছে তৃণমূল। এই অনাস্থায় তৃণমূলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ হলে কার্যত বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাবে নেতৃত্বের রাশ।

আইনি সমর! হাওয়া বদলাচ্ছে মালদায়, জেলা সভাধিপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা আনল তৃণমূল
ফাইল ছবি

Follow Us

মালদা: ‘ফসকে গেল!’ মালদা জেলা পরিষদের বর্তমান পরিস্থিতি বিচার করলে এই শব্দবন্ধটিই বোধহয় উপযুক্ত হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ, মালদা জেলা পরিষদের পরিবর্তিত সমীকরণ নতুন রাজনৈতিক মোড় তৈরি করতে চলেছে। নির্বাচন আবহে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন জেলা সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল। তাঁর বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার অনাস্থা আনল তৃণমূল কংগ্রেস। জেলা পরিষদের মোট ২৩ জন তৃণমূল সদস্য একযোগে এই প্রস্তাবে সম্মতি দেয়। মালদা জেলা শাসকের কাছে এই মর্মে লিখিত আবেদন করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্যরা।

বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে জেলা সভাপতি মৌসম বেনজির নূর জানান, নির্বাচনের আগে প্রায় পনেরোজন সদস্য-সহ গৌরচন্দ্র মণ্ডল বিজেপিতে যোগ দেন। কিন্তু, কয়েকজন তখনই ফিরে আসেন। তাঁরা জানান, ভুল করে বিজেপিতে গিয়েছিলেন। সেইসময়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বিজেপি সভাধিপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হবে। পূর্বসিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নির্বাচনে জয়লাভের পর এদিন জেলাসভাধিপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে চলেছে তৃণমূল। রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গেও দ্রুত এই বিষয়ে পর্যালোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা সভাপতি। শুধু জেলা সভাধিপতি নন, তিন কর্মাধক্ষ্যের বিরুদ্ধেও অনাস্থা আনতে চলেছে তৃণমূল। সাংবাদিক বৈঠকে, এদিন, মৌসম নূর বলেন, “বিজেপি বার বার দাবি করেছে জেলা পরিষদে তাঁরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু, নির্বাচনের আগেই আমরা দেখিয়ে দিয়েছিলাম মোট ২৩ টি আসন আমাদের হাতে রয়েছে। নির্বাচনের পর আরও দুই তিনজন দলে ফিরে আসতে চেয়ে যোগাযোগ করেছেন। এখনও আমাদের দলের ২৩ জন সদস্য রয়েছেন। ৩৭টি আসনের জেলা পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য় ১৯ টি আসন প্রয়োজন। আমরা সেই সংখ্য়া অতিক্রম করেছি। জেলা পরিষদ ভাঙার পরিকল্পনা করেছিল তাদের আমরা দলে নেব না। যাঁরা বিজেপিতে চলে গিয়েছেন, তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে জিতেছিলেন। তাঁদের সদস্যপদ খারিজের জন্য আলাদা করে আবেদন করা হবে। রাজ্য় নেতৃত্ব ও স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গেও সত্বর বৈঠকের সম্ভাবনা আছে।”

পাল্টা, বিজেপির দাবি, অনাস্থা প্রস্তাব আনা হোক। জেলা সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “আজ সদ্য অনাস্থা পেশ করা হয়েছে। আর কিছুই হয়নি। এ বার বোঝা যাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা কোন দলের। আস্থা দেখানোর সময় রয়েছে। সব কিছুর উত্তর সময় দেবে।”

প্রসঙ্গত, মালদা জেলা পরিষদের ক্ষমতায় ছিল তৃণমূল, কিন্তু, জেলা সভাধিপতি বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় জেলা পরিষদ হাতছাড়া হয় তৃণমূলের। ভোটে প্রার্থী হওয়ার পরেও দলবদল করেছিলেন জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সরলা মূর্মূ। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। কিন্তু, এ বারের নির্বাচনে মালদায় রীতিমতো সবুজ ঝড়। ১২টি আসনের মধ্যে ৮টি আসনেই জয়লাভ করে তৃণমূল। তারপরেই পুরনো দলে ফেরার ইচ্ছে প্রকাশ করেন সরলা। সেই মর্মে খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠিও দেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে, তৃণমূলের আনা এই অনাস্থা প্রস্তাব যে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ তা অস্বীকার করতে পারছে না রাজনৈতিক মহল। বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, প্রায় ফসকে যাওয়া জেলা পরিষদ নিজেদের কুক্ষিগত করতেই এই আইনি পন্থা গ্রহণ করেছে তৃণমূল। এই অনাস্থায় তৃণমূলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ হলে কার্যত বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাবে নেতৃত্বের রাশ। জেলা পরিষদ কোন শিবিরের দখলে রয়েছে সেই দড়ি টানাটানিতে কার্যত আইনি সমরে এ বার তৃণমূল-বিজেপি এমনটাই দাবি করছেন বিশ্লেষকরা।

আরও পড়ুন: ‘পোস্টার প্রতিবাদ’! বিতর্কের শিরোনামে ‘শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ’ পৌরপ্রধান

 

 

Next Article