মুকুলকে হেলায় হারানো হরিপদ বললেন, ‘রবীন্দ্রনাথের প্রপৌত্র কোনওদিন ভোটে জেতেননি’

সোমনাথ মিত্র | Edited By: ঋদ্ধীশ দত্ত

Mar 22, 2021 | 10:11 PM

তৃণমূলের হয়ে প্রথম বার ভোটে দাঁড়িয়েই পরাজয়। তারপর আর সরাসরি লড়াইয়ের মঞ্চে দেখা যায়নি মুকুল রায়কে। কিন্তু দু'দশক পর বিজেপির টিকিট মেলায় আরও একবার ২০০১ -এ স্মৃতি উস্কে ওঠে রাজনৈতিক মহলে। তারই সঙ্গে নাম উঠে আসে হরিপদ বিশ্বাসের। যিনি হেলায় হারিয়েছিলেন মুকুলকে। সেই স্মৃতি তুলে ধরলেন TV9 বাংলা ডিজিটালের কাছে

মুকুলকে হেলায় হারানো হরিপদ বললেন, রবীন্দ্রনাথের প্রপৌত্র কোনওদিন ভোটে জেতেননি
গ্রাফিক্স- অভিক দেবনাথ

Follow Us

একুশের নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়ের প্রথম প্রতিক্রিয়া- ‘সে সময় বাংলার ভোটের পরিস্থিতি ছিল না।’ মুকুল রায় কোন সময়ের কথা বলছেন, তা হয়তো আলাদা করে বলার দরকার পড়ে না। কারণ, সেটাই ছিল তাঁর এ পর্যন্ত প্রথম ও শেষ ভোটে লড়া। ফের বিশ সাল বাদ ভোট প্রার্থী মুকুল রায়। তবে, পার্থক্য প্রতীকে। জগদ্দল কেন্দ্র থেকে সে দিন লড়েছিলেন ঘাসফুলের হয়ে। আজ লড়ছেন পদ্মফুলের প্রতীকে। কেন্দ্রও পৃথক। কিন্তু সে দিনের হারের খোঁচা আজও যে তাঁকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে, সাংবাদিক বৈঠকেই তার প্রমাণ মিলল। ২০০১ সালে বিধানসভা ভোটে তাঁর পরাজয় নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে মুকুলের সাফ কথা, গণতন্ত্র ছিল না সে দিন। সত্যি কি তাই! মুকুলের এই প্রশ্নের জবাব দিলেন স্বয়ং যিনি মুকুলকে হারিয়ে জিতেছিলেন সেই তিন বারের ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক হরিপদ বিশ্বাস। বাংলার রাজনীতিতে ‘চাণক্য’ আখ্যায়িত হওয়ার আগে খ্যাতিহীনতার প্রথম প্রহরে ভোটে লড়ে পরাজিত হয়েছিলেন মুকুল।

এখনও মাঠে-ময়দানে সক্রিয় রাজনীতি করে চলেছেন প্রবীণ হরিপদবাবু। কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় যে আন্দোলন চলছে, তাতেও শামিল হয়েছেন তিনি। পায়ে পা মিলিয়েছেন ব্রিগেড সমাবেশেও। তবে, দু’দশক আগে হেলায় হারানো মুকুলের এবার প্রার্থী হওয়ার খবরে তেমন তাপ-উত্তাপ নেই হরিপদ বিশ্বাসের। ৩ বারের বাম বিধায়ক বললেন, “সবার সব সময় সমান পরিস্থিতি থাকে না। সে দিন মুকুলকে হারিয়েছি, রাহুল সিনহাকেও হারিয়েছি। আবার আমি হেরেছি পরশ দত্তের কাছে।” কিন্তু মুকুল রায় তো সেই হারের পর আর কোনও দিন নির্বাচনেই দাঁড়ালেন না। ওয়ার রুমে বসেই নিজের দলকে জিতিয়েছেন। তাই দু’দশক পর প্রার্থী হওয়ায় মুকুলের পাশাপাশি হরিপদ বিশ্বাসের নামও উঠে আসছে। প্রশ্নে শুনে হরিপদবাবুর রুক্ষ্ম জবাব, “তাই নাকি! কই জানি না তো!”

