উত্তর দিনাজপুর: অঘোরে ঘুম যাকে বলে! অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেকটা দেরিতেই ছুটির সকালে ঘুম ভাঙে বাড়ির লোকের। চোখ খুলতেই তা কপালে ওঠে! প্রথমে দেখেন ঘরের দরজা খোলা, আলমারি লণ্ডভণ্ড। যা বোঝার বুঝে গিয়েছিলেন বাড়ির কর্তা। কী কী চুরি গিয়েছে, খোঁজ নিতে গোটা বাড়ি ঘুরে দেখেন। ছাদে গিয়ে তাজ্জব বনে যান বাড়ির কর্তা। রীতিমতো হাতে সময় নিয়ে ধীরেসুস্থে অপারেশন চালিয়েছে কীর্তিমানেরা। ছাদে বসে সুখটানও দিয়েছে। সঙ্গে করেছেন ‘ঘরের লক্ষ্মীর’ আসল-নকল বিভাজন। ইমিটেশনের গয়না আবার ছাদের সিঁড়িতেই রেখে গিয়েছে চোরের দল। এত্ত সব হয়েছে, কিন্তু টুঁ শব্দটিও কানে আসেনি পরিবারের কোনও সদস্যেরই। একটি নয়, এক রাতে একাধিক বাড়িতে চুরির ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল রায়গঞ্জের রূপাহারে।
প্রত্যেকটি বাড়িতে চুরির ক্ষেত্রেই একটি বিষয় সাধারণ। প্রত্যেকেরই বাড়ির মেইন সুইচ বন্ধ করা ছিল। প্রত্যেকেই অঘোরে ঘুমিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের কারোর কারোর বক্তব্য, ভোর রাতে তাঁদের কেউ কেউ ঘুমের মাঝেই ঘরে টর্চের আলো দেখেছেন, কিংবা টুকটাক আওয়াজ পেয়েছেন। কিন্তু তাঁদের বক্তব্য সজাগ হতে পারেননি তাঁরা। সকাল হতেই রূপাহার এলাকার একাধিক বাড়ির সদস্য দেখেন ঘরের দরজা, জানালা সব ভেতর থেকেই বন্ধ রয়েছে। কিন্তু আলমারি খোলা আর তা থেকে উধাও সব।
কারোর ছাদের দরজা দিয়ে নেমে ছাদের দরজার খিল বাইরে থেকে সন্তর্পণে খুলে চুরি করেছেন কীর্তিমানেরা। শেষে তা আবার বন্ধও করে দিয়ে গিয়েছেন। রাতভর ওই এলাকার একাধিক বাড়িতে একই কায়দায় চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ। শুধু তাইই নয়, চোরের দল ছাদে গিয়ে বিশ্রাম নিয়ে যে ধূমপানও করেছেন তারও প্রমাণ মিলেছে। উদ্ধার হয়েছে আধ পোড়া সিগারেট। এই এলাকায় এর আগে এই ধরনের চুরির ঘটনা ঘটেনি। এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
স্থানীয়দের অনুমান, কোনওকিছু স্প্রে করেই চুরি করা হয়েছে। তাতে প্রত্যেকেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন। এদিকে খবর পেয়ে রায়গঞ্জ থানার পুলিশ ওই বাড়িগুলিতে গিয়ে তল্লাশি চালায়। তদন্ত শুরু হয়েছে। রায়গঞ্জ শহর লাগোয়া রূপাহারে এভাবে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
এক বাড়ির কর্তা বললেন, “এতটা দেরিতে এর আগে কখনই ঘুম ভাঙেনি। আজই হল, কেন জানি না। একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। ছাদে গিয়ে তো অবাক হয়ে যাই। তার মানে কতটা ঠান্ডা মাথায় কাজ করেছে ওরা!”