রায়গঞ্জ: ক্রমশ বড় হচ্ছে ফাটল। নীচ থেকে সরছে মাটি। কুলিকের স্রোত বাড়লে যে কোনও সময় ধসে পড়তে পারে আস্ত ক্লাসরুম। ভয়েই কাঁপছে ক্ষুদে পড়ুয়ারা। শৈশবের অনেকটা অংশ জুড়ে থাকে যে ক্লাসরুম, সেটা ভেঙে পড়ার আতঙ্কে ভুগছে দ্বিতীয় শ্রেণির সরস্বতী পাল। যদি পরীক্ষা না দেওয়া হয়! যদি গায়ের ওপর ভেঙে পড়ে দেওয়াল! এমনই অবস্থা উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ ব্লকের সুভাষগঞ্জ পালপাড়া কোতগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কুলিক নদীর পাড়ে অবস্থিত ওই স্কুলের জমি নদীর গ্রাসে গিয়েছে অনেক আগেই। তাই বর্ষাকালে স্কুলে পাঠানোর আগে চিন্তা করতে হয় অভিভাবকদের।
অভিযোগ, কার্যত নদীগর্ভে চলে যেতে বসেছে আস্ত স্কুল। অভিভাবকেরা জানাচ্ছেন, একটি ক্লাসরুম স্কুলের রান্নাঘরের অবস্থা সবথেকে খারাপ। দেওয়ালে ফাটল বাড়ছে। তলা থেকে মাটি ধসে যাচ্ছে। অভিভাবকদের দাবি, প্রশাসনকে একাধিকবার এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই অভিভাবক থেকে শিক্ষক, উদ্বেগ বাড়ছে প্রত্যেকের।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুতপা রায় জানিয়েছেন, স্কুল তৈরির কয়েকদিন পরই জমির অনেকটা অংশ বন্যায় কুলিক নদীর গ্রাসে চলে যায়। ২০১৭ সালের বন্যাতেও স্কুলের অনেকখানি অংশ ভেঙে নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। পরে নতুন ভবন তৈরি হয়েছে, তবে সেটাও কুলিকের গা ঘেঁষে। কয়েক’শ পড়ুয়া প্রতিদিন আসে এই স্কুলে।
শ্রাবণে জল বাড়তেই চিন্তা বেড়েছে আরও। মিড-ডে-মিলের রান্না করতেও সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষিকা। শিক্ষকেরা ইঁট পাথর ফেলে গর্ত বোজানোর চেষ্টা করছেন, তাতেও সমস্যা ঘটেছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, শিক্ষা দফতর বা সেচ দফতরকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।
সদ্য শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদের বিধায়ক সত্যজিৎ বর্মন। তাঁকে এই স্কুলের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তদন্ত করে দেখব। বিষয়টি খতিয়ে দেখে যদি মনে হয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তাহলে নেব। প্রয়োজন হলে সেখানে যাবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই হুগলির জিরাটের একটি স্কুল সরানোর নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়। সেখানেও নদীর একেবারে পাড়েই রয়েছে স্কুলটি। ভয়ে পড়ুয়াদের স্কুলে পাঠাচ্ছিলেন না অভিভাবকেরা আদালতের নির্দেশে আপাতত নদীর কাছ থেকে স্কুল সরিয়ে অস্থায়ী ক্লাসরুমের বন্দোবস্ত করা হয়েছে।