পশ্চিমবঙ্গ: পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম। যা ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করেছে তৃণমূলকে। ‘স্ট্রিট ফাইটার’ মমতাকে যে আন্দোলন সাহায্য করেছে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসাতে। কিন্তু সেই আন্দোলনের মূল হোতা কে? কেই বা কাণ্ডারী? একুশের বিধানসভা ভোটে (West Bengal Assembly Election 2021)-র আগে যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন খোদ মমতা। সেই সঙ্গে নারকীয় গণহত্যা কাণ্ডের জন্য শুভেন্দু ও শিশির অধিকারীর দিকেও আঙুল তুলেছেন একুশের ভোটে নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী। কিন্তু তাঁর অভিযোগ সত্যি হলে সেই দায় কি তাঁর উপরও বর্তায় না? প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে।
২০১১ সালে রাজ্যে পরিবর্তনের আগে যে সব ইস্যু ছিল তার মধ্যে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল নন্দীগ্রামের জমি রক্ষার আন্দোলন। সিঙ্গুর আন্দোলন এক সময় থিতিয়ে গেলে নন্দীগ্রাম ফের চাগিয়ে দেয় সেই আন্দোলনকে। এখন একুশের ভোটে ১৩ বছর আগের সেই আন্দোলনের তৃণমূল নেতৃত্বের মধ্যে মূল হোতা কে, তাই নিয়ে যুযুধান দুই পক্ষ। একদিকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অন্যদিকে তাঁর একসময়ের সেনাপতি যাঁকে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামের প্রার্থী করেছিলেন মমতা, সেই শুভেন্দু অধিকারী। শিশির-শুভেন্দু যখন নন্দীগ্রাম আন্দোলনে মমতার ভূমিকার চেয়ে নন্দীগ্রামবাসীকে সেই আন্দোলনের পুরধা হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন, তখন অধিকারী পরিবারের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন মমতা। সেই সঙ্গে ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ গণহত্যায় পুলিশ ঢোকানোর পিছনে শিশির-শুভেন্দুর দিকে আঙুল তুলেছেন তিনি। তাঁর কথায়,”আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি সেদিন বাপ-ব্যাটার পারমিশন ছাড়া নন্দীগ্রামে পুলিশ ঢুকতে পারত না।” এই এক লাইনের মন্তব্যই ঝড় তুলে দিয়েছে ভোটমুখী বঙ্গে।
২০০৭ সালের ২ জানুয়ারি তৃণমূল সমর্থিত কৃষি জমি রক্ষা কমিটির সদস্য ও সিপিএম ক্যাডারদের সংঘর্ষে নিহত হন ৬ জন। এলাকা দখলমুক্ত করতে ১৪ মার্চ বিশাল পুলিশ বাহিনী দুদিক থেকে নন্দীগ্রামের দিকে অগ্রসর হয় ও আন্দোলনকারীদের বাধার মুখে পরে। চলে নির্বিচারে গুলি। পুলিশের আড়ালে সিপিএমের হার্মাদ বাহিনীও আক্রমণ চালায় বলে অভিযোগ। প্রাণ দিয়ে সেই আক্রমণ প্রতিহত করেন নন্দীগ্রামের মানুষ। অনেক জীবনের বিনিময়ে ব্যর্থ হয় পুলিশি অভিযান। ১৪ জন জলজ্যান্ত মানুষের মৃতদেহ আর অসংখ্য মহিলার ধর্ষিতা শরীর সাক্ষী ছিল সেদিন। রাজ্যের রাজনৈতিক মসনদে পরিবর্তন ঘটেছে ২০১১ সালে। কিন্তু বীজ বপন হয়ে গিয়েছিল সেদিনই। এখন সেই আন্দোলনে শুভেন্দু ও শিশির অধিকারীর উপর চূড়ান্ত অভিযোগ করেছেন মমতা। অন্যদিকে কম জাননি শুভেন্দুও। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন কেন নন্দীগ্রাম নিয়ে লেখা তৃণমূল নেত্রীর বইতে এর বর্ণনা নেই? তাঁর বাবা যিনি খাতায়-কলমে এখনও তৃণমূল সাংসদ, চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন মমতার দিকে।
আরও পড়ুন: ব্যুমেরাং মমতা: নন্দীগ্রামের এক দশকের ইতিহাস কি মিথ্যে?
এই ভোটযুদ্ধের আবহে স্বাভাবিকভাবে যে প্রশ্ন উঠেছে, শুভেন্দু-শিশিরই যদি মমতার দাবি মতো বাম সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে সেদিন নন্দীগ্রামে পুলিশ ঢুকিয়েছিলেন, তৃণমূল নেত্রী হিসেবে সেই দায় কি তাঁর উপর বর্তায় না? কাঁথির দুঁদে সাংবাদিক শিশির অধিকারীও প্রায় একই প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কটাক্ষ, সেই সময়কার একাধিক পুলিশ আধিকারিক কেন অবসরের পর আজ তৃণমূলে রয়েছেন?