AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

‘মান-বিতর্ক’! উপাচার্যের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগের পাল্টা শোকজ নোটিস অধ্যাপককে, চর্চায় বিশ্বভারতী

কার্যত, উপাচার্য-অধ্য়াপকের এই ব্যক্তিগত সংঘাত ভাল চোখে দেখছেন না অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরাও। এই ঘটনায়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান রাজ্যেশ্বর সিনহা বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একটি স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালানোর চেষ্টা করছেন। উপাচার্যের ধারাবাহিক ক্রিয়াকলাপ দেখলে বোঝা যায় তিনি কেবল একটি অ্যাজেন্ডা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন।"

'মান-বিতর্ক'! উপাচার্যের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগের পাল্টা শোকজ নোটিস অধ্যাপককে, চর্চায় বিশ্বভারতী
নিজস্ব চিত্র
| Updated on: Jun 13, 2021 | 1:47 PM
Share

বীরভূম: বিতর্ক নয় যেন ব্যক্তিগত ‘মান-বিতর্ক’-এ জড়িয়ে গিয়েছে বিশ্বভারতী। এ যেন খানিকটা নরম-গরম বাদানুবাদ কিংবা তরজা! বিশ্বভারতীর বর্তমান পরিস্থতি নিয়ে এমনই মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের। গুরুদেবের শিক্ষাঙ্গন সাম্প্রতিককালের মতো এর আগে আর কখনও এমন আভ্যন্তরীণ কলহের জেরে চর্চায় এসেছিল তা মনে করতে পারছেন না কেউ। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে অধ্যাপকদের অনলাইন বৈঠকের জোড়া অডিয়ো বিতর্ককে কেন্দ্র করেই জল গড়িয়েছে অনেক দূর। গত ৮জুনের বৈঠকে উপস্থিত পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক মানস মাইতি উপাচার্যের ‘অপমানজনক’ মন্তব্যের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ তুলে শনিবার শান্তিনিকেতন থানায় এফআইআর করেন। এরই পাল্টা রবিবার, বিশ্বভারতীর তরফে প্রফেসর মাইতিকে শোকজ নোটিস দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তিন দিনের মধ্যে দিতে হবে উত্তর এমনটাই স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয় সেই নোটিসে।

ঠিক কী বলা হয়েছে ওই শোকজ নোটিসে? লেখা হয়েছে, “গত ৮জুন বিকেল সাড়ে পাঁচটার অনলাইন বৈঠকে, অধ্যাপকদের মাসিক বেতন ও অধ্যাপনা সংক্রান্ত যে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছিল, সেই বিষয়ে কোনও প্রশ্ন না তুলে পাল্টা মানসবাবু বিশ্ববিদ্য়ালয় কর্তৃপক্ষ তথা উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ করেন। একজন অধ্যাপক হিসেবে তাঁর এই আচরণ কেবল অকাম্য নয়, অভব্যও। পাশাপাশি, মানসবাবুর অভিযোগ বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা। তাঁর এই আচরণের কারণ বিশ্ববিদ্য়ালয়কে জানাতে হবে। নোটিস পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে এর উত্তর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হল।” বিশ্বভারতীর অ্যাকটিং রেজিস্টার অশোক কুমার মাহাতোর সই করা সেই নোটিস পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন অধ্য়াপক মানস মাইতি। যদিও, এই অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন। মানসবাবু জানিয়েছেন, তিনি কোনও অন্যায় করেননি। বরং, উপাচার্য কী কী বলেছেন তার রেকর্ড রয়েছে।

ঠিক কী হয়েছিল ৮জুন বৈঠকে? ফাঁস হওয়া জোড়া অডিয়োতে স্পষ্টই শোনা গিয়েছে, উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বৈঠকে বলছেন, “অধ্যাপকেরা তো মোটা মাইনে নেন আর আমায় গালিগালাজ করেন। তাঁদের দেখে বোঝা যায়, তাঁরা কীরকম সংস্কারের মানুষ। সাধারণত, মা-বাবার থেকে মানুষ শিক্ষা পায়। ওঁদের আচরণে স্পষ্ট মা-বাবা ওই অধ্যাপকদের কেমন শিক্ষা দিয়েছেন।” শিক্ষকদের এমন অপমানজনক মন্তব্য করার প্রতিবাদে অধ্যাপক মানস মাইতিকে বৈঠক ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন উপাচার্য এমনটাই অভিযোগ। এরপরেই শনিবার, শান্তিনিকেতন থানায় উপাচার্যের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ তুলে এফআইআর দায়ের করেন মানসবাবু। তারপরেই মেলে এই শোকজ নোটিস।

কার্যত, উপাচার্য-অধ্যাপকের এই ব্যক্তিগত সংঘাত ভাল চোখে দেখছেন না অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরাও। এই ঘটনায়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান রাজ্যেশ্বর সিনহা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একটি স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালানোর চেষ্টা করছেন। উপাচার্যের ধারাবাহিক ক্রিয়াকলাপ দেখলে বোঝা যায় তিনি কেবল একটি অ্যাজেন্ডা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন। এইভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে যদি অচলায়তনের মতো হাত-পা বেঁধে দেওয়া হয়, তাহলে কেউ শান্তিতে শ্বাস নিতে পারবে না। শিক্ষাক্ষেত্র বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের মতো মানুষের তৈরি এই শিক্ষাঙ্গন সম্পর্কে উপাচার্য বোধহয় জানেন না। ওঁর এই ইতিহাসটা আগে পড়া উচিত।” কার্যত, এই প্রথম নয়, এর আগেও নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। বিভিন্ন সময়ে ছাত্র ও শিক্ষকদের সাসপেন্ড করা থেকে শুরু করে পৌষমেলা ও বসন্ত উৎসব বন্ধ করে দেওয়া, বিশ্ববিদ্য়ালয়ের রাস্তা নিয়ে বিরোধ, এমনকী বিশ্ববিদ্য়ালয় সংক্রান্ত বেফাঁস মন্তব্য এমন নানা ধরনের বিতর্কিত কাজের জেরে প্রশ্নের মুখে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন: ‘শুধু রাজীব-কুণাল কি বুদ্ধিমান, আমরা সব গরু-ছাগল!’, তোপ কল্যাণের