১৯৯৮ সালে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে তৃণমূল গড়ার পর পর ২০০১-এ প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে লড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল। জগদ্দল কেন্দ্রে হরিপদবাবুর কাছে প্রায় ১৫ হাজার ভোটে হারেন মুকুল। তবে, ৪২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। সে দিনের ভোট প্রসঙ্গে দুঁদে রাজনীতিবিদ হরিপদবাবু বলেন, “দেখুন, মতাদর্শের লড়াই শুধু মাত্র ভোটের দিন পর্যন্ত। তারপর এমএলএ হয়ে যাওয়ার পর আমি তৃণমূলের বিধায়ক, সিপিএমেরও বিধায়ক।” কিন্তু সে দিনের পরাজয়কে তো মুকুল মেনে নিতে পারেননি। তিনি বলেছেন, “গণতন্ত্রের পরিবেশ ছিল না।” শ্লেষাত্মক হাসি দিয়ে হরিপদবাবুর কটাক্ষ, ‘সে দিনও মুকুল বলেছিলেন রিগিং হয়েছে। এখন বলছেন গণতন্ত্র ছিল না। আমার প্রশ্ন, আজ কি গণতন্ত্র আছে? উত্তর প্রদেশ, দিল্লি, ত্রিপুরায় গণতন্ত্র রয়েছে? উনি যে দিন সরকার (তৃণমূল) গড়েছিলেন, তখন গণতন্ত্র ছিল তো?’

হরিপদ বিশ্বাস আরও বলেন, “ওরা বলছে, ডবল ইঞ্জিন সরকার দরকার। এখানেও যে সরকার চলছে, আমি বলবো দুটো ইঞ্জিনই খারাপ। ধাপ্পাবাজি দিয়ে সরকার চালাচ্ছে ওরা। দুটোই বেচারামের সরকার। এর পরিবর্তন হওয়া জরুরি। মানুষ সিদ্ধান্ত নিক।” লোকসভা নির্বাচনে শোচনীয় ফল হয়েছে বামেদের। তাদের বেশিরভাগ ভোট গিয়েছে বিজেপির দিকেই। এ বার আইএসএফ-এর সঙ্গে জোটে করে কতটা প্রত্যাশী সংযুক্ত মোর্চা? প্রাক্তন বিধায়ক বলেন, “ভোট ফিরবে প্রত্যাশা তো রাখি। তবে, আগামী দিনে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা ধরে বলি ‘ম্যান মেড’ দুর্ভিক্ষ হতে চলেছে।” কেন এমন কথা বলছেন? তাঁর যুক্তি, কৃষি আইনে মজুত করার অবাধ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এক সময় বামফ্রন্টের স্লোগান ছিল, মজুতদারের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। সেই স্লোগান ফিকে হয়ে গিয়েছে। ফের দুর্ভিক্ষের পথে হাঁটতে চলেছে দেশ।

২০০১ সালের স্মৃতি টেনে হরিপদবাবু বলেন, “মুকুলের সঙ্গে এর আগে সাক্ষাৎ হয়নি। প্রচার করতে গিয়ে একদিন মুখোমুখি দেখা। দু’জনে হাত মিলিয়েছিলাম। ব্যস ওইটুকু।” মুকুলের বিরুদ্ধে কী এজেন্ডা নিয়ে প্রচার করেছিলেন? এই প্রশ্নে প্রাক্তন বিধায়ক বলেন, “দেখুন, দলের কিছু নীতি থাকে। সে সব নিয়েই প্রচার ছিল।” হঠাৎ এতদিন পর মুকুলের নির্বাচনে লড়া নিয়ে হরিপদবাবু জানান, প্রণব মুখোপাধ্যায় জিততেন না মুর্শিদাবাদ থেকে যদি না অধীরবাবু সাহায্য করতেন। সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুরও (রবীন্দ্রনাথের প্রপৌত্র) ছিলেন অসাধারণ বাগ্মী। কিন্তু কোনওদিন ভোটে জেতা সম্ভব হয়নি তাঁর। তবে, হরিপদবাবুর যুক্তি, ক্ষমতায় আসার আগে মন্ত্রিসভা বানানোর চিন্তাভাবনা করে ফেলেছে বিজেপি। তাই অন্যান্য সাংসদের সঙ্গে মুকুলকেও ভোটে নামানো হয়েছে। মুকুল এ বার জিতবে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “বলা কঠিন। ওই এলাকা সম্পর্কে আমার তেমন জানা নেই। আর একটু সময় গড়াক, তখন বলা যাবে।”

শেষ প্রশ্ন, বিজেপি বলছে, সোনার বাংলা গড়বে। কী বলবেন আপনি? একটু ভেবে হরিপদবাবুর সরস জবাব, “হুম, সোনার দামও কমেছে। দেখা যাক। করতে পারলে ভাল।”

Next Article